ঝুলন্ত হোটেল
ভ্রমণ ফয়েজ আহমেদ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
অবসরে মানুষ ছুটে যায় সমুদ্র বা পাহাড়ের কাছে। তাই পাহাড় ও সমুদ্রের কোল ঘেঁষে তৈরি হয়েছে অভিনব সব স্থাপনা। গভীর খাদের গা বরাবর তৈরি হয়েছে এমনই একটি স্থাপনা যা ঝুলন্ত হোটেল নামে পরিচিত। এটি খাদের ধারে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ মিটার বা প্রায় ১,৩০০ ফিট ওপরে অবস্থিত।
পাহাড়ের খাদের ধারে অবস্থিত এই হোটেলের নাম ন্যাটুরা ভিভ স্কাই লজ। কাঁচের তৈরি এই হোটেলটি দেখতে ক্যাপসুল আকৃতির। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর কুসকো অঞ্চলের উপত্যকায় অবস্থিত এটি। দেশটির পুরওয়াকার্তায় ভূমি থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার ওপরে পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত হোটেলটি।
ক্যাপসুলগুলো পুরোটাই স্বচ্ছ কাচের দেওয়ালে ঘেরা। খাদের ওপর থেকে দিন বা রাতের অপরূপ প্রকৃতি সবসময় থাকছে চোখের সামনে। বাড়ির কার্নিশের মতোই এই ক্যাপসুলের বাইরে পাহাড়ের ওপর রয়েছে বসার জায়গা।
পর্যটকদের এখানে যেতে হয় জিপ লাইনের সাহায্যে। এই হোটেলে যেতে হলে আরোহন করতে হবে খাড়া পাহাড়। কোমরে দড়ি বেঁধে, পাহাড়ের গা বেয়ে চড়তে হবে ৪০০ মিটার। তবে এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য রয়েছে হাইকিং করে যাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা।
হোটেলের স্যুটগুলো দেখতে অনেকটা ক্যাপসুলের মতো। চব্বিশ ফুট দৈর্ঘ্য এবং আট ফুট প্রস্থের এক একটি এক্সক্লুসিভ ক্যাপসুল স্যুটে রয়েছে আটজনের বেডরুম, একটি ডাইনিং রুম এবং একটি ব্যক্তিগত বাথরুম। গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে ভারী পর্দা।
নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে হোটেলটি তৈরিতে নেওয়া হয়েছে বিজ্ঞানের সাহায্য। ক্যাপসুলগুলোকে পাহাড়ের গায়ে উলম্বভাবে ঝুলিয়ে রাখার পাশাপাশি অ্যারোস্পেস অ্যালুমিনিয়াম এবং বৈরি আবহাওয়া প্রতিরোধী পলি কার্বোনেট ব্যবহার করা হয়েছে।
স্যুটের ভেতরে আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছয়টি জানালার পাশাপাশি বায়ু চলাচলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যাপসুল স্যুটকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিশেষভাবে পাহাড়ের ওপর ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
ক্যাপসুলে প্রবেশদ্বারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ওপরের দিকে। ভেতরে আলোকিত রাখতে সোলার প্যানেলের সাহায্যে চলতে পারে এরকম বেশ কয়েকটি বাতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পর্যটকরা এখান থেকে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। রাতের বেলায় বেডরুম থেকেই স্বচ্ছ কাচের দেওয়ালের মধ্য দিয়ে উপত্যকার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
বিকেল বেলায় চা পানীয় পানের জন্য পাহাড়ের খাঁজে বসার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেখানে বসে চায়ের পাশাপাশি চারপাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করা যাবে।
এই হোটেলের কক্ষগুলোতে এক রাত থাকতে জনপ্রতি চৌদ্দশো পঁচাশি থেকে পনেরোশো পচাত্তর পেরুভিয়ান সোল লাগে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় চল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশ হাজার টাকার মতো।
পেরুর মতো বিশ্বের অনেক দেশেই এমন ঝুলন্ত হোটেল রয়েছে। বিশ্বের সবচাইতে বড়ো ঝুলন্ত হোটেল রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য উপভোগের জন্য প্রতিদিনই পর্যটকরা ভিড় করেন এই হোটেলে।
আরও পড়ুন...