টেলিস্কোপের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি হাজার কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব কেমন ছিল। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করা আরও সহজ হয়েছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে মহাজগতের অসংখ্য ছবি। সম্প্রতি এই যন্ত্রের মাধ্যমে মিলেছে বিস্ময়কর তথ্য।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার। টেলিস্কোপ তৈরিতে খরচ হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। এই যন্ত্রটি পৃথিবী থেকে এক হাজার আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্রহে পানি থাকার চিহ্ন শনাক্ত করেছে। শুধু তাই নয় সেখানেও আছে সূর্যের মতো এক নক্ষত্র। আর তাকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে এক দৈত্যাকার গ্যাসীয় পিণ্ড। অথচ আগে ভাবা হতো তপ্ত ওই গ্রহের আকাশ একেবারে পরিষ্কার।
স্পেস ডটকম জানিয়েছে, সৌরমণ্ডলের বাইরের গ্রহকে বলে এক্সোপ্ল্যানেট। নাসা এ গ্রহের নাম দিয়েছে ডব্লিউএএসপি-৯৬বি।
ডব্লিউএএসপির পুরো অর্থ দাঁড়ায় ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সার্চ ফর প্ল্যানেট। এই এক্সোপ্ল্যানেট ১১৫০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে।
এখন পর্যন্ত নাসা ৫০৬০টি এক্সোপ্ল্যানেটের কথা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৫২২টি গ্রহকে তারা ‘গ্যাস দানব’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ডব্লিউএএসপি-৯৬বি এক্সোপ্ল্যানেটটি সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। মূলত হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত বলে এসব গ্রহকে বলে গ্যাস দানব।
এ ধরনের গ্রহের মধ্যে যেগুলো নক্ষত্র থেকে দূরত্ব এবং অতি উষ্ণতার কারণে সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো গ্রহ বৃহস্পতির মত দেখতে, জ্যোতির্বিদরা সেগুলোকে বলেন হট জুপিটার। ডব্লিউএএসপি-৯৬বি এরকম একটি হট জুপিটার।
দক্ষিণ-আকাশের নক্ষত্রমণ্ডল ফিনিক্সে অবস্থিত এই গ্রহটির সঙ্গে আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। এর ভর আমাদের বৃহস্পতি গ্রহের অর্ধেকেরও কম। কিন্তু ব্যাস বৃহস্পতি থেকে ১ দশমিক ২ গুণ বেশি। আমাদের সৌরজগতের যেকোনো গ্রহের তুলনায় এটি অনেক স্ফীত। তাপমাত্রাও বসবাসের অযোগ্য, ৫৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নাসার তথ্যানুযায়ী, ডব্লিউএএসপি-৯৬বি তার সূর্যের মতো নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর সময় সাড়ে তিন দিনে গ্রহটি তার নক্ষত্রকে একবার ঘুরে। এ গ্রহের বিশাল আকার, সংক্ষিপ্ত আবর্তনকাল, স্ফীত বায়ুমণ্ডল ও দূষিত আলোর বাধা না থাকায় এর বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করার জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হয়েছে। আর এসব বৈশিষ্ট্যের জন্যই ডব্লিউএএসপি-৯৬বিকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ জন্মেছে।
প্রথম দফায় ওয়েব টেলিস্কোপ যেসব বৈজ্ঞানিক উপাত্ত দিয়েছে, তার সাপেক্ষেই নাসা ডব্লিউএএসপি-৯৬বি গ্রহের সঞ্চারণশীল বর্ণালি বা তরঙ্গ প্রকাশ করেছে।
নাসা জানিয়েছে, গত দুই দশকে হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীর সৌরমণ্ডলের বাইরে থাকা অসংখ্য গ্রহের বার্তাবরণ থেকে উপাত্ত নিয়ে নিরীক্ষা করে দেখেছে। এরই এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে ডব্লিউএএসপি-৯৬বি গ্রহে প্রথম পানির সন্ধান মিলেছিল।
এরপর জেমস ওয়েবের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পানি, মেঘ আর কুয়াশা থাকার প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
ওয়েবের উপাত্ত থেকে গবেষকরা ওই গ্রহে কী পরিমাণ জলকণা রয়েছে তা জানার চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে জানা যাবে গ্রহে কার্বন ও অক্সিজেনের উপস্থিতি ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা। এসব তথ্য থেকে জানা সম্ভব হবে কীভাবে, কখন এই গ্রহের জন্ম হয়েছিল।
সম্প্রতি এক হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের এক রঙিন ছবি প্রকাশ করে নাসা। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে এই ছবি ধারণ করা হয়। ছবিটি মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলোর একটি অংশকে ধারণ করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে এসএমএসিএস ০৭২৩।
ধারণা করা হচ্ছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে আগামী দিনে অনেক রহস্যময় অজানা তথ্য জানা যাবে। মহাকাশের বহু অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার সম্ভব হবে। এবং দূরবর্তী গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলের তথ্যও জানা যাবে।