কিশোর মনে ঈদ শিহরণ

কিশোর মনে ঈদ শিহরণ

প্রবন্ধ নিবন্ধ ড. কামরুল হাসান এপ্রিল ২০২৪

রোজার শেষে ঈদের খুশি, খুশির জোয়ার প্রাণে

মিষ্টি সুরে-আকুলতা চলছে গানে গানে!


ঈদ নিয়ে কী চমৎকার অভিব্যক্তি বাংলার কবির! বাংলাভাষায় এত অল্পবর্ণে গঠিত, এত অর্থবোধক শব্দ বড়ো বেশি নেই। একটি মাত্র স্বরবর্ণ ও একটি মাত্র ব্যঞ্জনবর্ণের সমন্বয়ে, কোনো কারও ফলা ব্যতীত এত ব্যাপক অর্থবোধক বাংলাভাষায় দ্বিতীয় শব্দটি পাওয়া দুষ্কর। শব্দটি ‘ঈদ’।

ঈদ অর্থ ফিরে আসা, বারবার ফিরে আসা, সময় শেষে ফিরে আসা, বছর শেষে ফিরে আসা। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বারবার ফিরে আসা-এর মধ্যে এক ধরনের সৌন্দর্য আছে। আনন্দ আছে। আছে খুশির ঝলক। সেই থেকেই ঈদের অর্থ করা হয় খুশি বা আনন্দ।

ঈদ মানে খুশির ঝলক, আনন্দের শিহরণ, উৎসবের ঝঞ্ঝা। শব্দটি আমাদের অনেক আকাক্সিক্ষত। ঈদ ফিরে আসবার বেশ আগে হতেই এ নিয়ে আমাদের অপেক্ষার প্রহর গোনা। বিশে^র প্রতিটি প্রান্তে ঈদ উৎসবের রং ছড়ায়। বাতাসে ভেসে বেড়ায় ঈদের সুবাতাস। দিগন্তে উড়ে বেড়ায় ঈদরূপী শান্তির পাখি। বিশে^র সবার মাঝে ঈদ নিয়ে চলে আনন্দ মাখামাখি।

ঈদ একটি সর্বজনীন উৎসব। একটি অসম্প্রদায়িক আনন্দ উদযাপন। ঈদ কেবল সমাজের অভিজাতদের নয়। ঈদ অভিজাত-অনভিজাত সবার। ঈদ আনন্দ কেবল ঐশ্বর্যবানদের জন্য নয়। ঈদের আনন্দ ধনী-নির্ধন সবার। ঈদের আনন্দ মুসলমানরা সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেয়। এক স্বর্গীয় আনন্দে মুসলিম-অমুসলিম সবাই একাকার হয়ে যায়।

ঈদ পৃথিবীর একমাত্র উৎসব যাতে সকল মানুষকে শামিল করার নির্দেশনা রয়েছে। ঈদ ইসলামের ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবে নতুন জামা-কাপড় এবং নানাবিধ খাদ্য আয়োজনের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তাহলে যারা অসহায়, নিঃস্ব তারা কী করবে? ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা-সমাজের অর্থশালীরা অর্থহীনদের অর্থ সাহায্য করবে। তাদেরকে ঈদের আনন্দে শামিল করবে। দরিদ্রকে অর্থ সাহায্য ধনীদের দয়ার দান নয়। এ তার ধর্মীয় বাধ্যকতা। এমন ঔদার্যের উৎসব পৃথিবীর আর কোনো ধর্মে পাওয়া যাবে না। ঈদের আনন্দকে সর্বজনীন করতে ধনবানদের এ প্রচেষ্টা সত্যিই মানবিক সমাজগঠনের প্রথম সোপান।

ইসলামের ঈদ উৎসব মেহমানদারির দিন। এ দিন একজন অন্যজনকে খাওয়ায়। অসহায়দের সাহায্য করে। অর্থ দেয়, খাবার দেয়। নিজেদের মাঝে শ্রেণিবৈষম্য ভুলে যায়। উঁচু-নিচুর তফাত দূর করে দেয়। সবাই এক কাতারে অবস্থান করে। কাছাকাছি, পাশাপাশি হবার এ মানবিক দৃশ্য গোটা বিশ্বেই বিরল।

ঈদ আসে আনন্দের সওগাত নিয়ে। সবার ঘরে ঘরে। ঈদের আনন্দে সবাই লুটোপুটি খায়। তবে কিশোরদের ঈদ আনন্দ যেন একটু আলাদা। কিশোরদের ঈদ মানেই নির্ভাবনার আনন্দ আয়োজন। কিশোর ঈদ মানেই নির্মল আনন্দের শিহরণ।

জীবনের মধ্য সময় কিশোরকাল। কিশোররা শিশু-বালকের মতো কারো ওপর নির্ভরশীল নয়। আবার তারা বড়োদের মতো দায়িত্বশীলও নয়। তার মানে কিশোরকাল স্বাধীন জীবনের মোক্ষম সময়। নেই কোনো দায়িত্ব কিংবা নেই পরনির্ভরতা। একেই বলছি নির্ভাবনা। ঈদের শিহরণ কিশোরদের মাঝেই সর্বাধিক।

তোমাদেরকে ঈদ শিহরণের জন্য মোবারকবাদ। ২০২৪ এর ঈদ শিহরণের অগ্রিম অভিনন্দন।

পথে পথে হাঁকিব বন্ধু, ঈদ মোবারক আসসালাম!

ঠোঁটে ঠোঁটে আজ বিলাব শিরনি ফুল কালাম!

বিলিয়ে দেওয়ার আজিকে ঈদ!


বাংলাদেশের সকল কিশোরের মাঝে ঈদের আনন্দ বিলিয়ে দিতে হবে। কোনো কিশোরই যেন ঈদ আনন্দ হতে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঞ্চয় বা কুক্ষিগত নয়। বিলিয়ে দেবার মাধ্যমেই আনন্দের প্লাবন বইয়ে দিতে হবে কিশোর সমাজকেই। কী চমৎকার কবি নজরুলের আহ্বান!

ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই

সুখ দুখ সম-ভাগ করে নেব সকলে ভাই।

নাই অধিকার সঞ্চয়ের।


তোমাদের ভালোবাসার বৃষ্টিতে স্নাত হবে সমাজের সকল শুভকর্ম। তোমাদের মমতার ঝড়ে উড়ে যাবে যাবতীয় জ্বরা, অশুচি। তোমাদের নির্মল ঔদার্যে ঘুচে যাবে কিশোরদের অমানিশা। দুঃখীদের মুখে ফুটবে স্মিত হাসির সুবর্ণ রেখা। কিশোরদের দুঃখ-কষ্ট ধারণ করে সহমর্মিতা জানাতে হবে তাদের প্রতি-

কোথায় ঈদের চাঁদ, কোথায় ঈদের দিন

মন ছুটে যায় ঐ সুদূরে, মিসর ফিলিস্তিন।

নাই খুশি নাই ঐ সিরিয়ায়, মিয়ানমার, কাশ্মিরেও নাই

বাংলাদেশে কেমনে বলো, ঈদের আমেজ পাই ॥


আজকের নির্যাতিত মুসলিম বিশ্বে ঈদের আনন্দ ভূলুণ্ঠিত। ঈদ আনন্দকে সর্বব্যাপী করতে এগিয়ে আসতে হবে কিশোর-সমাজকেই। কিশোররাই আগামীর কর্ণধার। দেশ গঠনের কারিগর। মানবিক বিশ্বের নির্মাতা।

ঈদুল ফিতর আমাদের সন্নিকটে। সহসা ঈদের শিহরণ কাঁপুনি তুলবে প্রতিটি কিশোর প্রাণে। এবারের ঈদ শিহরণকে অর্থবহ করতেই হবে। কেবল ঈদ উৎসব নয় ঈদের সুমহান বার্তা পৌঁছিয়ে দিতে হবে বিশ্বের প্রতিটি কর্নারে।

দামি ভূষণ পেলাম কিনা? মূল্যবান ভোজন খেলাম কি না? সেটি বড়ো কথা নয়। বড়ো কথা হলো- বিশ্ব জগৎকে আপন করে নিতে পারলাম কি না?

চাই না কোনো দামি ভূষণ, চাই না কোনো বিলাস ভোজন

চাই শুধু জগৎটাকে, একান্তই করতে আপন!!


ঈদুল ফিতর আসে পূর্ণ একমাস সিয়াম পালন শেষে। সিয়ামের প্রশিক্ষণে নিজেকে গড়ার স্বপ্ন ও তাগিদেই ঈদের আয়োজন। উৎসবের ঢাকঢোল। আনন্দ, উৎসব আর ইবাদতকে ইসলাম এক সুতোয় বাঁধতে চায়। ইবাদত বাদে কোনো উৎসব বা আনন্দ নয়। তাই ঈদ উৎসবে নির্দোষ যত আনন্দ, অনুমোদিত যত বিনোদন তার সবটুকু আমরা উপভোগ করতে চাই। ধনী-নির্ধন, আমলা-কামলা, শ্রমিক-মালিক, আমির-ফকির, পথিক-সাহিত্যিক, রাজা-প্রজা সকলের মাঝে সাম্য কামনাই হোক আমাদের ব্রত। আমাদের কিশোর সমাজের গন্তব্যের কেন্দ্রবিন্দু। কবির কথায় শেষ করতে চাই।

ঈদ এসেছে, বিভেদ কেটেছে, মহামিলনের মোহনা

এইখানে এসে এক হয়ে গেছে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।


আমার দেশের সকল কিশোর হবে এবারের ঈদে আনন্দের ফেরিওয়ালা। ঈদ শিহরণে এবার তাদের জেগে উঠবার পালা। কিশোর হাতেই সজ্জিত হবে আগামীর শুদ্ধ পৃথিবী। তাদের প্রচেষ্টায় উদিত হবে মানবিক সূর্যোদয়।

গোটা বিশ্বের সকল কিশোরকে ঈদুল ফিতরের অগ্রিম ঈদ মুবারক।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ