উদ্ধার

উদ্ধার

গল্প আহমাদ মাশরাফি এপ্রিল ২০২৪

গ্রীষ্মের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছে সুমন। বিকেলে খেলতে গিয়েছে বড়ো মাঠে। তখন সে অন্যদের কাছ থেকে শুনলো গ্রামে কিছুদিন হলো কিছু ভীতিকর ঘটনা ঘটছে। পরে জানতে পারলো এটি রীতিমতো অপহরণ অবধি গড়িয়েছে। 

সুমনের খুব রাগ হলো। সে এগুলো অনেক অপছন্দ করে। তাই সে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিল এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে। সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক হলো, আজ রাতেই তাদের কাজ হবে। এগুলো বলাবলি করার মাঝেই মাসুদ ভাই এসে পড়লো।

মাসুদ ভাই সুমনের ছোটোবেলার প্রতিবেশী ছিল। অনেক সখ্যতা ছিল তাদের মাঝে। পরে সুমনরা শহরে চলে গেলে অনেক দিন তাদের সাথে আর দেখা হয়নি। তো মাসুদ ভাইকে দেখে তারা সকলেই খুশি হলো। কারণ মাসুদ ভাই ইতোমধ্যে এমন অনেক কেস শেষ করেছে। সেও নাকি এরকম কিছু করার কথা ভাবছিল।

মাসুদ ভাই তার পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে আরেকটু গুছিয়ে নিল সবকিছু। এরপর যে যার মতো চলে গেল বাড়িতে। বাড়িতে ম্যানেজ করতে খুব বেশি সমস্যা হলো না কারো। কারণ সাথে মাসুদ ভাই আছে।

তারা সব মিলিয়ে মোট আটজন। রবিন, লিটন, নাফিস, সালাম, শাহেদ, রফিক, সুমন ও মাসুদ ভাই। বয়সে শুধু মাসুদ ভাই তাদের থেকে দুই বছরের বড়ো।

আজকের রাতটি তাদের জন্য কেমন হবে তা সম্পর্কে কারো ধারণা নেই। সবাই গ্রামের এদিক সেদিক দুই জনের টিম করে ছড়িয়ে পড়লো। তবে বেশি দূরে যায়নি কেউই, যাতে অসঙ্গতি লক্ষ করা মাত্র অন্যদের জানাতে পারে সবাই। 

কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো গ্রাম তাদের চক্কর দেওয়া হয়ে গেল। তবে কিছুই চোখে পড়লো না তাদের। মধ্যরাতের অন্ধকার গ্রামে ছেয়ে গেছে। এমন নিস্তব্ধতা যে, পিঁপড়া নড়লেও আওয়াজ পাওয়া যায়। কিন্তু অন্য কোনোকিছুই লক্ষ করা গেল না। একটা সময় শোনা গেল- হো-হো-হো!

যেন সব ফেটে পড়ছে আওয়াজে। ওরা বুঝতে পারছে না কোথা থেকে আসছে আওয়াজ। যেন চারিপাশে ছড়িয়ে পড়েছে আওয়াজের উৎস। কিছুক্ষণ বাদে আওয়াজ থেমে গেল।

তারা সবাই একত্রিত হয়ে গেছে এতক্ষণে। তারা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে একে-অপরের দিকে।

- কী হলো একটু আগে? 

আবার নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে পুরো গ্রামে। হঠাৎ...

হ্যাঁ। ঠিক শুনেছে তারা। আশপাশে কোথাও শুকনা পাতা ভাঙার শব্দ এসেছে। মাসুদ ভাইয়ের পেছন থেকে। 

মাসুদ ভাইয়ের পেছনের অন্ধকারে কিছুর উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে তাকাতেই একটা জাল তাদের ঘিরে ফেলে। এরপর তাদের দৃষ্টিতে আর কিছুই ধরা পড়ে না।

সবাই জেগে উঠেছে ইতোমধ্যে। একটি ছোটো আধো-আলো ঘরে তারা আটজন আঁটোসাঁটো করে বসে আছে। একটি জানালা দিয়ে মৃদু আলো ঠিকরে পড়ছে। তারা বুঝতে পারলো সকাল হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাদের মন খারাপ হয়ে গেল অজানা কারণে।

এমন সময় ছয় ফিটের দরজা খুলে গেল। কেউ খেয়ালই করেনি দরজাটা। ঘরে ঢুকে গেল মধ্য বয়সি তিনজন ব্যক্তি। মুখোশধারী। এদের দেখেই কেন জানি তাদের সকলের শরীর জমাট বেধে গেল। একজন মুখোশধারী বলে ওঠে, কী বাচ্চারা? কী করছিলে সেখানে? 

আরেকজন মুখোশধারী বললো , খবরদারি করছিল আরকি! সাহস বেশি তো তাই! 

এরপর তিনজনই হেসে উঠল। হা-হা-হা...!

এক নিস্তব্ধতা নেমে এলো ঘরে। তখন মাসুদ ভাই তাদের ভেংচি কেটে দিলো। আর মুখোশধারীরা রাগে ফেটে পড়লো। তারা যেন সাথে সাথে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে মাসুদ ভাইকে। এরপর তিনজনই চলে গেল ঘর থেকে। 

ধীরে ধীরে পরিবেশটা কিছুটা শান্ত হলো। আর সবাই একটু সাহসও সঞ্চয় করে ফেললো। সবাই এখন বুঝতে পারলো কেন মাসুদ ভাই এমন করলেন। তাদের কিছুক্ষণের জন্য তাড়ানোর জন্য। মাসুদ ভাই হয়তো কোনো বুদ্ধি বের করেছেন। আর জিজ্ঞেস করা লাগলো না তাদের। মাসুদ ভাই নিজে থেকেই বলা শুরু করলেন, দেওয়ালের একটা অংশের দিকে ইশারা করে, এখানে কিছু দেখছিস তোরা? 

সবাই না বোধক মাথা নাড়লো। তখন মাসুদ ভাই আবার বলা শুরু করলেন, এই দেওয়ালটা অনেক পুরোনো। এই দেখ। বলেই দেওয়ালে হালকা চাপ দিলেন আর কিছু ইটের টুকরো নিচে পড়ে গেল। সবাই কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। যেন বলছে, হ্যাঁ, তাই তো। এখন?

মাসুদ ভাই বলতে লাগলেন, আমরা কিন্তু বুঝে গেছি জায়গাটা কোথায়। মনে পড়েছে? পোড়াবাড়ি? 

- হ্যাঁ! সবাই সমস্বরে প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো। 

মাসুদ ভাই নিচুস্বরে বললেন, আস্তে! শুনে ফেলবে তো!

সবাই মাসুদ ভাইয়ের ইশারা বুঝে গেল। জায়গাটা তাদের গ্রামের পাশের জঙ্গলের পোড়াবাড়িটা। এর স্বত্বাধিকারী আবু হাসান সাহেব দুই বছর আগে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু কারণে আর বিক্রি হয়নি এটি। তিনিও চলে গেছেন শহরে অনেক বছর হলো। এখন বুঝতে পারলো ওরা, কী কারণ। আর গ্রামের পরিস্থিতির কারণও এখন প্রায় বুঝে ফেলেছে ওরা। তবে এখন তারা এ নিয়ে আর ভাবছে না ওরা। কাজে লেগে গেল। 

খেলতে খেলতে অনেক বার এখানে এসেছে ওরা। যদিও সুমনের কাছে জায়গাটা নতুন, তবুও সে তাল মিলিয়ে ফেলেছে অন্যদের সাথে। লিটন আর শাহেদ বরাবরের মতোই সাথে লাইটার ও এন্টিকাটার নিয়ে এসেছিল। বেশি সতর্কতা! যাক আজ এর জন্যই তারা বাঁচতে চলেছে।

পুরোনো আমলের বাড়ি। তাই বেশি একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। শুধু আবু হাসান সাহেব থাকার জন্য জানালাগুলোর স্থানে গ্রিল লাগিয়ে রেখেছিলেন। যা কিছুক্ষণ টানাটানিতেই খুলে গেল। বের হওয়ার মতো জায়গা হয়ে গেল। তখন মাসুদ ভাই প্রথমে বের হলেন। এরপর একে একে সবাই বের হলো। সুমনের একটু অসুবিধা হলেও শেষে বের হতে পারলো।

মাসুদ ভাইয়ের কাছে একটা মোবাইল ছিল। পুলিশকে জানিয়ে দিলেন সবকিছু। পুলিশ এসেই তাদের তিনজন অপহরণকারীকে দেখে হতবাক হয়ে যায়। পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। এরা কুখ্যাত তিনজন অপরাধী- কালু মিয়া, রঞ্জু ও লিপু। দুই বছর আগে পুলিশ তাদের খোঁজে এই গ্রামে আসলে তারা উধাও হয়ে যায়। সুমনও তাদের চেনে। সে সময় অনেক খবর ছড়িয়ে ছিল তাদের নিয়ে। কিন্তু এখন ওরা বুঝতে পারলো এরা আসলে এই গ্রামেই ছিল। কারণ তার কিছুদিন পরেই আবার অপরাধ বেড়ে যায়। আর এরা আবাস গড়ে এই পোড়াবাড়িতে। এই কারণেই বাড়িটা বিক্রি করতে পারেননি আবু হাসান সাহেব। এখানেই এই অপরাধীরা সকল অপকর্মের শুরু করে। ফলে গ্রামবাসী পুরো অতিষ্ঠ হয়েছিল তাদের ওপর।

সেদিনের পর থেকে গ্রামে হিরো বনে গেল ওরা।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ