এনির বর্ষা

এনির বর্ষা

তোমাদের গল্প ইব্রাহিম জুয়েল জুলাই ২০২৩

সপ্তাহ কয়েক আগে কালবৈশাখীর দাপট গেল। হঠাৎ নীল আকাশে তাকিয়ে এনি দেখলো কালো মেঘে ঢেকে পড়েছে পুরো আকাশ! এ যেন ধেয়ে আসছে নতুন রূপে নতুন কোনো কিছু। সে হালকা হালকা ঠান্ডা অনুভব করতে লাগলো। তার শরীর যেন শীতল হয়ে উঠল। ততক্ষণে সে দৌড় দিলো তার দাদিমার কাছে। তার দাদিমাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা দাদিমা, আজকে আবার আকাশের মন খারাপ কেন?

দাদিমা বলল, নতুন ঋতু বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসছে। এটাই তো বর্ষা ঋতুর সৌন্দর্য।

এনি তখন তার দাদিমাকে বলল, ‘আবার বৃষ্টি! ধুর! ভাল্লাগে না; সারাদিন বৃষ্টি আর বৃষ্টি। কোথাও বের হওয়া যায় না। পুরো রাস্তা পানিতে থৈথৈ করে।’

তার দাদিমা হেসে বলে, এতে রাগের কী আছে? বর্ষা ঋতুতে তো তোমার গ্রামীণ দৃশ্যের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। বর্ষাকালেই তো তোমার প্রিয় ফুলগুলোর সূত্রপাঠ ঘটে। এনি এই কথা শুনার সাথে সাথে মহাখুশি! তার হাসি দেখে মনে হলো রাতের মিষ্টি চাঁদের হাসি তার মুখে এসে বসেছে। তার বাবা অফিসের কাজে বাইরে থাকে। মাও বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকে। বাসায় গল্প করার মতো দাদিমা ছাড়া আর তেমন কেউ নেই। তার আনন্দের সাথে সাথে আকাশ মামারও চোখ বয়ে অনবরত ভেসে পড়ছে বৃষ্টি। এনি বৃষ্টি দেখার জন্য তার দাদিমার পাশে বসে দক্ষিণ দিকের জানালাটি খুলে দিলো। জানালা খুলতেই চোখে পড়ে সে কি এক অপরূপ দৃশ্য! সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বাইরের দিকে। রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে; সাথে তাদের বাড়ির আশপাশও পানিতে থৈথৈ করছে। সবুজ এই ধরণির মাঠ-ঘাট খানিকটা ঢেকে পড়েছে বর্ষার পানিতে। এনি তার দাদিমাকে বললো, ‘আজকে আকাশের এতটাই মন খারাপ যে বৃষ্টি থামছেই না।’ তার দাদিমা মিটিমিটি হাসতে লাগলো। আর এনিকে বললো, ‘এই বৃষ্টি বর্ষাকালকে স্বাগতম জানাচ্ছে।’

এনি দেখতে লাগলো রিম-ঝিম অঝরে পড়ছে বৃষ্টি, থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পড়ছে তো পড়ছেই।

এনি স্পষ্টভাবে অনুভব করলো বাতাসে ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। সে কী এক মধুর ঘ্রাণ! প্রাণ ভরিয়ে দেবে যে কাউকেই। সে মহাখুশিতে ছাতাবিহীন দৌড় দিলো তার ফুলের বাগানে। কদম ফুলের ঘ্রাণে সুবাসিত তার ফুলের বাগান। বৃষ্টিতে হৈচৈ করে নাচতে লাগলো সারা বাড়ি। সাথে বাইরে চোখ পড়লে দেখা যায় অপরূপ দৃশ্য। প্রকৃতি ছিল স্নিগ্ধ, শান্ত-পরিচ্ছন্ন। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে সে এটাই বলতে লাগলো-

‘আকাশ থেকে ঢেলে পড়ছে বৃষ্টি,

কী অপরূপ মহান রবের সৃষ্টি!’

এনি প্রকৃতির মাঝেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। বৃষ্টি আরো প্রবল বেগে ছুটতে লাগলো। এনি কারো বারণ শুনছেই না। বাইরে বৃষ্টিতে সে ভিজবেই। মা ও দাদিমার নিষেধ অমান্য করে সে বাইরে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো। হঠাৎ বাড়ির মূল গেইটের দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো তার বাবা ভিজে ভিজে বাড়িতে আসছে। এনিকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে তার বাবা তাকে কোলে করে নিয়ে গেল ঘরে। এনির খানিকটা মন খারাপ হলো, চুপচাপ বসে আছে। দক্ষিণ দিকের জানালার দিকে তাকিয়ে। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসে ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। তার বাবারও বুঝতে বাকি রইলো না যে তার মেয়ে রাগ করেছে। মেয়ের রাগ কীভাবে ভাঙানো যায় বাবার বেশ জানা আছে। এনি তখন বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইল আর বর্ষা ঋতুর প্রতিচ্ছবি দেখতে লাগলো। এনির বাবা এক বাটি ভাজা কুড়মুড়ে মুড়ি ও চানাচুর নিয়ে বসল তার কাছে। আর হাসি মুখে এনিকে বলতে লাগলো বৃষ্টির দিনের মধুর খাবার হলো এটি। আমরা সবাই খেয়ে বর্ষাকালের গল্প শুনাবো তোমায়। এনি তো মহাখুশি! সব রাগ ভুলে গিয়ে বর্ষাকলের গল্প শুনতে বসে পড়েছে। এক এক করে শুনতে লাগলো বর্ষা ঋতুর নিপুণ সৌন্দর্যের কথা। এনি মনে মনে এই ঋতুকে আপন করে বরণ করে নিলো। এমন দিন যেন প্রতিদিন হয় এটাই তার চাওয়া। কিন্তু ছোট্ট এনির এটা তো জানা নেই? প্রকৃতি তার আপন মনে রূপ বদল করে একের পর এক ঝিলিক দিয়ে ফুটে তুলে নতুন ঋতুর অপরূপ সৌন্দর্য।

এনি গুনগুনিয়ে বলতে লাগলো-

বর্ষার রিমিঝিম বৃষ্টি

পড়ছে রাত-দিন;

এমন করে বয়ে আসুক

মিষ্টি খুশির বীন!

এনি ও তার পরিবারের সকলে গল্প নিয়ে মাতোয়ারা। আকাশের মন খারাপ থাকলেও এনির মনকে খুশিতে উজ্জ্বল করেছে এই বর্ষা ঋতু। এনি বর্ষার রূপকে কখনো ভুলবে না। তার স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে বর্ষার সৌন্দর্য।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ