ঈদের খাওয়া দাওয়া

ঈদের খাওয়া দাওয়া

স্বাস্থ্যকথা ডা. এহসানুল কবীর এপ্রিল ২০২৩

ঈদ আনন্দের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হলো মজার মজার খাওয়া দাওয়া। এটার আকর্ষণ ও অনুভূতি সত্যি অন্যরকম যা ঈদের খুশির মাত্রাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের কাছে ঈদের লোভনীয় খাবারগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। সারা বছর এই ঈদের দিনটিতে তারা আশা নিয়ে বসে থাকে নতুন জামাকাপড়, ঈদসেলামি আর মজার খাবার-দাবার পাবার আশায়। 

সাধারণত ঈদের দিনে বড়দের খাওয়ার অনেক বিধি-নিষেধ থাকলেও ছোটদের কিন্তু সেসব বিধিনিষেধের বালাই নেই বললেই চলে। তবে  একমাস রোজা থাকার পর হঠাৎ করে বাঁধনমুক্ত হবার মতো ঈদের দিনের খাওয়াটা যেন অনিয়ন্ত্রিত ও মাত্রাতিরিক্ত না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখা উচিত আমাদের সবাইকে। তাই ঈদের খাওয়া দাওয়া কেমন হবে এ বিষয় নিয়েই এবারের পর্ব।    

ঈদের দিনের সকালের খাওয়া : এদিনে সকালে অনেক ধরনের খাবার না খেয়ে হালকা এবং পরিমিত আকারের নাশতা করাটা উত্তম। সকালে ঈদ নাশতায় রুটি অথবা হালকা তেলে ভাজা পরোটা অথবা নরম সবজির খিচুড়ি রাখা যেতে পারে। এছাড়া খাওয়ার তালিকায় মিষ্টান্ন আইটেমগুলোও থাকতে পারে। যেমন- সেমাই, ফিরনি, পায়েস, জর্দা, কাস্টার্ড, হালুয়া, পুডিং, চটপটি, ফুচকা ইত্যাদি। তবে দুগ্ধজাত বাদামমিশ্রিত মিষ্টান্ন ও ফলের তৈরি খাবারসমূহ পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা উচিত এবং এটা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত। তবে খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। পাশাপাশি দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি পান করে ঈদের নামাজে যাওয়া উচিত। 

সকাল ও দুপুরের মধ্যবর্তী খাওয়া : এ সময়ে আবার ফুচকা বা চটপটি অথবা ফুচকা-চটপটি মিশ্রিততভাবে খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি মৌসুমি ফল বা ফলের সালাদ খাওয়া যেতে পারে। যথেষ্ট পরিমাণে পানিপান তো অবশ্যই।

ঈদ-দুপুরের খাওয়া : মূলত ঈদের প্রধান খাবারটাই হয় দুপুরের আয়োজনের মধ্যেই। এ সময়ে হালকা তেলে ভাজা খাবার যেমন- পোলাও, চিকেন বিরিয়ানি বা চিকেন ভুনা খিচুড়ি খাওয়া  যেতে পারে। এছাড়া বেক করা কাবাব বা গ্রিল করা মুরগি খাওয়া যেতে পারে। ঈদের দিনের মজার একটা আইটেম হলো রোস্ট। অতিরিক্ত তেল-মসলার কারণে এটা শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর পরিবর্তে মুরগির কোরমা বা ভুনা করে খাওয়া যেতে পারে। মাংসের কাবাব আইটেমটা অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ কাবাব পোড়ানো বা ঝলসানোর ফলে চর্বির পরিমাণ কমে যায়। তবে কাবাব যেন অর্ধসিদ্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এর ফলে ফিতাকৃমির উপদ্রব বাড়তে পারে। এ ছাড়া মাছের আইটেমের মধ্যে মাছের চপ, কাটলেট, স্ট্যু, স্মোক ফিস প্রস্তুত করা যেতে পারে। সবশেষে টক দই খুব উপাদেয় ও উপকারী হবে। কারণ এটা একধরনের প্রোবায়োটিক যা গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে ভালো কাজ করে। ঈদের দিনে দুপুরে ও রাতের মেনুতে সবজির একটা আইটেমসহ সালাদ থাকাটা খুবই দরকার ও স্বাস্থ্যকর। কারণ এটা ক্ষুধা উদ্রেককারী ও হজমকারী।

ঈদ-বিকেল বা সন্ধ্যার খাওয়া : এসময় মিষ্টান্ন, ফলমূল, চা-কফি ইত্যাদি হালকা নাশতা খাওয়া যেতে পারে।

ঈদ-রাতের খাওয়া : ঈদের দিনে দুপুরে ভারী খাবার খাওয়া  হয়, তাই রাতের বেলা একটু হালকা খাবার যা সহজেই হজম হতে পারে এমন খাবার পছন্দ করাই উচিত। সেক্ষেত্রে ভাত-মাছই উত্তম। এ ছাড়া রাতের মেনুতে স্যুপ জাতীয় তরল খাবার বা ডাল রাখা যেতে পারে যা অত্যন্ত উপকারী। খাওয়ার পরে একটু হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। 

ঈদের দিনের পানীয় কী হবে?

যেহেতু ঈদের দিন গরমের ভিতর কিশোর-কিশোরীরা বেশি বেশি মাঠে-ময়দানে ঘুরতে বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যেতে চায়, কাজেই তারা খুব দ্রুত পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে। তাই এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা তরল পানীয় পান করা উচিত। এছাড়া ঈদের দিন প্রচুর পরিমাণে প্রাণিজ আমিষ ও চিনিমিশ্রিত শর্করা খাওয়া হয়, তাই সেক্ষেত্রে পানিপানের বিকল্প নেই। পানীয়ের মধ্যে সাধারণত ফলের জুস, বেলের শরবত, ডাবের পানি, বোরহানি, লাচ্ছি, লাবাং, মাঠা ইত্যাদি পান করাটা শ্রেয়। তবে কোমল পানীয় বা সফট ড্রিঙ্কস পরিহার করাই উত্তম।  কারণ এসব পানীয় বা জুসে অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্রিম রঙ মেশানো থাকে যা থেকে পরবর্তীতে কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর বদলে মধুমিশ্রিত লেবুর শরবত খুবই উপাদেয় ও উপকারী বটে।

আরো কিছু কথা

উল্লেখ্য, কিশোর বয়সে খাবারের তেমন বিধিনিষেধ না থাকলেও অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করাটাই উত্তম। পাশাপাশি অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবার বর্জন, কোমল পানীয় পরিহার করে চলাটাই শ্রেয়। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে, প্রতি বছর ঈদ আমাদের কাছে ত্যাগ ও আনন্দের এক বিশাল শিক্ষা নিয়ে হাজির হয়। তাই আমাদের আশপাশের গরিব-দুস্থ শিশু-কিশোরদের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে খুঁজে এনে বাসায় নিয়ে যদি খাওয়ানো  যায় এবং নতুন জামাকাপড় উপহার দেওয়া  যায়, তাতেই ঈদের সত্যিকারের আনন্দ উপলব্ধি করা যাবে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ