হঠাৎ বাসার কারেন্ট চলে গেছে। দুপুরের কাঠ পোড়া রৌদ্রে কারেন্ট যাওয়া মানে মৃত্যুর প্রহর গোনা। প্রচণ্ড গরমে কার শরীর সুস্থ থাকে? ঘামের পুকুরে যেন সবাই হাবুডুবু খাচ্ছে। উফ! মাথা নষ্ট! এত কঠিন গরমে কোনো বেচারার বেঁচে থাকার ইচ্ছা আছে?
পাশের বাসার তাকিয়া ও তার আম্মু তাই্যয়েবার বাসায় চলে এলো। কারণ, তাই্যয়েবাদের বাসাটা তাকিয়াদের বাসা থেকে অনেক ঠান্ডা। তীব্র গরমের তাপে এখানে কিছুটা হলেও শীতল অনুুভব পাওয়া যাবে।
দুই ঘরের লোকজন যখন একত্রে হয় তখন গরম সহজেই পালিয়ে যায়। গল্প-আড্ডার কোনো ইতি নেই। দুই প্রতিবেশী বান্ধবী এবং দুই বান্ধবীর দুই মায়ের জমজমাট আলাপ আলোচনা। যতক্ষণ পর্যন্ত কারেন্ট না আসবে ততক্ষণই এদের ফুর্তির সীমানা।
– ভাবী! প্রচণ্ড অগ্নি বেলায় কি আইসক্রিম খাবেন?
– না থাক, এত কষ্ট আপনার করা লাগবে না। অন্য কোনোদিন হবে, আজকে থাক!
– আরে ভাবী কী বলছেন! আমার বাসায় আসছেন, আমি কি এভাবেই আপনাদেরকে ছেড়ে দেবো! কিছু না কিছু মুখে দিয়েই যেতে হবে।
অন্য রুমে তাই্যয়েবা তাকিয়াকেও একইভাবে জোর করছে-
– কী করে ম্যাডাম! আমার বাসায় আসছিস আমি কি তোরে এভাবেই ছেড়ে দেবো!
– বুঝলাম না।
– বলছিলাম আমাদের বাসায় তোদেরকে কিছু না খাইয়ে ছাড়ছি না।
– আজকে থাক, অন্য কোনো দিন হবে। আজকে এই কঠিন গরমে এত প্যারা নিও না।
– আজব তো! প্যারা কেন? কাছের লোকদেরকে নিয়ে আমাদের কোনো প্যারা নেই।
তাই্যয়েবা তার আম্মুর কাছে এসে আইসক্রিম খাওয়ানোর কথা জানায়, তিনিও তাকে একই কথা জানান। ছোটো ভাই যায়েদকে ডাক দিলো। যায়েদ তখন একা বসে বসে মক্কা ও মদিনা শরিফের ড্রইং করছিল। যখন তাকে বললো আমরা আজকে প্রতিবেশী আপু-খালাদের নিয়ে আইসক্রিম খাবো তখন যায়েদ খুশিতে ব্যাকুল। ‘টাকা দাও আমিই এনে দিচ্ছি’।
তাই্যয়েবার আম্মু ভেতরের কামরায় গেল টাকা বের করতে। আলমারির সিন্দুক থেকে টাকা ঠিকই বের হলো। কিন্তু অল্প টাকা বের হয়েছে। ঘরে যা ছিল সব শেষ। মাস ফুরানো দিনে কার ঘরে পরিপূর্ণ টাকা থাকে? তাই্যয়েবার আব্বু সামনের সপ্তাহে মাসিক বেতন পাবে। এ টাকা দিয়ে শুধু তিনজনের আইসক্রিম কেনা যাবে।
তাকিয়ারা পাশের রুমে আছে এসব বিষয়ে কিছুই জানে না তারা। যদি জেনে ফেলে তাহলে আইসক্রিম আর খাওয়ানো যাবে না। তাকিয়ারা আজকে না খেয়ে চলে যাবে।
তাই্যয়েবা একটা বুদ্ধি পাকালো। ওর আম্মুকে জানিয়ে দিলো সমস্যা নেই যা টাকা আছে তা দিয়েই আজকে হয়ে যাবে। কারণ জিজ্ঞাসা করার পর মাথায় পাকানো বুদ্ধির কথা জানালো। তার প্লানটা ছিল- যে দামের আইসক্রিম কেনার উদ্দেশ্য ছিল সেটা দুই পিস তাকিয়া ও খালার জন্য কিনে বাকি টাকা দিয়ে একই রকম দেখতে কম দামের আইসক্রিম কিনলেই হয়ে যাবে।
আপুর আদেশ মতে ছোটো ভাই যায়েদ বাজার থেকে আইসক্রিম কিনে আনলো। তাকিয়া এবং তার আম্মুকে দামি আইসক্রিম দিয়ে বাকি কম দামের গুলো তাই্যয়েবারা নিলো। কম দাম হওয়ার কারণে স্বাদ মোটেও ভালো ছিল না, তবুও তারা হাসিমুখে গ্রহণ করলো। প্রতিবেশী তাকিয়াদের সামান্যও বুঝতে দেয়নি।