ঈদ আনন্দে পৃথিবীতে আসে জান্নাতি ফল্গুধারা

ঈদ আনন্দে পৃথিবীতে আসে জান্নাতি ফল্গুধারা

প্রবন্ধ নিবন্ধ হারুন ইবনে শাহাদাত এপ্রিল ২০২৩

খুশির মোড়কে  মোড়ানো ঈদ শব্দটিই। আর খুশির সাথে জড়িয়ে থাকে আনন্দ। ঈদের শাব্দিক অর্থ বারবার ফিরে আসা। অর্থাৎ যে উৎসব আনন্দ বা খুশির দিন বারবার ফিরে আসে। প্রতি বছরই আসে। তোমরা জানো, ঈদের রয়েছে একটি পারিভাষিক অর্থও। কী সেই পারিভাষিক অর্থ তা নিশ্চয়ই তোমাদের কারো অজানা নয়। তারপরও আমরা আরো এবার একটু দেখি ঈদ আসলে কী? ঈদ হলো ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব। একটি ইবাদাত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. যখন হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনা গেলেন গিয়ে দেখলেন, সেখানের অধিবাসীরা বছরে দুটি উৎসব পালন করেন: ১. নওরোজ এবং ২. মিহিরজান। এই দুটি উৎসব সেখানকার বাসিন্দাদের ধর্ম এবং গোত্রের রীতি অনুযায়ী একটি শরতে এবং আরেকটি বসন্তকালে উদযাপিত হতো। 

রাসূল সা.-এর সাহাবি আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সা. যখন মদিনায় আসলেন তখন আমাদের দু’টি উৎসবের দিন ছিল। রাসূল সা. জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিনের তাৎপর্য কী? আমরা বললাম জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এই দুই দন উৎসব করতাম। রাসূল সা. বললেন, আল্লাহ এর পরিবর্তে তোমাদের জন্য উত্তম কিছূ দিয়েছেন: ইয়াওমুদ্দুহা (ঈদুল আযহা) ও ইয়াওমুল ফিতর (ঈদুল ফিতর)। এই দুটি উৎসবের খুশি ও আনন্দ দুনিয়ার ভোগবিলাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এক অপার্থিব আনন্দ ও উৎসবের দিন ঈদ।

ঈদের আনন্দ ও উৎসব যুগ যুগ ধরে প্রচলিত উৎসবের ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে এই বিশ্ব জাহানের ¯্রষ্টা এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছেন। এই সুযোগ কি সবাই কাজে লাগাতে পারি? না, সবাই পারি না। দেখা যায় ঈদ উৎসবের মূল চেতনা বুঝতে না পেরে অনেকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়ে ভোগের মাঝে আনন্দ খোঁজে। ঈদ আসলেই তারা শুরু করে শপিং। নতুন নতুন ডিজাইন আর মডেলের পোশাক আর বাহারি খাবাবের আয়োজনে ঘর ভরিয়ে ফেলে। দরিদ্র আত্মীয় ও বঞ্চিত মানুষদের কথা তাদের একবারও মনে পড়ে না। আসলে তারা ঈদ উৎসব ও আনন্দের তাৎপর্য বুঝতেই পারেননি। এ না পারার কারণ ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা কি এবং কেন তাই তারা জানে না।

ঈদুল ফিতর হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১ শাওয়াল আসে বাঁকা চাঁদের হাসি ঠোঁটে। মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দা আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায়। সেই বিশুদ্ধতাকে অক্ষুণœ রেখে বছরের বাকি ১১ মাস জীবনযাপনের শপথ নেওয়ার দিন ঈদুল ফিতর। সিয়াম সাধনা আল্লাহর একজন বান্দাকে আত্মসংযম, ত্যাগ ও নিষ্ঠার সাথে ইসলামের বিধান মানার শিক্ষা দেয়। পবিত্র কুরআন নাজিলের এই মাসে। পবিত্র কুরআনের নির্দেশিত পথে চলার প্রশিক্ষণ নেন আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দারা। তারা প্রশিক্ষণের সাফল্য লাভের আনন্দ উদযাপন করেন ঈদুল ফিতরের দিন।

ঈদুল আযহার সাথে জড়িয়ে আছে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম আ. ও তাঁর প্রিয় সন্তান হযরত ইমাঈল আ.-এর ত্যাগের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের আলোকে ঈদুল আজহা প্রতি বছর আসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মত্যাগের পরীক্ষার দিন হিসেবে। ঈদুল আজহার ঈদ উৎসবের সাথে জড়িয়ে আছে এক কিশোরের আত্মত্যাগের মহান স্মৃতি। সেই মহান আত্মত্যাগী কিশোর কে তোমরা, জান? 

তোমরা নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝতে পেরেছো? হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। তিনি হলেন, মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম আ.-এর পুত্র হযরত ইসমাইল আ.। যাঁর সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘এই কিতাবে ইসমাইলকেও স্মরণ কর। তিনি ছিলেন ওযাদার সত্যতাবিধানকারী। এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী।’ ‘তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে সালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি স্বীয় পালনকর্তার নিকট পছন্দনীয় ব্যক্তি ছিলেন।’ (সূরা: মারিয়াম ৫৪-৫৫)। 

আল্লাহর নেয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পিতা-পুত্র দু’জনই। আল্লাহর আদেশে মক্কার অনতিদূরে মিনা প্রান্তর আজও পিতা-পুত্রের ত্যাগ ও কুরবানির ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। প্রতি বছর আল্লাহর মেহমান হাজীরা এই ময়দানে এখনো লক্ষ লক্ষ পশু কুরবানি করেন। পিতা-পুত্রের ত্যাগের স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে আল্লাহ-তায়ালা ঈদুল আজহার দিন সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য গৃহপালিত পশু কুরবানি ওয়াজেব করেছেন। তার তিনি কুরবানির পশুর রক্ত গোশত কিছুই চান না। তিনি দেখেন বান্দার আত্মত্যাগের মানসিকতা। ত্যাগের মাঝে যে আনন্দ আছে সেই আনন্দের বন্ধনে সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। আল্লাহর সাথে যার সম্পর্ক যত গভীর হয় তিনি আল্লাহর সৃষ্টিকে তত বেশি ভালোবাসতে পারেন। এই ভালোবাসার প্রভায় পৃথিবীতে নেমে আসে জান্নাতি শান্তির ফল্গুধারা। 

এক মাস সিয়াম সাধনার পর প্রতি বছরের মতো এবারও এসেছে ঈদুল ফিতর। আমরা যখন ঈদুল ফিতর উদযাপন করবো, ঠিক সেই সময় তুরস্কের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় চলছে পুনর্বাসনের কাজ। ফিলিস্তিন, কাশ্মিরসহ দেশে দেশে স্বৈরাচারী জালেম শাসকদের কারাগারে বন্দি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মজলুম মানুষ। বিশ্বের দেশে দেশে মুক্তিসংগ্রামীরা অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে, তাদের জন্য সমর্থন ও দোয়া অব্যাহত রাখতে হবে। উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে গড়তে হবে স্বৈরাচার মুক্ত পৃথিবী।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ