Home প্রচ্ছদ রচনা পর্যটনের অনন্য সুন্দর ভূমি বাংলাদেশ হারুন ইবনে শাহাদাত

পর্যটনের অনন্য সুন্দর ভূমি বাংলাদেশ হারুন ইবনে শাহাদাত

ঘুরতে কার না ভালো লাগে! নতুন নতুন দর্শনীয় স্থানের সাথে পরিচতি হওয়ার ভাবনা প্রতিটি কিশোর মনেই লুকিয়ে থাকে। শুধু কিশোর বলবো কেন? শিশু, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ প্রতিটি মানুষেরই আছে অজানাকে জানার তীব্র ইচ্ছে। তারপরও কিশোরদের কথা বিশেষভাবে বলার কারণ, কিশোর মনের ভাবনার সাথে আর কারো তুলনা চলে না। তাদের দুরন্ত সাহসের সাথে পাল্লা দেওয়ার সাধ্য কি আর অন্য কারো আছে? তাই তো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিশোর মনের এই ইচ্ছে তুলে ধরেছেন এভাবে- ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে/ কেমন করে ঘুরছে মানুষ, যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে।/ দেশ হতে দেশ দেশান্তরে, ছুটছে তারা কেমন করে’…। আমাদের জাতীয় কবি তোমাদের এমন অনেক ইচ্ছার কথাই তুলে ধরেছেন কিশোরদের বহুল পঠিত সংকল্প কবিতায়।

তবে হ্যাঁ, দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোর আগে আমাদের নিজের দেশটাকে চেনা এবং জানা দরকার। সব দেশের মানুষই চায় তাদের দেশটা কত সুন্দর তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে। তাই তারা পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানায় নিজ নিজ দেশে। তাদের সামনে তুলে ধরে তাদের দেশের দর্শনীয় স্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিশেষ খাবার-দাবারসহ গর্বের সকল কিছু। এর মাধ্যমে পর্যটকরা যেমন আনন্দ পায় তেমনি সমৃদ্ধ হয় তাদের জ্ঞানের ভান্ডার। যে দেশে তারা ভ্রমণ করে তাদের অর্থনীতিও হয় সমৃদ্ধ। পরস্পরের দেখা-সাক্ষাতের ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় সম্পর্কের এক সুদৃঢ় সেতুবন্ধন। গোটা পৃথিবীর মানুষ যে একই পরিবারভুক্ত এবং তারা সবাই বাবা হযরত আদম আ. ও মা হাওয়া আ.-এর সন্তান এই সত্য তারা বুঝতে পারে। এভাবেই পর্যটন মানুষের আত্মিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের অর্থনৈতিক বিকাশেও রাখে অনেক অবদান। এ লক্ষ্যেই প্রতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব পর্যটন দিবস।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়। আমাদের দেশে যেমন আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঠিক তেমনি আছে ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক শিকড় সন্ধানী সূত্রের মূল্যবান স্মৃতি চিহ্ন। যেমন : পাহাড়পুর, ময়নামতির বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার, উয়ারী বটেশ্বরের প্রাচীন নগর, বাগেরহাটে হযরত খান জাহান আলীর ষাট গম্ভুজ মসজিদ, সোনারগাঁর প্রাচীন রাজধানী, দেশের বিভিন্ন জেলায় হযরত শাহজালাল র. শাহ মাখদুম র. আদম শহীদ, আদম শাহ কাশ্মীরী, শাহ সুলতান, বায়জীদ বোস্তামীসহ হাজারও সুফি দরবেশের মানবপ্রেম আর সংগ্রামী ঐতিহ্যের ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়। মহান আল্লাহর দান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সাগর সৈকত কক্সবাজার, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনসহ আরও অনেক স্থান। যেগুলো দেখে সত্যি তোমার মন বলে উঠবে- ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।’

এসো তাহলে একটু ঘুরি আসি তোমাদের নয়ন জুড়ানো কয়েকটি পর্যটন স্পট থেকে-

সুন্দরবন
কী ব্যাপার, সুন্দরবনের নাম শুনেই গা ছম্ ছম্ করছে কেন? শরীরের লোমগুলো সব কাটা দিয়ে উঠছে। তোমরা না বললেও বুঝতে পেরেছি। সুন্দরবন কথাটি শোনার সাথে সাথেই তোমাদের মনে পড়ছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা। হ্যাঁ, এই বনের সাথে জড়িয়ে আছে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই ভয়ংকর প্রাণিটির নাম। এই প্রজাতির বাঘ বলতে পারো এ বনের নিজস্ব সম্পদ। কারণ এই বন ছাড়া আর কোথাও এ বাঘ খুব একটা দেখা যায় না। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু দেখা যায়- নেপাল, ভারত, মিয়ানমার ও তিব্বতের জঙ্গলে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের অনন্য ভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে আরও আছে সারি সারি সুন্দরী, গেওয়া, গরান, গোলপাতাসহ প্রভৃতি গাছ। এটা পৃথিবীর বড়ো ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবণাক্ত জলাভূমির বন। এই বনের গাছে গাছে মৌমাছিরা চাক তৈরি করে। সেখান থেকে প্রচুর উন্নতমানের মধু সংগ্রহ করা হয়। বনের মাঝ নিয়ে বইয়ে যাওয়া নদীতে আছে নানান জাতের মাছ। গাছে গাছে আছে রঙ-বেরঙের পাখি। আরও আছে দুষ্ট বানর। বনের কাঠ, মধু, গোলপাতা সংগ্রহ করে এবং বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে যখন ঘূর্ণিঝড় হয়, এই বনের গাছগুলোই সেই প্রচণ্ড ঝড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাতাসের গতি কমিয়ে দেয়। তাই আমাদের দেশের উপকূলে ক্ষয়-ক্ষতি অনেক কম হয়। এজন্য এই বনকে আল্লাহর দেওয়া ঢালও বলা হয়।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। আমাদের দেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণে এবং কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। এখানে আছে সারি সারি নারকেল গাছ। এজন্যই স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। সাগরের নোলা পানির বুকের এই দ্বীপের গাছে মিষ্টি পানিতে ভরা কচি নারকেল বা ডাব সত্যি আল্লাহর সৃষ্টি রহস্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। এখানে আরও পাবে সাগরের টাটকা মাছের স্বাদ।

কক্সবাজার
পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্র। রয়েছে নীল জলরাশির গর্জন। এখানে বিখ্যাত ইনানি বিচ। অপরূপ সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে হিমছড়ি পাহাড়। সাগরের পাড়ে এমন পাহাড়ের মিতালি আর হিমছড়ির চঞ্চল ঝরনা কী যে সুন্দর তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন! আছে সাগরের জোয়ার ভাটার খেলা। জোয়ারের পর রূপালি বালির ওপর রঙ-বেরঙের শামুক-ঝিনুক ছড়িয়ে থাকে। কক্সবাজার সাগরসৈকত থেকে কয়েক পা বাড়ালেই মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরী। যা পর্যটন এলাকা হিসেবে কক্সবাজারের আকর্ষণ কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। এখাকার শুটকি মাছ, বার্মিজ মার্কেটের আকর্ষণীয় প্রসাধনী চন্দন কাঠের গুড়া আর হাতে বানানো নানান রঙের পোশাক তোমাদের মন কাড়বেই। কক্সবাজারে আরও আছে ডুলোহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক। এখানে আসলে দেখতে পাবে প্রায় চারশত বিভিন্ন রকম প্রাণি। যেমন : বাঘ, সিংহ, হাতি, ভালুক, গয়াল, কুমির, জলহস্তী, মায়া হরিণ, সম্বর হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ প্রভৃতি। এই পার্কে স্বাদুপানির কুমির যেমন আছে, তেমনি আছে লোনা পানির কুমির। এখানে আরও আছে একটি বড়ো অকির্ড হাউজ এবং ন্যাশনাল হিস্টোরি জাদুঘর।

কুয়াকাটা
এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা ‘সাগর কন্যা’ হিসেবে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত।

গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
কাছে থেকে সিংহ মামাকে দেখতে চাও? তাহলে চলে যাও গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। ‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মায়ের কোলে’- এখানে আসলে সত্যি তা উপলব্ধি করতে পারবে। এই পার্কে বন্য পরিবেশে বন্য প্রাণীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করে। তোমরা পার্কের গাড়িতে চড়ে বেষ্টনীর ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পারবে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, চিত্রা হরিণ, সাম্বার ও গয়াল, হাতি, জলহস্তী, নীল গাই, বারো সিংগা, বন্য মোষ। এই বনের কোর সাফারি পার্ক অঞ্চলে আছে আফ্রিকান সাফারি পার্ক। এখানে রয়েছে আফ্রিকান বন্যপ্রাণীর বিশাল সংগ্রহ। বিশাল দেহ আর লম্বা গলার জিরাফ তোমাদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য সদা প্রস্তুত। এখানে আরও বিচরণ করে বন্যপ্রাণী জেব্রা। শুধু বন্যপরিবেশে বন্যপ্রাণীদের দেখাই পাবে না, পরিচিত হতে পারবে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথেও। পার্কের প্রথমেই অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। জীববিজ্ঞানের নানা তথ্য ও গবেষণার জন্য রয়েছে ন্যাচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে প্রায় দুই হাজার প্রজাতির মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহাবশেষ, স্পেসিমেন ও স্টাফিং সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। সাফারি পার্কে বিচরণরত বন্য পশুপাখির পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য আছে আটটি জলধারা ও দুটি কৃত্রিম হ্রদ। যেখানে বিভিন্ন জাতের দেশি বিদেশি বুনো হাঁসের ওড়াউড়িসহ নানা রকম জলকেলি তোমাদের মন ভরিয়ে দেবে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক বা সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত।

সাজেক ভ্যালি
হাত দিয়ে মেঘ ধরতে চাইলে তোমাকে যেতে হবে সাজেক ভ্যালি। সাজেক উপত্যকা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থল। সবুজে ঘেরা পাহাড় চূড়ায় মেঘের লুকোচুরির মধ্যে সাজেক ভ্যালির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে তোমাদের মন ভরে যাবে। সাজেকের রুইলই পাড়া থেকে আড়াই ঘণ্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারবে সুন্দর কমলক ঝর্ণা। সাজেকের শেষ প্রান্তে গ্রামের নাম কংলক পাড়া। এখানে লসুই জনগোষ্ঠী বসবাস করে। কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। আর এই লুসাই পাহাড় থেকেই র্কুফুলী নদীর উৎপত্তি।

সিলেটের চা বাগান ও
জাফলং ঝরনা
সিলেটের খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ ভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। সীমান্তের ওপারের পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম-ধারায় প্রবহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল-পানি, উঁচু পাহাড়ের গহিন অরণ্য ও সুনসান নীরবতা পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। এছাড়া সারিবদ্ধ চা বাগান, চারদিকে সবুজের সমারোহ, উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলা, গহীন অরণ্য আর ঝরনাধারা দেখতে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসেন সিলেটে। এখানে আছে লালাখাল, খাসিয়াপুঞ্জি, রাতারগুল, লোভাছড়া, পানতুমাই, বিছনাকান্দি।

পানির রাজ্য রাতারগুল
সিলেটের গোয়াইনঘাটে আসলে দেখতে পাবে পানির মাঝে এক বিশাল হিজল বন। এই বনে চোখে পড়বে লম্বা লম্বা জুটের বট ও মুর্তা গাছ। বড়ই অদ্ভুত এই রাজ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোটো যেগুলো, সেগুলোর আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবে আছে পানিতে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা।

নাফাখুম
বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বান্দরবান জেলা। ভ্রমণপিয়াসী মানুষদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে এর অবস্থান। বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের উপজেলার নাম থানচি। এই উপজেলার একটি এলাকার নাম রেমাক্রি। রেমাক্রির পাহাড়ি নদীর ধার দিয়ে পায়ে হেঁটে ঘণ্টা দুয়েক সামনে গেলেই পাওয়া যাবে বিস্ময়কর সৌন্দর্যের নাফাখুম জলপ্রপাত।

ভাওয়ালগড়ের ন্যাশনাল পার্ক
গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত ভাওয়ালগড়ের ন্যাশনাল পার্ক। দেশের অন্যতম বৃহৎ উদ্যান। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের আদলে অভয়ারণ্যের ছাঁচে, আরন্যিক পরিবেশরক্ষণ এবং মানুষ ও পরিবেশের নিবিড় সম্পর্কের কথা বিবেচনা করেই ভাওয়াল শাল অরণ্যে এই উদ্যান গড়ে তোলে। এখানে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে।

গজনী অবকাশ কেন্দ্র
গজনী অবকাশ কেন্দ্র শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে গজনী অবকাশ কেন্দ্রের গজারী, শাল ও সেগুন গাছের সারি প্রশান্তি এনে দেয়। শীতকালে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ এখানে ছুটে আসেন। পাহাড়ী ঝরনা, লেক, টিলা, ছড়ার স্বচ্ছ জল ও ঘন সবুজ বন এখানকার পরিবেশকে দিয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পাহাড়ী ঝরনার গতিপথে বাধ দিয়ে কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়েছে। লেকের মাঝে সৃষ্টি করা হয়েছে কৃত্রিম পাহাড় ও লেক ভিউ পেন্টাগন, যা একটি দোদ্দুল্যমান ব্রীজ দিয়ে সংযুক্ত আছে।

নিঝুম দ্বীপ
নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। এটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার পুরো দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে।

টাঙ্গুয়ার হাওর
টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরা (ঝরনা) এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড়ো জলাভূমি।

চলন বিল
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো বিল হলো চলন বিল। এই বিল উত্তর বঙ্গের নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার মধ্যে আবস্থিত। চলন বিলের গঠন ঐতিহাসিকভাবেই আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলন বিলের প্রধান যোগান দানকারী প্রণালী যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার পানি নিষ্কাশন করত। বড়াল চলন বিল থেকে পানি নির্গম পথ হিসেবে কাজ করে এবং বিলের পানি বহন করে যমুনা নদীতে ফেলে। চলন বিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- করতোয়া, আত্রাই, গুড়, বড়াল, মরা বড়াল, তুলসী, ভাদাই, চিকনাই, বরোনজা, তেলকুপি ইত্যাদি। কিন্তু ভীষণ দুঃখের বিষয় বর্তমানে এই চলন বিল দ্রূত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর গঙ্গা থেকে পলি এসে পড়ার কারণে বিগত দেড়শ বছরে বিলটি দক্ষিণ দিক থেকে অন্ততপক্ষে ১৯.৩২ কিলোমিটার সরে এসেছে। বিলটির পানি নিষ্কাশন প্রণালী এবং পলির বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখার জন্য গণপূর্ত বিভাগ ১৯০৯ সালে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে, চলন বিল তার পূর্বেকার আয়তন ১,০৮৫ বর্গ কি.মি থেকে সংকুচিত হয়ে ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। চলন বিলে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চিতল, কৈ, মাগুর, শিং, টাকি, বোয়াল, শোল, ফলই, মৃগেল, চিংড়ি, টেংরা, মৌসি, কালিবাউশ, রিটা, গজার, বৌ, সরপুটি, তিতপুটি, পুঁটি, গুজা, গাগর, বাঘাইর কাঁটা প্রভৃতি জাতের মাছ।

ছোটো একটি নিবন্ধে আমাদের প্রিয় জন্মভূমির সব পর্যটন স্পট তুলে ধরা সম্ভব নয়। অন্য দিন সুযোগ পেলে আবার আসবো তোমাদের সাথে এই কথামালার মিতালী নিয়ে। তবে হ্যাঁ, সারা বিশ্বব্যাপী চলছে করোনা মহামারি, তাই সাবধান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের আইন-শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বের হতে হবে বন্ধ ঘর থেকে, এ কথা কিন্তু সব সময় মনে রাখবে।

SHARE

Leave a Reply