ড্রোন মানববিহীন বিমান

ড্রোন মানববিহীন বিমান

বিজ্ঞান ফেব্রুয়ারি ২০১৪

সাকিব রায়হান

Dronমানববিহীন ড্রোন বিমান নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। এই রোবট বিমান ব্যবহার করে সমাধান করা যেতে পারে নানা জটিল সমস্যার। এমন সব জায়গায় ব্যবহার করা যায় যেখানে মানুষ যেতে পারে না সহজে। আবার হামলা ও যুদ্ধে এই বিমানের ব্যবহার আশঙ্কিত করছে শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের। এই উন্নত প্রযুক্তিটিকে ভালো ও খারাপ দুই কাজেই ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে যাই হোক ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা যে এগিয়ে চলেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। মানববিহীন বিমান (ড্রোন) দিয়ে বিশ্ব কাঁপাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন যেমন- রাডার ফাঁকি দিয়ে একটি দেশের ভেতর অনায়াসে ঢুকে পড়তে পারে, তেমনি দূরনিয়ন্ত্রিত এসব বিমান লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারে নির্ভুলভাবে। পাকিস্তান, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া- এসব দেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রায়ই ড্রোন ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিনা অনুমতিতে আরেকটি দেশে প্রবেশ করে সে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণœ করার অভিযোগে অবশ্য তারা সমালোচিতও কম হচ্ছে না। আকাশপথে বিভিন্ন অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের এই ড্রোন হামলা অনেক দিন ধরেই চীনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে আছে। কারণ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক শক্তির মাধ্যমে প্রাধান্য বিস্তারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের নীরব টক্কর চলে আসছে। শক্তির ভারসাম্যে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ হতে না পারলেও এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চীনের চেষ্টা চলছে অবিরাম। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেক আগেই ড্রোন বানানোর যুদ্ধে নেমেছে বেইজিং। কয়েক বছর ধরে ড্রোন বানানোর কাজ করে আসছে চীন। দেশটি প্রথমবারের মতো সফলভাবে রাডার ফাঁকি দেওয়া মানববিহীন বিমান (ড্রোন) ওড়াতে সক্ষম হয়েছে। চীনের এই পদক্ষেপ ড্রোন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি বেইজিংয়ের দারুণ আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ। চীনা গণমাধ্যমে ড্রোনটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘শার্প সোর্ড’ (ধারালো তরবারি)। চীনের আকাশসীমায় প্রায় ২০ মিনিট ধরে ড্রোনটি ওড়ে। গতকাল চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘এই উড্ডয়নসাফল্য প্রমাণ করছে যে আকাশপথে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চীনের শক্তির তারতম্য আরও কমে এসেছে।’ ‘শার্প সোর্ড’ ড্রোনটির প্রকৃতি ও সক্ষমতা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে এর কাঠামোটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনের মতো। যুক্তরাষ্ট্রের আদলে নানা ধরনের ড্রোন বানাচ্ছে চীন। তবে চীনা ড্রোন বেশ সস্তা। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও ভূমিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে ড্রোন ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। ঠিক একই লক্ষে ড্রোন বানাচ্ছে চীন। পতঙ্গ আকৃতির ড্রোন তৈরিতে আমেরিকা ব্যয় করছে বিপুল অর্থ। অতি ক্ষুদ্র ড্রোন তৈরির গবেষণায় তারা অনেকখানি এগিয়েও গেছে। এসব ড্রোন আকারে মশা-মাছির চেয়ে বড় না হলেও এতে বসানো থাকবে ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন। এ ছাড়া, প্রয়োজনে এসব মশা-মাছি আকৃতির ড্রোন দিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে শত্রুকে বিষ পর্যন্ত প্রয়োগ করা যাবে। জানা গেছে, এ ধরনের ড্রোন তৈরির গবেষণা করছে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল। এ দলকে সহযোগিতা করছে ভার্জিনিয়ার আলিংটনে অবস্থিত রাইট-প্যাটারসন বিমান ঘাঁটির ‘ইউএস অফিস অব দ্য সায়েন্টেফিক রিসার্চ’। এ গবেষকরা ‘মাইক্রো অ্যারিয়েল ভেহিকেল’ বা এমএভি নামের কীট-পতঙ্গ আকারের ড্রোন তৈরির কাজ করছে। এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করে অনায়াসে নানা গোয়েন্দা অভিযান চালানো যাবে। এসব কৃত্রিম পতঙ্গের দল বা ড্রোন অনায়াসে যেকোনো শহর বা নগরে ঢুকে পড়তে পারবে। শহর বা নগরে দালান-কোঠা ও মানুষের ভিড় রয়েছে। সেইসঙ্গে বাতাসের গতিও কখন কি রকম হবে তা আগে ভাগে সব সময় অনুমান করা যায় না। ফলে প্রচলিত ড্রোন দিয়ে এসব এলাকায় গোয়েন্দা তত্পরতা চালিয়ে সব সময় কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু চলতি গবেষণার ক্ষেত্রে এ রকম কীট-পতঙ্গ আকারের ড্রোন দিয়ে অনেক কাজ করা যাবে। বলা যায়, বিজ্ঞান-কল্পতে যেসব কথা বলা হয় তার অনেকাংশ সফল হবে এসব ড্রোনের মাধ্যমে। এসব ড্রোন দূর নিয়ন্ত্রিত হবে। মশা বা মাছির মতো অনায়াসে এসব ড্রোন সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেহে এসে বসতে পারবে। তারপর অতিসূক্ষ্ম সুঁই ফুটিয়ে ব্যক্তিটির দেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত বেগে উড়ে সরে পড়বে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি এক্ষেত্রে মশার কামড়ের চেয়ে বেশি ব্যথা পাবে না। তবে মশায় কামড়ালে যে রকম জ্বালা হয় তা অবশ্য হবে না। কিন্তু জায়গাটা ফুলে উঠবে। এসব ড্রোন কেবল ডিএনএ নমুনাই সংগ্রহ করবে না সেইসঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেহে অতিক্ষুদ্র আকারের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন বা আরএফআইডি বসিয়ে দিয়ে আসবে। ফলে দূর থেকে সন্দেহভাজন ব্যক্তির চলাফেরার ওপর নজর রাখা যাবে। কিংবা এ ড্রোন দিয়ে বিষও প্রয়োগ করা যাবে শত্রুপক্ষের লোকজনকে। অবশ্য শুধু আমেরিকাই নয়, সেইসঙ্গে ইসরাইল, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ড একই ধরনের ড্রোন তৈরি করছে। এ কাজে অনেক এগিয়ে গেছে ইসরাইল। প্রজাপতি আকারের ড্রোন তৈরি করেছে এ দেশটি। এক বিশেষ ধরনের হেলমেট পরে এ ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এ হেলমেট মাথায় দিলে প্রজাপতি-ড্রোন যা দেখবে তার সবই দেখতে পাবেন হেলমেটধারী ব্যক্তি।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ