কুষ্টিয়ার মজার খাবার

কুষ্টিয়ার মজার খাবার

ফিচার রফিক রইচ মার্চ ২০২৪

রকমারি খাদ্য খাবারে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা। তারপরেও বিশেষ বিশেষ খাবার বিভিন্ন জেলাকে এনে দিয়েছে নিজস্বতা ও স্বকিয়তা। করে তুলেছে বিখ্যাত। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলাও এর বাইরে  নয়।

বৃহত্তর এই জেলাটিতে রয়েছে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় দুটি খাবার। এ খাবার দুটি কুষ্টিয়া জেলাকে করেছে সমৃদ্ধ। এনে দিয়েছে সুপরিচিতি ও সুখ্যাতি।

নামকরা সেই খাবার দুটি হলো- কুলফি মালাই ও তিলের খাজা।


কুলফি মালাই

সব বাঙালির কাছেই প্রিয় কুলফি মালাই। ষোড়শ শতাব্দীতে মোঘল সা¤্রাজ্যের হাত ধরেই কুলফি মালাইয়ের আগমন ঘটে। তবে এদেশের অর্ন্তগত কুষ্টিয়ার কুলফি মালাইয়ের স্বাদ সব জায়গা থেকে ভিন্ন। যে স্বাদ পূরণ করেছে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের জিহ্বাকে। বর্তমানে বৃহত্তর কুষ্টিয়া এলাকার বিখ্যাত ও জনপ্রিয় এ কুলফি মালাই তৈরি করেন আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তাঁর পূর্ব পুরুষের বাড়ি পাবনা জেলায়। আশরাফুল ইসলাম তার বাবার কাছ থেকে এ বিখ্যাত কুলফি মালাই তৈরি করা শিখেছেন। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ার পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থান করে ঢাকার অলিতেগলিতে ঘুরেফিরে এ কুলফি মালাই বিক্রি করেন। বর্তমানে এ পেশার সাথে জড়িত হয়েছেন অনেকে। এটি এখন ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প হিসেবে রূপ লাভ করেছে। এ কুলফি মালাই তৈরি করতে দুধ, কিচমিচ, ডিম, কলা, এলাচ, দারচিনি, বিভিন্ন মসলা, বাদাম ও বরফের প্রয়োজন হয়। বিশেষভাবে তৈরি এ মালাইয়ের স্বাদের কারণে সারা দেশের মধ্যে বিখ্যাত। কুষ্টিয়ায় যারা ভ্রমণ করতে আসেন তাদের কাছে খুব প্রিয় এ মালাইটি। কুষ্টিয়া শহরের মীর মশাররফ হোসেনের বাড়ি, ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস, লালন শাহের মাজার ও রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী ইত্যাদি স্থানে এ মালাই খুব সহজেই পাওয়া যায়। তাছাড়া নানা বর্ণের বড়ো বড়ো ছাতার নিচে বসে লাল কাপড়ে আবৃত বিরাট পাতিলে করে এ মালাই বিক্রি করতে দেখা যায় গড়াই ব্রীজের পূর্ব পাশে, কুমারখালী থেকে পান্টি নতুন সংযোগ সেতু ও হরিপুর ব্রীজের ওপরে। 


তিলের খাজা

কুলফি মালাইয়ের মতো কুষ্টিয়ার তিলের খাজাও বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। তিলের খাজার ইতিহাসও বেশ পুরোনো। তবে তিলের এ খাজার উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইতিহাস অনুযায়ী ভারত অবিভক্ত থাকাকালীন এই খাজার উৎপত্তি ঘটে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়া অঞ্চলের পাল সম্প্রদায় এ মজার খাদ্যটি তৈরি করতো। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার স্থানীয় কিছু লোক বিশ^াস করেন তিলের খাজা প্রথম ১৯০০ সালের কাছাকাছি সময়ে অবিভক্ত ভারতে উৎপাদিত হয়েছিল। কুষ্টিয়ার অনেক স্থানীয়রা তিলের খাজার উদ্ভাবক হিসেবে তেলি সম্প্রদায়ের কথা বলেন। তবে এর মূল উৎস চীন বলে মনে করেন অনেকে। কারণ তিলের খাজা জাওটাং (চীনাখাদ্য)-এর মতোই এবং তৈরি প্রক্রিয়াও প্রায় একই রকম। তিলের খাজা প্রধানত চিনি, তিল, দুধ, এলাচ ও পানি দিয়ে তৈরি করা হয়। তিল দিয়ে তৈরি করা হয় বলেই নামকরণ করা হয়েছে তিলের খাজা।

এই খাজা অতিমাত্রায় সুস্বাদু ও মিষ্টি। তিন ধরনের তিলের খাজা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- ১. গুড়ের তিলের খাজা, ২. চিনির তিলের খাজা, ৩. দুধ তিলের খাজা। তবে বর্তমানে এই তিলের খাজার আকার আকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি চ্যাপ্টা, কোনো কোনোটি লম্বা লাঠির মতো আবার কোনোটি ভেজিটেবল বা চিকেন রোলের মতো। এই তিলের খাজা এখন কুষ্টিয়াসহ সারাদেশেই পাওয়া যায়। বাসে, ট্রেনে ফেরি করে অনেকেই বিক্রি করেন এই খাজাটি।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ