মোবাইল ও গেম আসক্তি ক্যারিয়ার গঠনে অন্যতম অন্তরায় - মোহাম্মদ আক্তার হোসেন।
মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। 67 views 0 comments
আধুনিকতার এই যুগে মোবাইল ফোনের সাথে পরিচিত নয় এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই এর সাথে পরিচিত। “মোবাইল ইন্ডাষ্ট্রি ইমপ্যাক্ট” এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বে ৫২০ কোটি মুঠোফোন গ্রাহক ছিল, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯ সালের তুলনায় ২২ কোটি বেড়ে ২০২০ সালে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪০০ কোটিতে পৌঁছেছে।
১৯৭৩ সালে ড. মার্কিন কুপার ও তাঁর সহকর্মী ফ্রান্সিস মিচেল একটি প্রায় ২ কেজি ওজনের হাতে ধরা মুঠোফোন আবিষ্কার করেন। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন বাজারে আসতে থাকে তবে উক্ত ফোন গুলো দিয়ে শুধু মাত্র কথা বলা এবং খদে বার্তা পাঠানো যেত। কিন্তু ১৯৯৪ সালের আইবিএম আর মিতাসুবিসি ইলেক্ট্রনিক কর্পোরেশন এর যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের প্রথম স্মার্ট ফোন তৈরি করা হয়। যার নাম দেওয়া হয়েছিল “সিমন”। স্মার্ট ফোন বাজারে আসার পর থেকে বিশ্ব যোগাযোগ মাধ্যম হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বর্তমানে স্মার্ট ফোনের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে শত উপকারিতার মাঝেও অসংখ্য অপকারিতা বিদ্যমান। যার মধ্যে অন্যতম হলো মোবাইল আসক্তি বা ডিজিটাল আসক্তি। যা বর্তমান তরুণ-তরুণীদের ক্যারিয়ার ধ্বংসের অন্যতম কারণ।
মোবাইল বা ডিজিটাল আসক্তির কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ভিডিও গেম। বিশেষ করে ফ্রি ফায়ার গেম উল্লেখ যোগ্য – THE DAILY CAMPUS পত্রিকার ২৫ জুলাই ২০২১ ইং তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ফ্রি ফায়ার গেমটি খেলছে। আমাদের বাংলাদেশেও প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ গেমটি খেলছে। কিশোর, তরুণ ও প্রাপ্ত বয়স্কদের ৮.৬ শতাংশ ইন্টারনেট গেমিংয়ে আসক্ত। এর মধ্যে ৪.৮ শতাংশ কিশোর এবং ১.৩ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক ।
ফ্রি ফায়ার সহ সকল গেমের কোনো উপকাপরিতা তো নেই বরং “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা” এই অনলাইন গেমস, সেল ফোন, কম্পিউটার বা ভিডিও গেমসের ক্ষতিকারক ব্যবহারকে একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যাকে ডিজিটাল আসক্তি বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মজার বিষয় হলো যারা এই গেম তৈরি করেছে তাদের ছেলেমেয়েদের এই গেমাসক্ত থেকে দূরে রেখেছেন। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো পরবর্তী প্রজন্মকে বুদ্ধিহীন অনুগত অনুসারী হিসেবে তৈরি করা। প্রতিটি জনপ্রিয় ডিজিটাল গেম হলো ভয়ংকর সন্ত্রাস, সহিংসতা, যুদ্ধ ও মৃত্যুর গল্প।
অস্ট্রেলিয়ার ডায়াকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হেলেন ইয়ং তার নিবন্ধ “ভায়োলেন্স এন্ড ফার রাইটস” এ লিখেছেনে- সন্ত্রাস ভিত্তিক ভিডিও গেমগুলো সন্ত্রাস-হিংসাকে সাধারণ করার ষড়যন্ত্র। এটি মানুষের অভ্যান্তরীণ অপরাধবোধকে উসকে দিচ্ছে। তরুণদের হত্যার বিষয়টি স্বাভাবিক হিসেবে ভাবাতে শেখানো হচ্ছে, মানুষের মধ্যে নৈতিকতা নষ্ট হচ্ছে।
ফল স্বরূপ সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অক্ষম হয়ে উঠছে। এই আসক্তিটি তাদের সৃজনশীল শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। যা যথাযথ ক্যারিয়ার গঠনে অন্যতম অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
“ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল” (ঢাকা) এর প্রিন্সিপাল তাঁর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন শীঘ্রই বাংলাদেশে এই সন্ত্রাস ভিত্তিক গেম বন্ধ করা জরুরি। তদুপরি, বাচ্চাদের এ জাতীয় আসক্তি থেকে বাঁচাতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় জড়িত হতে উৎসাহিত করতে হবে। সর্বোপরি কথা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং বিশ্ব মাঝে তাদেরকে শীর্ষ করে গড়ে তুলতে মাদকের আসক্তিকে না বলার পাশাপাশি মোবাইল ও ডিজিটাল আসক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারকে না বলতে হবে।
তথ্যসূত্র
উইকপিডিয়া, THE DAILY CAMPUS.
মোহাম্মদ আক্তার হোসেন।
শ্রেণি : আলিম ২য় বর্ষ
শাহরাস্তি চিশতিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা। শাহরাস্তি, চাঁদপুর।
আরও পড়ুন...