তুষার চিতা

তুষার চিতা

চিত্র-বিচিত্র মাইনুল ইসলাম মার্চ ২০২৪

তুষারাবৃত পাহাড়ের চূড়ায় বসে আছে তুষারের মতো শুভ্র চিতা। এমন অবাক করা দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তুষার চিতা নাম শুনলেই মনে হয় চিতাবাঘ। দেখতে চিতাবাঘের মতো না হলেও সারা শরীরে সাদা পশমের মতো লোম রয়েছে। তুষার চিতা অনেকের কাছে দ্য ঘোস্ট অফ মাউন্টেন বলেও পরিচিত।

এদের দেখা যায় মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ি এলাকায়। সবচেয়ে বেশি আছে চীনে। এছাড়াও বরফ সমৃদ্ধ আফগানিস্তান, ভূটান, চীন, ভারত, কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান- এই দেশগুলোতেও দেখা যায়।

সচরাচর এই প্রাণীগুলো পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পরিযায়ী পশু। অর্থাৎ বরফের সন্ধানে তারা বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে চলে যেতে পছন্দ করে। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০-৪৫০০ মিটার উচ্চতায় বাস এদের।

তুষার চিতা বেড়াল গোত্রের বড়ো প্রাণীদের চেয়ে একটু ছোটো। ওজন ৩০-৫০ কেজি। লেজ ছাড়া ৪৫ইঞ্চির মতো লম্বা হয়। বাঘ বা চিতাবাঘদের মতো এরা জোরে গর্জন করতে পারে না।

এদের শরীর পুরু লোমে ঢাকা। সেজন্য এদের শীত কম অনুভূত হয়। তুষার চিতার পায়ের পাতা বিশাল এবং লোমশ। এই পা বরফের ওপর সহজে চলাফেরা করতে সাহায্য করে। বরফে পরার জুতা বা স্নো শু যেমন কাজ করে, অনেকটা তেমন। লেজও অনেক লম্বা, লোমে ঢাকা। খাড়া পাহাড়ি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় লেজ ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। আবার এই লোমশ লেজ প্রচণ্ড শীতে মাফলারের কাজ করে। অর্থাৎ এটা দিয়ে ওরা নাক-মুখ ঢেকে রাখতে পারে।

এরা বেশ নিরীহ প্রাণী। মানুষের নাগালের বাইরে থাকতে পছন্দ করে। তুষার চিতা লাজুক প্রকৃতির হয়। খাদ্যের জন্য চিতাদের শিকার করতে হয়। শিকারের জন্য এরা ওত পেতে থাকে। শিকার দেখলেই দ্রুত আক্রমণ করে। প্রিয় খাবারের মধ্যে আছে হরিণ, বুনো ছাগল, বুনো ভেড়া, খরগোশ, বন মোরগ, বুনো শূকর প্রভৃতি। 

তুষার চিতার বাচ্চা দেখতে খুব সুন্দর হয়। তবে জন্মের পর প্রথম কয়েক দিন এরা চোখে দেখতে পায় না। সাধারণত দুই বছর পর্যন্ত মা তুষার চিতার সঙ্গে থাকে বাচ্চারা।

হিমালয় পর্বতমালার প্রায় ১৮ হাজার ফুট উঁচু এক চূড়া থেকে তুষার চিতার এক বিরল দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন মার্কিন ফটোগ্রাফার কিটিয়া পাওলোস্কি। 

কিটিয়া পাওলোস্কির তোলা ছবিতে দেখা যায়, নেপালের হিমালয় পর্বতের খুম্মু হিমবাহের ‘ফ্যান্টম অ্যালি’ বা ‘ভূতের গলি’ হিমবাহের চূড়ায় বসে রয়েছে একটি ‘তুষার চিতা’।

এত সুন্দর, নিরীহ প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও এদের শিকার করা হয়। চীনারা ঔষুধ তৈরির জন্য তুষার চিতা শিকার করে বেশি। তাই দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পৃথিবীতে বর্তমানে মাত্র ছয় হাজার তুষার চিতা রয়েছে। এজন্য তুষার চিতাকে এখন বিপন্ন প্রাণী বলে উল্লেখ করা হয়।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ