তারার নানা রং

তারার নানা রং

বিজ্ঞান নভেম্বর ২০১৩

সাকিব রায়হান

মিটমিটে তারার মাঝে চিকন স্বচ্ছ কাঁচির মতো চাঁদ শোভা হাজার গুণ বাড়িয়ে দেয় আকাশের। আর রাতের আকাশে নির্জনতায় তারা দেখার মজাই আলাদা। কিন্তু বন্ধুরা কি জানো এই তারার রয়েছে নানা রং, নানা আকৃতি? এমনকি আছে জন্ম-মৃত্যু? চলো জেনে নেয়া যাক তারা নিয়ে কিছু অজানা তথ্য। অন্ধকার আকাশে তাকালেই দেখা যায় অসংখ্য সুন্দর মিটি মিটি জ্বলতে থাকা তারা। পাহাড়, মরুভূমি বা সমুদ্র তীরে এই সংখ্যা দেখা যাবে আরও বেশি। এসব স্থান থেকে তুমি ছায়াপথও দেখতে পারো যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে। কিন্তু শহর থেকে এভাবে তারা দেখতে পাওয়া কঠিন। কারণ শহরের কৃত্রিম আলো আকাশে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করে, যা অনেক তারাকে আড়াল করে রাখে। খালি চোখে তারাদের সব হলুদাভ লাল রঙের মনে হলেও কিন্তু তারার রয়েছে বেশ কয়েকটি রং। কি অবাক হচ্ছো? আকাশে রয়েছে ছোট-বড় নানা আকৃতির তারা। কোনোটি আবার আমাদের সূর্যের চেয়ে একশো বা দুশো গুণ বড়। কিছু বয়সী তারা আকাশে রয়েছে যেগুলো আবার পৃথিবীর চেয়ে ছোট। তারারও রয়েছে জ্বালানি গ্যাস। এই গ্যাস যখন ফুরিয়ে আসে তখন মারা যায় তারা। এভাবে গ্যাস ফুরিয়ে শেষে তারা পায় বিভিন্ন রং। কখনো সৃষ্টি করে নীহারিকা, কখনো ছায়াপথ। এখন আমরা জানবো তারার নানা রঙের গল্প। হলুদ তারা সূর্যের মতো হলুদ তারা মাঝারি আকৃতির হয়। এর তাপমাত্রাও মাঝারি ধরনের। হলুদ তারার আয়ু বেশি দিন নয়। বড়জোর এক হাজার কোটি বছর বা তার কিছু বেশিদিন এরা টিকে থাকতে পারে। কারণ উচ্চ তাপমাত্রা এদের জ্বালানি দ্রুত নিঃশেষ করে। আয়ু যখন শেষ হয়ে আসে, এরা তখন আরও বেশি বড় হতে থাকে। এসময় পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি জায়গা এদের প্রয়োজন হয়। অবশেষে তারা আবার সঙ্কুচিত হতে থাকে। তাদের অধিকাংশ গ্যাস নিঃশেষ করে। এই গ্যাস তারার কাছাকাছি সুন্দর একপ্রকার মেঘের সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় নীহারিকা। সূর্য যখন দৈত্যের মতো প্রসারিত হয়, পেছনে নীহারিকা রেখেই আবার সঙ্কুচিত হতে থাকে। সূর্যের বয়স মাত্র ৫০০ কোটি বছর। এটা ধ্বংস হতে আর ৫০০ কোটি বছর লাগবে। যখন এটি নীহারিকায় পরিণত হবে। দৈত্যাকৃতির নীল তারা নীল তারা বেশ বড় এবং প্রচুর উপাদান সমৃদ্ধ হয়। ফলে এদেরও জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এর ফলে এদের তাপমাত্রা বেশি বেড়ে যায়। ১০ হাজার থেকে ১ লাখ বছরের মধ্যে এদের জ্বালানি একবারে ফুরিয়ে যায়। নীল দৈত্যাকৃতির তারা অনেক বেশি উজ্জ্বল। ঠিক একটি বাতিঘরের মতো। এদের আলো বিচ্ছুরণ ঘটায় বেশ বড় এলাকাজুড়ে। তবে নীল এই তারা সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। এরাও হলুদ তারার মতো বড় এবং তাড়াতাড়ি জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ বছরের বেশি টিকে থাকতে পারে না। নীল দৈত্যের মৃত্যুটা বেশ আকর্ষণীয়! কারণ এরা ধ্বংস হয়ে প্রথমে নীহারিকা এবং পরে উজ্জ্বল ছায়াপথের সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় সুপারনোভা। আর এটা অনেক দূর থেকেও দেখা যায়। লাল বামন তারা লাল বামন তারা সূর্যের চেয়ে ছোট। আকারে ছোট হওয়ার কারণে এরা তাদের জ্বালানি খুবই ধীরগতিতে খরচ করে। ফলে এরা বেঁচে থাকে অনেকদিন। অন্য চকচকে উজ্জ্বল তারাদের মতো এরা অত বেশি আলো ছড়াতে পারে না। কিছু লাল বামন তারা কয়েক শ’ কোটি বছর আগে থেকেই টিকে আছে। কেন লাল বামন তারা : লাল বামন তারা শুধুমাত্র একটি সময়ে সামান্য পরিমাণ জ্বালানি খরচ করে। এরা অন্য তারার তুলনায় খুব বেশি উত্তপ্ত নয়। আগুনের কথা ভাবো। আগুনের শিখার একেবারে ওপরে যেখানে লাল শিখা দেখা যায়, সেটা তুলনামূলক কম উত্তপ্ত থাকে। মাঝের অংশ আবার এর চেয়ে একটু বেশি গরম। এ অংশের রং আবার হলুদ। এবং একেবারে আগুনের গোড়ার অংশ, অর্থাৎ জ্বালানির কাছে নীল রঙের হয়। তারার ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে। সুতরাং এ কথা বলা যায়, তারার রং কেমন হবে তা নির্ভর করে সম্পূর্ণ এর তাপমাত্রার ওপর। সাদা বামন তারা সাদা বামন তারাও আকারে ছোট হয়। এদের উজ্জ্বলতাও কম। জমিয়ে রাখা তাপ থেকে এরা শক্তি উৎপন্ন করে। সাধারণত একটি তারার মৃত্যুর ঠিক আগের অবস্থাকে শ্বেত বামন বা সাদা বামন তারা হয়। এভাবেই তারাগুলো দিনে দিনে বদলায় তাদের রং।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ