কুরআনের আলো

কুরআনের আলো

কুরআনের আলো মে ২০১৭

শান্ত বিকেল। উত্তাপহীন রোদ। ঝরঝরে পরিবেশ। এমন মনোরম সময়ে দাদার হাত ধরে প্রায় প্রতিদিনই হাঁটতে বেরোয় সাহিল। পিচঢালা সুন্দর পথ। ঝকঝকে। দু’পাশে ছায়াদার গাছের সারি। বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাখির ডাক। সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর। হাঁটতে হাঁটতে দাদা সাহিলকে যতসব নতুন নতুন গল্প শোনান। যে গল্প সাহিলের চিন্তার জগতে সুরভি ছড়ায়। আলোকিত জীবনের স্বপ্ন দেখায়।
আজও তারা দু’জন বেরিয়েছে পথে। একজন লোক সামনে পড়ল। দাদাকে দেখেই সে সাহায্য চেয়ে হাত বাড়াল। দাদা পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে তার হাতে দিলেন। ভীষণ খুশি হলো লোকটা। সম্ভবত সে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পেয়েছে। সাহিল লক্ষ করল, কোনোদিনই কোনো সাহায্যপ্রার্থীকে দাদা খালি হাতে ফেরাননি। কাউকে কিছু দিতে পারলেই যেন আনন্দ পান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাদা বললেন, কাউকে দান করতে পারা তো বড়ই গৌরবের ব্যাপার। শোনো! হজরত আবু বকর (রা)-এর শাসনামলে একবার ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সে সময় কোনো ফসলই উৎপন্ন হয়নি। ওই সময়ই সিরিয়া থেকে হজরত উসমান (রা)-এর একশ’টি বাহন বোঝাই খাদ্যদ্রব্যের বহর আসে। মদিনার সকল ব্যবসায়ী এসে সেগুলো কিনতে চাইল। হজরত উসমান (রা) বললেন, বেশ! তোমরা কেমন লাভ দেবে আমাকে? তারা বলল, ক্রয়মূল্যের প্রতি দশ দিরহামে আমরা আপনাকে বারো দিরহাম দেবো। তিনি বললেন, আরও বাড়াতে হবে। তারা বলল, তাহলে দশ দিরহামে পনেরো দিরহাম দেবো। উসমান (রা) বললেন, আমাকে তো এর চেয়েও বেশি লাভ দেয়ার কথা বলা হয়েছে! তারা আশ্চর্য হয়ে বলল, আমাদের আগে তো আপনার কাছে কেউ আসেনি! এবার তিনি বললেন, আল্লাহ তো প্রতি এক দিরহামেই দশ দিরহাম দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন! তোমরা কি আমাকে এর চেয়ে বেশি দিতে পারবে? তারা বলল, না। এরপর তিনি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বললেন, আমার ক্রয়কৃত সকল খাদ্যই আমি দরিদ্র মুসলিমদের জন্য সদকা করে দিলাম!
সাহিল আশ্চর্য হলো! দাদা বললেন, তোমার জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে। দশ গুণ তো সর্বনিম্ন হার। আল্লাহ এটাকে সাত শ’ গুণ এমনকি তারও বেশি বৃদ্ধি করেন। কুরআনে উপমার মাধ্যমে তিনি বলেছেন, “যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে। প্রত্যেক শীষে একশটি শস্যদানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরা আল বাকারা : ২৬১)
সাহিল ভাবল, প্রতিদিন টিফিনের খরচ থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে দান করে দেবে সে। দাদাকে একথা বলতেই তিনি বলে উঠলেন- মাশাআল্লাহ!
বিলাল হোসাইন নূরী
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ