ঈদের দিনের মজার খাবার

ঈদের দিনের মজার খাবার

ফিচার আগস্ট ২০১১

মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম......

এক মাস সিয়াম পালনের পর আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। আর এই আনন্দ ও খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে উঠি আমরা ছোট-বড় সবাই। ঈদের দিনের অন্যতম আকর্ষণ হলো নতুন জামা-কাপড় ও মজাদার সব খাবার। নতুন পোশাক-আশাক হয়তো অনেক আগেই কেনা হয়ে যায়। এরপর ঈদের আগের দিন থেকে শুরু হয়ে যায় মজাদার সব খাবার তৈরির তোড়জোড়। তোমাদের মধ্যে কেউ হয়তো বাবার সাথে এসব খাদ্যের উপকরণ কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকো আবার কেউবা আম্মাকে রান্নার আয়োজনে সহযোগিতা করো। ঈদের দিনে আমাদের  দেশে সাধারণত যেসব খাবার রান্না হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মিষ্টি জাতীয় সেমাই, জর্দা, ফিরনি, পায়েস, লাচ্ছা, ফালুদা; আমিষ জাতীয় গোশতের কোরমা, কালিয়া, রেজালা, কাবাব, কোপ্তা, রোস্ট; শর্করা জাতীয় পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, নুডলস, ম্যাকারনি এবং হজম সহায়ক পানীয় বোরহানি। নিঃসন্দেহে এগুলো লোভনীয় ও উপাদেয়। তবে শুধু পছন্দের বিচারে এগুলোর যে কোন একটি দিয়ে পেট ভরলে চলবে না, খেতে হবে শরীরের চাহিদার ভিত্তিতে।
ঈদের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হলো সকালবেলা গোছল সেরে, হালকা নাশতা খেয়ে, ধোপ-দুরস্ত নতুন জামা কাপড় পরে ঈদগাহে বা মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা। কেননা এটা সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি আমাদের কর্তব্য। এর পরের কাজ হলো মজাদার সব খাবার খাওয়া, আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া এবং সম্ভব হলে পার্ক, চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্যানের মতো খোলা জায়গায় ঘুরে আসা। তবে ঈদের দিন একটি বিষয়ে সাবধান বা সতর্ক না হলে কিন্তু নিরানন্দের মতো কিছু ঘটে যেতে পারে। সেটা হলো খাওয়া-দাওয়া। আমাদের পেটের একটা ধারণমতা আছে। ধারণমতার চেয়ে বেশি খাবার খেলে বা উল্টা-পাল্টা খাবার খেলে পেট বিগড়ে যেতে পারে এবং আবার ঠিক হতে সময় নেবে। ততণে আমরা মন খারাপ করবো, মন থেকে আনন্দভাব বিদায় নেবে এবং সেখানে জায়গা করে নেবে নানা দুঃখ-কষ্ট ও নিরানন্দ। সে ক্ষেত্রে শুধু অসুস্থ ব্যক্তিই নয় গোটা পরিবার দুর্ভোগ পোহাবে।
ঈদের সময় শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে সব আনন্দই মাটি হয়ে যাবে। কেননা কথায় আছে সুস্থ দেহে সুস্থ মন। ঈদের দিনে আমরা নানা রকম খাবার খাই। অনেক সময় আমরা খেয়াল করি না কোন খাবারের পর কোন খাবার খাচ্ছি। অর্থাৎ নানা রকমের খাবার একই সময়ে খাই। আবার শুধু নিজেদের বাসায় নয়, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাসায় বেড়াতে গিয়েও খাই। অনেক সময় এরকম অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার ফলে বদ হজম বা পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
ঈদের আনন্দে সব খাবারই আমাদের খেতে ইচ্ছা করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে পরিমাণে কম খেতে হবে। আর তেলচর্বিযুক্ত খাবারের ব্যাপারে সাবধান। ঈদের পরে ছুটি থাকার সুযোগে আমরা বেশ কয়েকদিন দাওয়াতে যাই। সেখানেও প্রচুর খাওয়া হয়। ল্য রাখতে হবে যে, তেল মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণের সাথে সাথেই আমরা যেন দুধজাতীয় খাবার ও মিষ্টি বেশি না খেয়ে ফেলি। আরেকটি কথা, ঈদের আগেই মা-বাবাকে বলে রাখতে পারো ঈদের খাদ্য তালিকায় প্রচুর তেল, চর্বি, মসলার সমন্বয়ে তৈরি খাবারের পাশাপাশি তারা যেন কিছু হালকা ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত খাবারও রাখেন। যেমন নানা রকম ফলের তৈরি ফ্রুট সালাদ, কাস্টার্ড, হাড়ছাড়া মুরগির গোশত রান্না এবং নানা রকম সবজি রান্না। কেননা প্রচলিত রান্নার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত সহজপাচ্য খাবার থাকলে একদিকে যেমন রুচি বদলিয়ে খাওয়া যায়, অন্যদিকে তেমনি পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলে সেও স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে সুস্থ থাকতে পারবে।
ঈদের দিন সকালবেলা সব বাড়িতেই মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। অতিথি এলে প্রথমেই মিষ্টি দেয়া হয়। আমরা নিজেরাও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাবার মুখে দিয়ে ঈদের দিনটি শুরু করি। সত্যিকারার্থে ঈদের দিনে মিষ্টি খাওয়ার এই রেওয়াজ যতদূর সম্ভব সীমিত রাখাই ভালো। যাদের ডায়াবেটিস আছে, ওজন বেশি কিংবা ওজন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের মিষ্টি না খাওয়াই ভালো। ঈদের দিনে অনেক খাবারে বাড়তি চিনি  মেশানো হয়। এটা উচিত নয়। বাড়তি চিনি ক্যালরি বাড়ায়। স্বাস্থ্যের জন্য এটা মঙ্গলজনক নয়। তবে মিষ্টির বিকল্প হিসেবে দই খাওয়া যেতে পারে। দইয়ে থাকে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া, কম চিনি ও কম ক্যালরি।
প্রত্যেক মানুষের রক্তে নির্দিষ্ট মাত্রায় চর্বি থাকে। এই চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রার চর্বি করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। রক্তে বা শরীরের চর্বি কমানোর সহজ উপায় হলো গরু ও খাসির গোশত কম খাওয়া। যাদের গরু বা খাসির গোশত খাওয়া নিষেধ তারা ঈদের দিনে মুরগির গোশত খেতে পারো। তবে মুরগির গোশত চামড়া ছাড়া রান্না হতে হবে। কারণ একটা মুরগিতে যে পরিমাণ চর্বি থাকে তার অর্ধেকটাই থাকে চামড়ায়। ঈদের দিনে সালাদ খাওয়ায় কৃপণতা করবে না। বরং অন্য খাবার কমিয়ে দিয়ে সালাদ খেয়ে পেট ভরে তোলার চেষ্টা করবে। সালাদ হিসেবে গাজর, টমেটো, শসা ও লেটুস অনন্য। গাজর ও লেটুসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন যা থেকে ভিটামিন এ তৈরি হয়। টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অর্থাৎ ক্যান্সার নিরোধক। আর সালাদ খাবে সব সময় টাটকা অবস্থায়।
ঈদে পোলাও বা বিরিয়ানির পরিবর্তে খিচুড়ি খাওয়া ভাল। কেননা খিচুড়ি অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। তা ছাড়া খিচুড়ি একটি আদর্শ খাবার এবং যে কোন অনুষ্ঠানে পরিবেশনযোগ্য। দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের পর ঈদের দিনে হঠাৎ করে উল্টাপাল্টা খাবার খেলে পেট ফাঁপতে পারে। তাই সৌজন্য রার খাতিরে এক সাথে অনেক বাড়িতে গেলেও অল্প অল্প করে খাবে। খাদ্যে ঝাল যাতে বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গোশত খাওয়ার পর দুধ জাতীয় খাবার না খাওয়া ভাল। যাদের দুধ সহ্য হয় না, তারা দুধ জাতীয় খাবার পরিহার করবে। পোলাও বা বিরিয়ানি না খেয়ে পোলাও চালের সাদা ভাত খেতে পারো।
কখনো পুরোপুরি পেট ভরে খাবে না কিংবা অতিরিক্ত খাবে না। কেননা আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন,  “তোমরা তোমাদের পেটকে তিন ভাগে ভাগ করে নাও। এক ভাগ খাবার দিয়ে এবং এক ভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ কর। আরেক ভাগ সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইবাদতের জন্য রেখে দাও।”
আরেকটি প্রয়োজনীয় কথা হলো, খাবারের পরিমাণের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা সবার জন্যই জরুরি। পেট পুরে খাওয়া মানসিক তৃপ্তি দিতে পারে বটে কিন্তু শরীরের জন্য ভয়ানক তিকর। একবারে না খেয়ে বারে বারে কম পরিমাণে খাওয়া ভাল। সকালের নাস্তা একটু বেশি হলেও দুপুরের খাবার হবে হালকা। রাতের খাবার মসলাদার না হওয়াই ভাল। আর রাতের খাবার খাওয়া উচিত তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে খেতে পারলে খুব ভাল হয়। রাতে খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর শুতে যাওয়া উচিত, তাতে হজম ভাল হয়।
ঈদের দিনে তোমাদের অনেকেই হয়তো ফ্রুট জুস খাওয়া পছন্দ করবে। জেনে অবাক হবে যে, তোমরা দোকান থেকে কিনে যেসব দেশী-বিদেশী ফ্রুট জুস খাও সেগুলোর বেশির ভাগই আসল ফলের রস নয়। কৃত্রিম রঙ ও সুগদ্ধি দিয়ে জুস নামের এসব পানীয় তৈরি করা হয়। চটকদার বিজ্ঞাপনের সুবাদে এগুলোই হয়ে যায় ‘তাজা ফলের রস’। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এসব জুস পান করলে শিশুদের তো বটেই, বড়দের পাকস্থলীরও মারাত্মক তি হতে পারে। সেইসাথে লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তারা আরও জানান, কৃত্রিম ফ্রুট জুস ছোট শিশুদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বাজারের জুসগুলোতে তিকর টেক্সটাইল রঙ ব্যবহার করা হয়। ফ্রুট জুসের সাথে ফলের রসের কোন সম্পর্কই নেই। বাজারের ফ্রুট জুস পান করলে কোন উপকার তো হবেই না বরং স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব এসব না খেয়ে সবসময় মৌসুমি ফল খাবে তাতে মজা ও উপকার দুই-ই পাবে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ