ঈদের খুশি

ঈদের খুশি

ফিচার মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম এপ্রিল ২০২৩

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। কারণ, ঈদের সময়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে যায়। স্কুল ছুটি হলে কে না খুশি হয় বলো? সারারও স্কুল ছুটি হয়ে গেছে সেই ১০ রমযানে। তাই ও খুব খুশি, কারণ একটু আগেই গ্রামের বাড়ি যেতে পারবে। গ্রামের বাড়ি মানে বড়শি দিয়ে পুকুরে মাছ ধরা। গাছ থেকে নারকেল পাড়া, নদীতে নৌকায় চড়া... আরও কত্ত কিছু। এই সুযোগ বছরে শুধু ঈদের সময়ে আসে। আর সব চাচাত ভাইবোনদের সঙ্গে ইফতার করার অনুভূতি একদম আলাদা। আবার রাতে দাদুর সঙ্গে বাড়ির উঠানে গল্পের আসর। সবমিলিয়ে সারার কাছে এবার ঈদের আনন্দ আগেই ধরা দিয়েছে।

মায়ের সঙ্গে সারা গ্রামে এসেছে। বাবার অফিস ছুটি হতে দেরি হবে। তাই বাবার আসা হয়নি। ছুটি হলে বাবাও চলে আসবে। গ্রামে গিয়েই সারার দুরন্তপনা শুরু হয়ে গেছে। শহরের কৃত্রিম জগৎ ছেড়ে সারা এখন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। ওরতো মনে হচ্ছে পিঠে দুটো ডানা থাকলে গাছে গাছে উড়ে বেড়াত। ভালোই কাটছে সারার গ্রামের দিনগুলো। আজ দাদু বলেছেন, রাতে সবাইকে গল্প শোনাবেন। ইফতারের পর থেকে সারার যেন দেরি সহ্য হচ্ছে না। অবশেষে দাদু তারাবি শেষ করে মসজিদ থেকে বাসায় ফিরলেন। তারপর উঠানে খেজুরের পাতা দিয়ে বোনা পাটি বিছিয়ে দিয়ে সবাইকে নিয়ে বসলেন। তারপর বললেন, ‘শোনো, আমরা যা করি না কেন- আল্লাহ সবকিছু দেখতে পান। তাই গোপনেও কোনো অন্যায় করা উচিত নয়। কারণ আল্লাহ সবসময় আমাদের দেখতে পান। এ নিয়ে তোমাদের একটি গল্প বলছি শোন।’

তখন সারা ও অন্যরা খুব আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘দাদু, বলো বলো...’

দাদু বলতে শুরু করলেন, ‘এক মায়ের ছিল তিন ছেলে। তারা যমজ ছিল। মা তাদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি সবসময় তাদের পরামর্শ দিতেন- সৎ পথে চলার এবং কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল তা মেনে চলার। 

তারা যেন ভুল না করে সে জন্য তিনি তাদের সাবধানে চলতে বলতেন। এছাড়া, তাদের সবসময় নজরে রাখার চেষ্টা করতেন।

একদিন কুরআন মুখস্থ করা নিয়ে মা তার তিন যমজ ছেলেকে পুরস্কৃত করেন। তিনি প্রথম ছেলেকে পাঁচশ টাকা দিলেন। দ্বিতীয় ছেলেকে সাতশ টাকা দিলেন এবং তাকে শুভরাত্রি জানিয়ে বলেন, ‘আবদুল্লাহ সবচেয়ে ভালো করেছে।’ দ্বিতীয় ছেলের নাম ছিল আবদুল্লাহ। এছাড়া, তৃতীয় ছেলেকেও পাঁচশ টাকা দিলেন।

আবদুল্লাহকে সাতশ টাকা দেওয়ায় অন্য দু’জন মায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলল, ‘কেন তাকে আমাদের চেয়ে বেশি দেওয়া হলো। আপনি সবসময় তাকে বেশি পছন্দ করেন। আমরা কী এর কারণ জানতি পারি?’

মা বলেন, ‘ঠিক আছে, এটা অবশ্যই তোমাদের জানার অধিকার আছে। তবে, আগামীকাল জানতে পারবে। এখন ভালোভাবে ঘুমাও। কারণ আগামীকাল মাদ্রাসার জন্য তোমাদের খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে।’

সকাল হলো। পুব আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। চারদিকে পাখির কিচিরমিচির। মাদ্রাসায় যাওয়ার আগে তিনজনের হাতে চকোলেট দিলেন মা। বলে দিলেন- যখন কেউ তাদের দেখবে না তখন খেতে হবে।

মা এটাও বলে দিলেন, স্কুল থেকে ফেরার পর তারা চকোলেটটি কোথায় খেয়েছে তা জানতে চাওয়া হবে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর। মাদ্রাসা শেষে তারা বাসায় এলো। তখন মা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা চকোলেট কোথায় খেয়েছিলে?’

প্রথম ছেলে বলল, ‘বাড়ির উঠোনে, তখন আশপাশে কেউ ছিল না।’

তৃতীয় ছেলেটি বলল, ‘আমি মাদ্রাসার ছাদে উঠে খেয়েছি। তখন আমার পাশেও কেউ ছিল না। তাই আমি নিশ্চিত আমাকে কেউ দেখতে পাইনি।’

আবদুল্লাহ বলল, ‘আমি খাইনি।’

মা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন তুমি তোমার চকোলেট খাওনি?’

আবদুল্লাহর উত্তর, ‘আমি যেখানেই যাই না কেন আল্লাহ আমাকে দেখেন। আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে তিনি আমাকে দেখেন। ঠিক যেমনটি কুরআনে বলা হয়েছে।’

মা মুচকি হেসে তার অপর দুই ছেলেকে বললেন, ‘দেখ! এজন্যই আমি আবদুল্লাহকে বেশি পছন্দ করি। কারণ সে কুরআন থেকে যা শিখেছে তাই করে। সে শুধু পরীক্ষায় পাস করতে কুরআন মুখস্থ করে না।’

তার দুই ভাই তাদের ভুল বুঝতে পারল এবং মাকে প্রতিশ্রুতি দিলো এখন থেকে তারাও আবদুল্লাহর মতো করে চলবে।

সারা তখন বলল, ‘দাদু, আমি আর কখনো কাউকে মিথ্যা বলব না। স্কুলে বন্ধুদের মাঝে মাঝে মিথ্যা বলে ফেলেছি।’

দাদু তখন বললেন, ‘তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ এতে আল্লাহ খুশি হবেন। আর কখনো মিথ্যা বলবে না।’

আরেকটি গল্প শুনতে চাই বলে সবাই দাদুর কাছে আবদার করল। দাদু বললেন, ‘ঠিক আছে, আরেকটি গল্প বলছি। তবে, আজ এটাই শেষ।’ ওরা সবাই তখন বলল, ‘ঠিক আছে দাদু।’

দাদু আবার গল্প বলতে শুরু করলেন, সুন্দরবনের পাশের একটি সুন্দর গ্রাম আছে। নাম তার আনন্দপুর। সেই গ্রামের একটি ছেলের নাম রাতুল। রাতুল তার দাদুর সঙ্গে ছোট্ট ঘরে থাকত।

রাতুল খুব অলস। এতোটাই অলস ছিল যে, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করত না। সে মনে করত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা খুব কষ্টের।

একদিন তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। সে ভাবছিল প্রতিদিন সালাত আদায় না করে সপ্তাহে একদিন সালাত আদায় করবে। এ জন্য সে একটি দিন খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। 

সে চিন্তা করল, ওই দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে। আর সপ্তাহের বাকি দিনগুলো আরাম করে কাটাবে এবং কোনো সালাত আদায় করবে না।

এ জন্য রাতুল তার দাদার পরামর্শ চাইল। দাদুকে বলল, ‘আচ্ছা দাদু পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের জন্য সপ্তাহের কোন দিনটি সর্বোত্তম?’

দাদু বললেন, ‘শোন আমার নাতি। সালাত আদায়ের সর্বোত্তম দিন হলো মৃত্যুর আগের দিন।’ 

দাদুর উত্তরে রাতুল বেশ অবাক হলো। 

‘দাদু, এটা অসম্ভব! আমি কিভাবে আমার মৃত্যুর দিন জানব?’ 

‘তুমি ঠিক বলেছ নাতি, কেউ তার মৃত্যুর দিন জানে না। এজন্য আমাদের প্রতিদিন ইবাদত করতে হবে। ভাবতে হবে আজই আমার মৃত্যুর আগের দিন। তাই প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হবে।’

দাদুর গল্প বলা শেষে সারা ও তার চাচাত ভাইবোনেরা বলে উঠল, ‘আমরাও প্রতিদিন ইবাদত করব।’

কিশোরকণ্ঠের বন্ধুরা আমাদের প্রতিদিন ইবাদত করতে হবে। আর গোপনেও কোনো অন্যায় করা যাবে না। কারণ আল্লাহ সবকিছু দেখতে পান। আরেকটি কথা তোমরা ঈদের আনন্দ করো, কিন্তু গরিব প্রতিবেশীদের কথা একদম ভুলে যেও না। যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তাই এসময় সবার পাশে দাঁড়াতে হবে। তোমরাও গরিব বন্ধু বা প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়াবে। দেখবে ঈদের আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। অনেক কথাইতো হলো এবার কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত গানটি শুনতে শুনতে বিদায় নিলাম-

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে 

এলো খুশির ঈদ

তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, 

শোন আসমানি তাগিদ

তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ

দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে 

এলো খুশির ঈদ...’।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ