Home স্বাস্থ্য কথা টাইফয়েড জ্বর পরিচিত এক জটিল রোগের নাম -ডা. এহসানুল কবীর

টাইফয়েড জ্বর পরিচিত এক জটিল রোগের নাম -ডা. এহসানুল কবীর

এটা একটা বিশেষ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি জ্বর। অবশ্য সাথে কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গও থাকে। মূলত টাইফয়েড জ্বরে শরীরের প্রধান অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এটা খুবই মারাত্মক একটি রোগের নাম।
টাইফয়েড ফিভারকে আবার এন্টেরিক ফিভার বা সান্নিপাতিক জ্বর অথবা নাড়ির জ্বরও বলা হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর হিসাব মতে এ রোগে প্রতি বছর এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে আবার ৬ লাখ রোগীর মৃত্যু ঘটে।

টাইফয়েড কীভাবে ছড়ায়?
মূলত এটি খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। তাই এ দু’টি বাহকের মাধ্যমে রোগটা ছড়ায়। বিশেষ করে কিশোর বয়সে বাইরের ভেজাল খাবার বা পানীয় ইত্যাদি খাওয়ার প্রতি ঝোঁক প্রবল থাকার কারণে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় বেশি। বলাবাহুল্য বাজারের আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস, জুস ইত্যাদি পানীয় দ্বারা বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আর টাইফয়েড জীবাণু এ জাতীয় খাবার ও পানীয়ের ভেতরে বেশি মিশতে পারে এবং বংশবিস্তার করতে পারে। আবার খাবারের মধ্যে, যেমন- মাছ, ভাত, গোশত, সবজি, দুধ ইত্যাদির মাধ্যমে টাইফয়েডের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে যদি তা সঠিকভাবে পরিষ্কার ও রান্না করা না হয়।

লক্ষণসমূহ
– প্রথমে জ্বর দিয়েই এ রোগের সূত্রপাত ঘটে। তবে এই জ্বরের বিশেষ একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেটা হলো জ্বরের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে এবং দিনকে দিন তা ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। এই জ্বর ১০ থেকে ১৫ দিন বা তার বেশি স্থায়ী হয়।
– এছাড়া মাথা, গলা, পেট ও মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। অত্যধিক ক্ষুধামন্দা এবং ওজন কমে যায়।
– কখনো শরীর অবসন্ন, অনিদ্রা, কাজে কামে অনীহা দেখা দেয়। এছাড়া অস্থিরতা ও অস্বাভাবিক আচরণও লক্ষ করা যেতে পারে।
– কারো ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডাইরিয়া পর্যায়ক্রমিকভাবে হতে দেখা যায়, সাথে বমিও।
– জিহবার ওপর সাদা আস্তরণ পড়তে দেখা যায় এবং জিহ্বার আগা গাঢ় লালচে রঙের হয়ে যেতে পারে।
– পেটের মধ্যে শক্ত চাকা চাকা অনুভব করা অর্থাৎ প্লিহা বড়ো হতে পারে। এটা অবশ্য রোগের জটিলতাকে নির্দেশ করে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
টাইফয়েড জ্বর শনাক্ত করার জন্য প্রধানত লক্ষণগুলোই যথেষ্ট। তবে রক্তের কালচার ও বিডাল টেস্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা চিকিৎসকগণ অবস্থা বুঝে করিয়ে থাকেন।

চিকিৎসা
রোগ শনাক্ত হয়ে গেলে টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা কঠিন কিছু নয়। যেমন-

১. সযত্ন পরিচর্যা: পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল অর্থাৎ যতদিন পর্যন্ত জ্বর থাকবে ততদিন চলবে। ডাইরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা লাগতে পারে। এছাড়া এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি বা লিকুইড পান করা ও বিশ্রামে থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়। তবে অবস্থা বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করাও লাগতে পারে।
২. সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা: চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত যথোপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ।

টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায় কী?
– ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ।
– রোগীকে আলাদা রাখা। কেননা এ রোগীর মল-মূত্রে অনেকদিন পর্যন্ত টাইফয়েডের জীবাণু থাকতে পারে। তাই তার জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকাও উচিত।
– বাজারে টাইফয়েডের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, সেটা নেওয়া যেতে পারে যা ৭০% পর্যন্ত কার্যকর।
– নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পরীক্ষা করানো।

মনে রাখতে হবে যে, সামান্য অবহেলায় অনেক বড়ো বিপদ অর্থাৎ মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে এ রোগের ক্ষেত্রে। তাই জটিল আকার ধারণ করার পূর্বেই সুচিকিৎসার প্রতি নজর দেওয়া উচিত।

SHARE

Leave a Reply