ঈদ মহা মিলনের উৎসব

ঈদ মহা মিলনের উৎসব

প্রবন্ধ নিবন্ধ ড. রফিক রইচ এপ্রিল ২০২৪

সুখের হিমালয় পিঠে করে আবার ঈদের বাঁকা চাঁদ আকাশের গায়ে উঁকি দিলো। ঈদ এলো। গোটা মুসলিম জাহানের নিরীহ মুসলিম পরিবারগুলো ঈদ পেলো। এই মুসলিম পরিবারগুলোতে আছে সবচেয়ে দামি মহা মূল্যবান এক রত্ন। যে রত্নের নাম হলো পারিবারিক বন্ধন। পারিবারিক বন্ধন হলো একটি সংযোগ যা কিনা বিভিন্ন মানুষের রয়েছে। আর এ পারিবারিক বন্ধন হয় রক্তের সম্পর্ক, বিবাহ সম্পর্ক ও দত্তক গ্রহণের মাধ্যমে। এটি জড়িত করে আপনজন যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা-চাচী, খালা, ফুপি ও কাজিনদের। দূর বা নিকট আত্মীয়স্বজন ছাড়াও পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যে বা একই ভাষাভাষী ও একই ধর্মের মানুষদের মধ্যে এ সংযোগ গড়ে ওঠে প্রকৃতিগতভাবেই। যে বন্ধনের শক্তি অনেক। এর মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে মায়া জাগায়, একে অপরকে কাছে টানে, ভালোলাগা ও ভালোবাসা জাগায়, ত্যাগ করতে শেখায়, সর্বোপরি মরতেও শেখায়। এই পারিবারিক বন্ধনের জন্য শান্তি ও সুখের রাজ প্রাসাদের দোলনায় দোল খায় পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রতিনিয়ত। আমরাও মুসলিম পরিবারের সদস্য হিসাবে এ শান্তি সুখের বাইরে নই। ঈদ এলে এ বন্ধন অতি মাত্রায় মেঘহীন সূর্যের মতো দৃশ্যমান হয়।

আমাদের কেউ পড়ালেখার কারণে, কেউ চাকরিজনিত কারণে, বৈবাহিক কারণে আবার কেউ বা বিদেশ থাকার কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকি। দূরে থাকতে হয়। কিন্তু ঈদ এলেই যে যেখানেই থাকি না কেন পারিবারিক মধুর বন্ধনের কারণে ছুটে আসি। কাছে আসি। কাছাকাছি হই। পরস্পর মিলিত হয়। বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচী, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ফুপা-ফুপি সবাই একসাথে মিলিত হওয়ার যে আনন্দ উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা শান্তি, প্রশান্তি সর্বোপরি ভালোলাগা ও ভালোবাসা সবই যেন সমুদ্রসম। সীমাহীন। অতুলনীয়। এটি শুধু যে পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। এছাড়াও বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজন, সুজন, দিকপতিজন, পাড়া প্রতিবেশীও এর অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ঈদ এলেই বেশ কিছুদিন দেখা না হওয়া প্রিয়জনদের সাথে সাক্ষাতের বা মিলিত হওয়ার রূপালি ইচ্ছাগুলো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আমরা দূর দূরান্ত থেকে এসে প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হই। একে অপরের খোঁজ-খবর নেই। ভালো মন্দ জানি। আর থই থই আনন্দ উপভোগ করি। আত্মার প্রশান্তি ঘটাই। চনমনে হয়ে উঠি। ফুর-ফুরে হয়ে উঠি।

এ মিলন উৎসবকে আরো অফুরান ও প্রাণবন্ত করে তুলতে সাবেক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হয় ঈদপুনর্মিলনী উৎসব। এই উৎসবে সাবেক শিক্ষার্থীরা যারা বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত আছে তারাসহ বিভিন্ন নামী-দামি অতিথিরা অংশগ্রহণ করে মিলন উৎসবকে অর্থবহ করে তোলেন। হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে অঞ্চলভিত্তিক দেশীয় সংস্কৃতির নানা বিষয়-আশয় কবিতা, ছড়া, গান ও নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপন করে আনন্দের নতুন মাত্রায় এনে দেয়। আবার কখনো কখনো কোনো ঐতিহাসিক স্থানেও ঘোষণা দিয়ে শিশু, কিশোর-কিশোরী মাঝ বয়সি নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা সবাই একসাথে মিলিত হয়ে এক বরেণ্য উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। যা সবার হৃদয় ও মনকে আনন্দের বৃষ্টিতে ভিজিয়ে তোলে। অনেক সময় নানা সংগঠন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ঈদ এলে রঙধনু মিলন উৎসবের আয়োজন করে। সেখানে নিজ নিজ সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা অংশগ্রহণ করে ঈদ মিলন উৎসবকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলে।

আবার যারা বিদেশে থাকে তারা দেশে আসতে না পারলেও বিদেশের মাটিতেই আপনজনসহ স্বদেশি, একই ভাষা ও ধর্মের মানুষদের সাথে একত্রিত হয়। মুখের চওড়া হাসি আর আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে। কুশলাদি বিনিময় করে। ঈদের সুখ ভাগাভাগি করে। ভালো খাওয়াদাওয়া করে। শিশু, কিশোর-কিশোরীসহ সকলেই দিনভর হই-হুল্লোড় করে। এতে করে পারস্পরিক পরিচয়, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ বৃদ্ধি পায়। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। আমাদের জীবন-যাত্রাকে শিল্পিত করে তোলে তথা অনাবিল শান্তিতে সহজ, সরল ও সুন্দর করে বাঁচতে শেখায়। নির্ভেজাল ভালো থাকি আমরা।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ