Home খেলার চমক ছোটো ফরম্যাটের বড়ো আসর -আবু আবদুল্লাহ

ছোটো ফরম্যাটের বড়ো আসর -আবু আবদুল্লাহ

এশিয়া কাপ শেষ হতেই শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়ো আসর ‘ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি’, সাধারণের কাছে যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নামেই বেশি পরিচিত। বিশ্ব ক্রিকেটের সব বড়ো বড়ো দেশ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বিশ্বকাপ জিততে মাঠে নামবে। আবার এর কয়েকদিন পরেই শুরু হবে ফুটবল বিশ্বকাপ। তাই পরপর কয়েকটা মাস বিশ্বের ক্রীড়ামোদী মানুষরা মেতে থাকবে এসব নিয়েই।
অক্টোবরের ১৬ তারিখে মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ১৬ দেশের এই টুর্নামেন্টের এটি ৮ম আসর। খুব বেশি দিন হয়নি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আবির্ভাব হয়েছে; কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় এটিই এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট হয়ে উঠেছে। যে কারণে আইসিসিও নিয়মিত আয়োজন করে এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপ।

টি-টোয়েন্টির কথা
মজার ব্যাপার হলো, ক্রিকেটের এই সংস্করণটির ধারণা কোন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের মাথা থেকে আসেনি, এসেছে এক মার্কেটিং কর্মকর্তার কাছ থেকে। ওই কর্মকর্তার নাম স্টুয়ার্ট রবার্টসন। তিনি ছিলেন ইসিবির মার্কেটিং ম্যানেজার।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকের কথা। কাউন্টি ক্রিকেটে দর্শক না থাকায় স্পন্সর সঙ্কটে পড়ে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। দর্শক না থাকায় স্পন্সর করতে এগিয়ে আসে না কোনো কোম্পানি। এমন পরিস্থিতিতে ইসিবি তার মার্কেটিং বিভাগকে নির্দেশ দেয়- কীভাবে মাঠে দর্শক টানা যায় তার উপায় বের করতে। কারণ দর্শকরা খেলা দেখলেই স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে বিজ্ঞাপন দেবে।
২০০১ সালে ইসিবির মার্কেটিং বিভাগ একটি জরিপ করে। জরিপে দেখা গেল, বেশির ভাগ দর্শক মাঠে আসে না সময়ের অভাবে। ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিনগুলোতে ৮-৯ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে ওয়ানডে ম্যাচ মাঠে গিয়ে দেখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এটা দেখে স্টুয়ার্ট রবার্টসন বোর্ডকে প্রস্তাব দেন ২০ ওভারের ম্যাচ আয়োজনের। তার যুক্তি ছিল, অল্প সময়ে ম্যাচ শেষ করতে পারলে দর্শকরা মাঠে আসবে। কাউন্টি ক্লাবগুলোর সভায় বড়ো বড়ো কয়েকটি দল এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাস হয়। এরপর ইসিবি এই ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। নাম দেওয়া হয় টোয়েন্টি টোয়েন্টি, পরবর্তীতে যা হয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি।
২০০৩ সালের ১৩ জুন কাউন্টি টুর্নামেন্ট দিয়েই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে এই ক্রিকেট। ২০০৪ সালের ১৫ জুলাই লর্ডস স্টেডিয়ামে মিডলসেক্স ও সারের মধ্যকার একটি ম্যাচ দেখতে উপস্থিত হয় ২৭ হাজার ৫০০ দর্শক। ওই ম্যাচের পর ক্রিকেট কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন, দর্শকরা নতুন ধারার এই ক্রিকেটকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। কারণ এর আগের পঞ্চাশ বছরেও ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো ম্যাচে এত দর্শক হয়নি।
ইংল্যান্ডের সাফল্য দেখে অন্য দেশগুলোও আগ্রহী হয়। বিভিন্ন দেশে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। ২০০৫ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টিকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে গ্রহণ করে। এরপর দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে টি-টোয়েন্টির। দর্শকদের আগ্রহ দেখে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হয় এই ক্রিকেটে। যার ফলে আইসিসিও এই ক্রিকেটকে গুরুত্বের সাথে নেয়। ২০০৭ সালে আয়োজন করা হয় প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

অষ্টম আসর
এবারের আসরটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। এবার মোট খেলবে ১৬টি দল। প্রথম রাউন্ডে ৮টি দল খেলবে দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে। সেখান থেকে দুটি করে মোট চারটি দল যাবে দ্বিতীয় পর্বে। দ্বিতীয় পর্বের নাম সুপার টুয়েলভ। আইসিসি র‌্যাংকিং অনুযায়ী সেরা ৮টি দল সরাসরি খেলবে সুপার টুয়েলভ পর্বে।
সুপার টুয়েলভের ১২টি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। উভয় গ্রুপ থেকে সেরা দুটি করে দল যাবে সেমিফাইনালে। তারপর পাওয়া যাবে দুই ফাইনালিস্ট।
এবারের আসরটি বসছে অস্ট্রেলিয়ায়। অজিরা এই টুর্নামেন্টের গত আসরের চ্যাম্পিয়ন। তার ওপর স্বাগতিক। তাই তারাই আবারও শিরোপা ধরে রাখতে মাঠে নামবে। অস্ট্রেলিয়া সব সময়ই ভালো দল হিসেবে বিবেচিত হলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ একবারই জিতেছে। এবার থেকে পালা শিরোপার সংখ্যা বাড়ানোর। এই লেখা যখন লিখছি, তখন আইসিসির টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ছয় নম্বরে। তবে টি-টোয়েন্টি এমন এক ফরম্যাট যেখানে র‌্যাংকিং, রেকর্ড, কন্ডিশন সব কিছু উল্টে যেতে পারে যে কোনো সময়।
ভারত টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ের সেরা দল। দুইয়ে আছে ইংল্যান্ড, তিনে পাকিস্তান। ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান গতবারের সেমি ফাইনালিস্ট। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকেই সব ফরম্যাটে দুর্দান্ত খেলছে ইংল্যান্ড। দলে আছেন কয়েকজন পারফর্মার। বেন স্টোকস, জশ বাটলার, ডেভিড মালান, আদিল রশিদরা আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম এখন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। এ ছাড়া মোহাম্মাদ রিজওয়ান, শাদাব খান আর শাহিন আফ্রিদি আছেন ফর্মে। যে কারণে পাকিস্তানও টুর্নামেন্টে টপ ফেবারিট।
ভারত কিছুটা চিন্তায় আছে বিরাট কোহলির ফর্ম নিয়ে। তবে দলটির তরুণরা দারুণ খেলছেন। সেই সাথে আছেন অভিজ্ঞ রোহিত শর্মা। নিউজিল্যান্ডকেও পিছিয়ে রাখা যাবে না। গত বারের রানার্স আপ দলটিতে বড়ো তারকা না থাকলেও সবাই কমবেশি পারফর্ম করেন। তার ওপর অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন তাদের চির পরিচিত।
এবারে এশিয়ার দলগুলোর জন্য বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন। সিডনি, মেলবোর্ন কিংবা ব্রিসবেনের বাউন্সি পিচে পেস বোলাররা রাজত্ব করবেন। বাউন্স, সুইং আর ইয়র্কারের সামনে ব্যাটসম্যানরা কেমন করবেন সেটার ওপরই হয়তো নির্ভর করবে ম্যাচের ভাগ্য। যারা এসব সামলে খেলতে পারবেন তারা বড়ো স্কোর পাবেন তাতে সন্দেহ নেই। কারণ দ্রুতগতির পিচে রান ওঠে দ্রুত। সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৫০ এর বেশি রান ওঠে। ভালো ব্যাটিং হলে সেটা ১৮০-১৯০ উঠে যাবে।
শেষ পর্যন্ত কার হাতে শিরোপা উঠবে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে নভেম্বরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত। তবে দুর্দান্ত লড়াই হবে সেটা আশা করাই যায়।

SHARE

Leave a Reply