জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানার্জন   -আবদুল মঈন খান

জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানার্জন -আবদুল মঈন খান

ফিচার আগস্ট ২০১৫

‘পড়’! হ্যাঁ, এই নির্দেশটিই সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় রাসূল সা:কে করেছেন। সমগ্র দুনিয়ায় যখন চলছে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা। হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অবিচার, খুন, রাহাজানি যাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সেই দুর্যোগপূর্ণ সমাজে আগমন ঘটে মানবতার মুক্তির দূত, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সা:-এর। শান্তির বার্তাবাহক এসে যখন দেখলেন সমাজের এই করুণ অবস্থা, তখন তিনি চিন্তা করতে লাগলেন কিভাবে পরিবর্তন করা যায় এ সমাজকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ধ্যান করেন পবিত্র ‘গারে হেরায়’। দীর্ঘ ১৫ বছর অপেক্ষার পর ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নিকট অবতীর্ণ হয় মহাসত্য, প্রভুর কালাম মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন। হজরত জিবরাইল আ: এসে যখন বললেন পড়, তখন রাসূল সা: জবাব দিলেন আমি তো পড়তে জানি না। অতঃপর জিবরাইল আ: তাকে প্রচন্ডভাবে চেপে ধরলেন স্বীয় বুকের সাথে, এমন চাপ দিলেন যে, তাঁর জীবনশক্তি শেষ হওয়ার উপক্রম হলো।
জিবরাইল আ: ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, পড়। রাসূল সা: এবারও আগের মতো জবাব দিলেন। জিবরাইল আ: আগের মতো আবার তাকে জড়িয়ে ধরলেন। এভাবে তিনবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির পর তৃতীয়বার যখন জিবরাইল আ: রাসূল সা: কে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে, পড়। বস্তুত তোমার প্রতিপালক বড়ই সম্মানিত, যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দ্বারা। যিনি মানুষকে শিখিয়েছেন তার অজানাকে।’ তারপর রাসূল সা: পড়তে লাগলেন।
প্রকৃতপক্ষে এই আল কুরআন নাজিল হয়েছে- মানবতার সকল সমস্যা সমাধান করার জন্য, উল্লিখিত সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার জন্য, মানুষের হেদায়েতের জন্য। জাহেলি সমাজব্যবস্থা পরিবর্তন এবং ইসলামী সমাজ বা রাষ্ট্র কায়েমে রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রধান হাতিয়ার ছিল এই আল কুরআন। কুআনের শিক্ষা দিয়েই তিনি একটি সমাজ কিংবা একটি রাষ্ট্রকে নয়; বরং সমগ্র মানবজাতিকে নিয়ে আসেন অন্ধকার থেকে আলোতে স্বয়ং কুরআনেই কথাটি প্রকাশ করছে এভাবে, ‘আলিফ লাম রা।’ এ কিতাব, এটা তোমার প্রতি নাজিল করেছি যা দিয়ে বের করতে পার মানুষকে আল্লাহর অনুমতিতে অন্ধকার থেকে আলোতে তাঁর পথে, তিনি পরাক্রান্ত, প্রশংসনীয়।’ তাই আমাদের উচিত কুরআনের শিক্ষা অর্জন করা। কুরআনের সমাজ গঠনে সচেষ্ট থাকা।
আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে, মহাগ্রন্থ আল কুরাআনের ছয় হাজার ছয় শ’ ছেষট্টিটি আয়াতের মধ্যে মহান রব কেন সর্বপ্রথম এ আয়াতগুলো নাজিল করলেন? কেন প্রথমে বললেন, পড়। তোমার সৃষ্টিকর্তার নামে হ্যাঁ, যদি আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করি তাহলে এর একটা উত্তর নিশ্চয় পাবো।
আর এর উত্তর পাওয়ার আগে আমাদের শিক্ষা সম্পর্কে কিছু জানা দরকার। শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে বলা হয়ে থাকে ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।’ আর এর সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘অজানাকে জানার নাম শিক্ষা।’
শিক্ষাই একটি জাতির সব। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষাই মানুষকে প্রকৃত অর্থে মানুষ করে তোলে। জ্ঞানহীন ব্যক্তি পশুর সমান। শিক্ষার বিকল্প আর কিছু নেই। তবে সে শিক্ষা হতে হবে অবশ্যই সুশিক্ষা, কুশিক্ষা নয়।
আমাদের সমাজে শিক্ষিত লোকদের অনেকে কুকর্মে লিপ্ত থাকে, অনেক অপরাধে জড়িত থাকতে দেখা যায়। যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারব কেন সমাজে এতো বিশৃঙ্খলা? জাহেলি যুগের মতো আমরা আমাদের সমাজে আজ দেখতে পাচ্ছি হত্যা, ধর্ষণসহ আরও নানা অপরাধ। সমাজে যারা এসব অন্যায় কাজে লিপ্ত, তারা যদি তাদের রবের নামের শিক্ষা ইসলামী শিক্ষা পেত, তাহলে তাদের দ্বারা সেসব করা সম্ভব হতো না।
শিক্ষা একটি জাতির অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত। মূর্খ জাতি কিছুই করতে পারে না। শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাইতো মহান রব সর্বপ্রথম নির্দেশ দিলেন পড়ার এবং সে পড়া অবশ্যই হতে হবে সৃষ্টিকর্তার নামে। সৃষ্টিকর্তার নামে পড়া মানে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়াদি পড়া নয়। কারণ সৃষ্টিকর্তার নামে পড়ার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা মানুষের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচন করেছেন। অর্থাৎ বিজ্ঞানের বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। মানুষকে জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং সৃষ্টিকর্তার নামে পড়ার সাথে মানুষের সৃষ্টি নিয়েও গবেষণা করা। তাই সৃষ্টিকর্তার নামে পড়া মানে বিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি সব বিষয়। কারণ পবিত্র কুরআনে সকল বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যা কুরআন প্রকাশ করছে এভাবে- ‘আমি এতে কোন বিষয় উল্লেখ করতে বাদ রাখিনি।’। এতে বিজ্ঞান, দর্শন, পদার্থ, ভূবিজ্ঞান রাজনীতি, সমাজনীতি অর্থনীতিসহ মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দেড় হাজার বছর আগে কুরআন যা বলেছে বিজ্ঞান তা বলছে এখন। কুরআনে এক হাজারেরও বেশি আয়াত রয়েছে বিজ্ঞানের। সুতরাং, জাগতিক জ্ঞানও অর্জন করতে হবে আমাদেরকে।
এতএব, সৃষ্টিকর্তার নামে পড়ার মানে হলো তাঁকে জানা, তাঁকে বুঝা। ওহির জ্ঞান কুরআন হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা। সর্বপ্রথম ব্যক্তিকে, আল্লাহ, রাসূল, কিতাব, শিরক, তাওহিদ আখিরাত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। এরপর অন্যান্য বিষয়। কারণ ব্যক্তির ভেতর যদি ওহির জ্ঞান কুরআন সুন্নাহর জ্ঞান, নৈতিকতা, তাকওয়ার সমন্বয় ঘটে; তাহলে সে কখনও অন্যায় কাজে নিজেকে জড়াতে পারে না। কারণ যে লোকটা সবসময় আল্লাহকে ভয় করে চলে, সে কি করে অন্যায় কাজে নিজেকে শামিল করতে পারে? আর এ শিক্ষাই হলো জাতির মেরুদন্ড। রবের নামের শিক্ষা না থাকার কারণে জাতি আজ মেরুদন্ডহীন। যার ফলে সমাজে এত বিশৃঙ্খলা।
কুরআন সুন্নাহের জ্ঞান হচ্ছে ওহির জ্ঞান, যা সম্পূর্ণ নির্ভুল, নিখুঁত, অন্য দিকে মানবরচিত শিক্ষা নিখুঁত, নির্ভুল নয়; বরং তা ত্রুটিযুক্ত। সবশেষে বলব আমাদেরকে কুরআন হাদিস বুঝতে হবে। সঠিক শিক্ষা, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে জাতির মেরুদন্ড দাঁড় করাতে হবে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ