শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসেবে গণ্য হবে এবং সরকার অভিযুক্ত শিশুর কল্যাণার্থে ও তাকে সহায়তার লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলা, উপজেলা এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় এক বা একাধিক প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন।
কোন এলাকায় প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ না করা পর্যন্ত সরকার, প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য, সমাজসেবা অধিদফতরে এবং এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সমাজসেবা কর্মকর্তা বা সমমানের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব অর্পণ করবেন।
প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য
প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে নিম্নরূপ, যথা:
ক) আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু বা আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে থানায় আনয়ন করা হলে অথবা অন্য কোনভাবে থানায় আগত হলে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে,-
অ) আনয়ন বা আগমনের কারণ অবগত হওয়া;
আ) সংশ্লিষ্ট শিশুর সাথে সাক্ষাৎ করা এবং সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করা;
ই) সংশ্লিষ্ট অভিযোগ বা মামলা চিহ্নিত করতে পুলিশের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা;
ঈ) সংশ্লিষ্ট শিশুর মাতা-পিতার সন্ধান করা এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পুলিশকে সহায়তা করা;
উ) শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে শিশুর জামিনের সম্ভাব্যতা যাচাই বা, ক্ষেত্রমত, তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট মামলার প্রেক্ষাপট মূল্যায়নপূর্বক বিকল্প পন্থা গ্রহণ করা;
ঊ) বিকল্প পন্থা অবলম্বন বা যুক্তিসঙ্গত কোন কারণে জামিনে মুক্তি প্রদান করা সম্ভবপর না হলে আদালতে প্রথম হাজিরার পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিশুকে, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে, নিরাপদ স্থানে প্রেরণের ব্যবস্থা করা; এবং
ঋ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা;
খ) আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু বা আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুকে শিশু-আদালতে উপস্থিত করা হলে-
অ) আদালতে অবস্থান বা বিচারকালীন আদালতে উপস্থিত থাকা এবং যখনই প্রয়োজন হবে, সংশ্লিষ্ট শিশুকে, যতদূর সম্ভব, সঙ্গ প্রদান করা;
আ) সরেজমিনে অনুসন্ধানপূর্বক সংশ্লিষ্ট শিশু ও তার পারিপাশির্^ক অবস্থা বিবেচনাক্রমে, সামাজিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং আদালতে দাখিল করা;
ই) শিশুকে, প্রয়োজনে, জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রদানসহ শিশুর পক্ষে আইনগত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা;
ঈ) শিশুর জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবার নিমিত্ত, উপ-দফা (ই) এর উদ্দেশ্যকে ক্ষুণœ না করে, প্রয়োজনে, বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা এবং শিশুর পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি নিশ্চিত করা; এবং
উ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা;
গ) আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা কোন প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হলে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে,-
অ) প্রত্যেক শিশুর জন্য পৃথক নথি প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা;
আ) ধারা ৮৪তে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ ও যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত করা;
ই) নিয়মিত বিরতিতে শিশুর সাথে সাক্ষাৎ করা বা শিশুর ইচ্ছা অনুযায়ী তার যাচিত সময়ে তাকে সাক্ষাৎ প্রদান করা;
ঈ) মাতা-পিতা, বর্ধিত পরিবার বা আইনগত বা বৈধ অভিভাবক সংশ্লিষ্ট শিশুর তত্ত্বাবধানের শর্তাবলি সঠিকভাবে পালন করছেন কি না তা, যতদূর সম্ভব, পর্যবেক্ষণ বা মনিটর করা;
উ) শিশুর আনুষ্ঠানিক ও কারিগরি শিক্ষা সঠিকভাবে প্রদত্ত হচ্ছে কি না তা সরেজমিনে তদারিক করা;
ঊ) নিয়মিত বিরতিতে, শিশুর আচরণ এবং শিশুর জন্য গৃহীত ব্যবস্থার যথার্থতা সম্পর্কে, আদালতকে অবহিত করা এবং আদালত কর্তৃক তলবকৃত প্রতিবেদন দাখিল করা;
ঋ) শিশুকে সৎ উপদেশ প্রদান করা, যথা সম্ভব বন্ধুভাবাপন্ন করে তোলা এবং এতদুদ্দেশ্যে তাকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা ; এবং
এ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা;
ঘ) আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু বা আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুর ক্ষেত্রে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, –
অ) বিকল্প পন্থা বা বিকল্প পরিচর্যার শর্তাবলি পর্যবেক্ষণ করা এবং
আ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা।
শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য
শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে নিম্নরূপ, যথা:
(ক) শিশুবিষয়ক মামলার জন্য পৃথক নথি ও রেজিস্টার সংরক্ষণ করা;
(খ) কোন শিশু থানায় আসলে বা শিশুকে থানায় আনয়ন করা হলে-
– প্রবেশন কর্মকর্তাকে অবহিত করা;
– শিশুর মাতা-পিতা এবং তাদের উভয়ের অবর্তমানে শিশুর তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্যকে অবহিত করা এবং বিস্তারিত তথ্যসহ আদালতে হাজির করার তারিখ জ্ঞাত করা;
– তাৎক্ষণিক মানসিক পরিষেবা প্রদান করা;
– প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে, ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রেরণ করা;
– শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণ করবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
গ) সঠিকভাবে শিশুর বয়স নির্ধারণ করা হচ্ছে কি না বা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ বা এতদ্বিষয়ে লক্ষ্য রাখা;
ঘ) প্রবেশন কর্মকর্তার সাথে যৌথভাবে শিশুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মূল্যায়ন পূর্বক বিকল্প পন্থা অবলম্বন এবং সম্ভাব্যতা যাচাই পূর্বক জামিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
ঙ) বিকল্প পন্থা অবলম্বন বা কোন কারণে জামিনে মুক্তি প্রদান করা সম্ভবপর না হলে আদালতে প্রথম হাজিরার পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিশুকে নিরাপদ স্থানে প্রেরণের ব্যবস্থা করা;
চ) প্রতি মাসে শিশুদের মামলার সকল তথ্য প্রতিবেদন আকারে থানা হতে নির্ধারিত ছকে প্রবেশন কর্মকর্তার নিকট এবং পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টের কার্যালয়ের মাধ্যমে পুলিশ সদর দফতর ও ক্ষেত্রমত, জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির নিকট প্রেরণ করা;
ছ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা; এবং
জ) উপরি-উক্ত কার্যাবলি সম্পাদনের প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আইনের সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে দুঃখজনকভাবে লক্ষ করা যায় যে, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে আনার পরে অভিযুক্ত শিশু-কিশোরের প্রতি মারমুখী ও নিপীড়নমূলক আচরণ করা হয় যা অনুচিত।
মনে রাখা প্রয়োজন যে, ওদেরকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। এটি তাদের অধিকার। একটি শিশু বা কিশোরের অপরাধী হওয়ার পেছনে নানাবিধ কারণ জড়িত থাকে। এ বয়সে তারা স্বভাবগত কারণেই ভাবাবেগে তাড়িত হয় এবং অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে অপরাধ করে বসে।
এক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়কে অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সংশোধনের অপার সুযোগ পেলে তারাই একদিন জাতির সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।