শিশু। মহান মাবুদের এ যে এক শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। এসব নিয়ামতের মধ্যে সুসন্তান অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছেন।’ (সূরা—নাহল,আয়াত:৭২)। শিশু মানবজাতির অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিশুরা মাসুম, বেগুনাহ। শিশু—কিশোরদের মন খুবই সরল, কোমল ও পবিত্র। তারা পবিত্রতার প্রতীক। পবিত্র কোরআনে শিশু শব্দের সমার্থক আরবি চারটি শব্দ মোট ৭৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) শিশুদের কোলে নিতেন এবং আদর করতেন। একবার এক সাহাবির সন্তানকে কোলে নিলে শিশুটি তাঁর কোলে প্রস্রাব করে দেয়। এতে তিনি কোন বিরক্ত হননি বা বিরক্তি প্রকাশও করেননি। আমাদের রাসূল (সা.) আরো বলেছেন ‘যে ছোটদের বা শিশুদের স্নেহ করে না, সে আমার উম্মত বা দলভুক্ত নয়।’ (আবুদাউদ ও তিরমিজি)।
শিশুদের কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করে তাদের সঙ্গে সব সময় ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দানের কথা উল্লেখ করে নবী করিম (সা.) বলেন ‘তোমরা শিশুসন্তানদের স্নেহ করো, তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো এবং সদাচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ (তিরমিজি) রাসূলুল্লাহ (সা.) মানবসন্তানকে সুশিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে আরো বলেছেন, ‘সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান—খয়রাতের চেয়েও উত্তম।’ শিশুদের উত্তম ও যুগোপযোগী শিক্ষাদানের জন্য তিনি নির্দেশ প্রদান করে বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞানদান করো। কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’(মুসলিম) শিশুরাই ফুল, শিশুরাই ভোরবিহানের পাখি। তাই বলা যায় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এই শিশুর কারণেই এত সুন্দর। যার ঘরে কোন শিশু নেই সেই ঘর যেন ঘর নয়, জীবন্ত এক কবর। পরিপূর্ণ সুখ বা আনন্দ এ ঘরকে আলোকিত করতে পারে না। সারাক্ষণ এ ঘরকে একটি বিরান বধ্যভূমির মতো মনে হয়। পরিবারে সুখ—শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে একটি শিশুর অবদান অনস্বীকার্য। মা—বাবার কর্মজীবনের শত ব্যবস্থা এবং দুঃখ বেদনা মুহূর্তে ম্লান হয়ে যায় তার নিষ্পাপ শিশু বা সন্তানের দিকে তাকালে। সন্তানের মিষ্টি হাসি আর আধো বোল মুহূর্তে মা—বাবার মনে আনন্দের ঢেউ তোলে।পরম মমতায় মায়ের অঁাচলে সন্তানের বেড়ে উঠার মাঝে স্বর্গীয় সুখ অনুভূত হয়। শিশু, পাখি, ফুল এ তিনটিই যেন একে অপরের পরিপূরক। শিশু আছে বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর এতো মধুময়।সুতরাং তোমরা যারা শিশু, তোমরা মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।মা—বাবার আদরের ধন। তোমাদের জন্যই পৃথিবীর আলো—বাতাস হাসি—খুশি ও আনন্দে ভরপুর।
শিশু কারা?
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯ এবং শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু বলা হয়। সে হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগই শিশু। তবে আমাদের দেশে বিভিন্ন আইনে শিশুর বয়সসীমা বিভিন্নভাবে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় শিশুনীতিতে শুধু ১৪ বছরের কম বয়সীদের শিশু ধরা হয়েছে। আবার বাংলাদেশের অনেক শিশু ১৬ বছরের আওতায় অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশে প্রচলিত কিছু আইনে ১৫ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পথশিশু কাদের বলা হয়?
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ২০১১ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ বছরের নিচে যেসব শিশু রাস্তায় দিনাতিপাত করে, রাস্তায় কাজ করে, রাস্তায় ঘুমায়, যাদের নির্দিষ্ট কোনো আবাসস্থল নেই, প্রতিদিনের জীবনযাপন রাস্তাকে কেন্দ্র করে, তারাই পথশিশু। অর্থাৎ যাদের উল্লেখ করার মতো নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই যেমন খোলা আকাশের নিচ, পার্ক, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ফেরিঘাট লঞ্চটার্মিনালবাসস্টেশন শহরের অলি—গলিতে যাদের বাস, তারাই মূলত পথশিশু। অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের নিচে যেসব শিশু জীবিকা বা অন্য কোনো দিনে বা রাতে রাস্তায় একা বা পরিবারের সঙ্গে বাস করে, তাদেরকেও পথশিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের সমাজে এদের পথকলি, টোকাই কিংবা পথশিশু যে নামেই ডাকা হোক না কেন এরা যে এ দেশেরই সুবিধাবঞ্চিত কোন এক মায়ের রক্তের ধন তা অবশ্যই ভুলে গেলে চলবেনা। সুতরাং এদের অবহেলায় রেখে একটি সভ্য সমাজ গঠন করা কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। তাই পথশিশু বলতে আমরা আলাদা কিছু মনে করি না। আমরা মনে করি তাদের সুখ—দুঃখ,আনন্দ—বেদনা দেখভাল করা রাষ্ট্র তথা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য।
পথশিশুদের জীবনযাত্রা ও বেড়ে ওঠা
বাংলাদেশের সকল নাগরিক তার মৌলিক অধিকার পেতে বাধ্য। এখানে সরকার বা রাষ্ট্র সে অধিকার থেকে দেশের কোন নাগরিককে বঞ্চিত করতে পারে না। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সে মৌলিক অধিকার থেকেও আমাদের পথশিশুরা বঞ্চিত। এদের না আছে মাথা গেঁাজার ঠাঁই, না আছে শিক্ষা গ্রহণের তদারকি, কিংবা চিকিৎসা পাওয়ার সুব্যবস্থা। ক্ষুধার যন্ত্রণায় এদের ছটপটানি আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করলেও আমরা অনেকটা বধিরের অভিনয় করে যাচ্ছি। এদের নিয়ে যেন আমাদের মাথা ঘামানোর কোন কারণও নেই! ভাবনার সময়ও নেই! যার কারণে এসব শিশুরা খুব ছোট বয়সেই জীবন সংগ্রামে নেমে পড়ে।
জীবিকার তাগিদে ধরনা দিতে হয় বিভিন্ন কাজে—কর্মে। হালকা এবং ভারী সব ধরনের কাজই তারা দিনের পর দিন হাসিমুখে করে থাকে। এসব কাজের মধ্যে কুলি, হকার, রিকশাচালক, শ্রমিক, ফুল বিক্রেতা, আবর্জনা সংগ্রাহক, হোটেল—শ্রমিক, বুননকর্মী, মাদক বাহক, বিড়ি—শ্রমিক, ঝালাই কারখানাসহ নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে এদের সরব উপস্থিতি আমাদের চমকে দেয়। অভাবের তাড়নায় ভালো—মন্দ কাজ বাছাই করতে এরা সম্পূর্ণ অক্ষম। এসব কাজে তাদের শারীরিক ও মানসিক গঠনে মারাত্মক বাধার সৃষ্টি হয়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করায় দুর্ঘটনাও ঘটে। কেউ কেউ অপরাধ ও মাদকের জগতে মারাত্মকভাবে জড়িয়ে পড়ে। শৈশব থেকেই অন্ধকার অনিশ্চিত একটা ভবিষ্যতের দিকে তাদের যাত্রা শুরু হয় আর সেই অন্ধকার জীবনের সুযোগ নেয় সমাজের স্বার্থান্বেষী একটি মহল। যার কারণে দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমাদের চোখের সামনেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এবং সঠিক পথ হারিয়ে নিজেকে অতল গহবরে তলিয়ে ফেলে। যা দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর সংবাদ বটে।
পথশিশুদের জীবন উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ হলেও একটি গবেষণায় উঠে এসেছে তাদের বাস্তব চিত্র। উক্ত গবেষণায় দেখা যায়, ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু ছয় মাস অন্তর অন্তর নির্দিষ্ট স্থান পরিবর্তন করে থাকে। এদের মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশু স্থান পরিবর্তন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে আর ৩৩ শতাংশ পাহারাদারের কারণে। উল্লেখ্য, এসব শিশু অভাব ও দারিদে্র্যর কারণে খোলা আকাশের নিচে ঘুমানোর পরও তাদের ৫৬ শতাংশ শিশুকে মাসিক ১৫০—২০০ টাকা নৈশ প্রহরী, মাস্তানদের দিতে হয়, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অমানবিক। (A baseline survey of street children in Bangladesh, BBS, 2002-2003).
একই গবেষণায় আরো দেখানো হয়েছে যে,পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ১৯ শতাংশ শিশু বিভিন্ন সময় গ্রেফতারের শিকার হয়েছে; যাদের মধ্যে ৫০ ভাগ নির্দোষ। ৪০ শতাংশ শিশু প্রতিদিন গোসলহীন থাকে, ৩৫ শতাংশ শিশু খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৮০ শতাংশ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, ৮৪ শতাংশ শিশুর কোনো শীতবস্ত্র নেই। ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থতায় ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না। এছাড়া বিভিন্নভাবে এসব শিশুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হয়। ২০০৫ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫১ শতাংশ শিশু অন্যদের থেকে অশ্লীল কথা শুনে থাকে, ২০ শতাংশ শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। এ পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, আমাদের এই শিশুরা জন্মের পর থেকেই কত অসহায় যা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মোটেও কাম্য ছিল না।
পথশিশুদের জন্য আমাদের করণীয়
পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে বিজ্ঞজনরা মনে করেন। বিজ্ঞজনরা আরো মনে করেন জন্মের সময় প্রতিটি শিশু তার নাগরিক অধিকার নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। প্রতিটি মানুষই তার মৌলিক অধিকার পেতে বাধ্য। আর এ অধিকারগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতে পারে একমাত্র দেশের সরকার তথা তার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। একটি সুষ্ঠু ও টেকসই পরিকল্পনা হাতে নিয়ে পথশিশুদের দুর্গতি লাঘব করতে সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়। সরকারকেই একটিবিশেষ ব্যবস্থা বের করে তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা আর শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ উন্নয়নের কাজে তাদের লাগাতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে কোন শিশুই সমাজ রাষ্ট্র বা পরিবারের বোঝা হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। আমরাই তাদের অধিকার হরণ করে দেশ ও পরিবারের কাছে বোঝা করেদেই। দুঃখজনক হলেও সত্য,আজ যে শিশু জন্ম নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখলো কালই তাকে জীবিকার তাগিদে মায়ের কোল চড়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এ আগত শিশুর জন্মই হয়েছে পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে তার নিজের ক্ষুধা নিবারণ ও তার পরিবারের মুখে আহার জোগান দেওয়ার জন্য। সুতরাং এ বৃত্ত থেকে বের হয়ে একটি উন্নত জাতি গঠনের লক্ষ্যে সরকারকেই শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে, পাশাপাশি আমরা যারা দেশের সাধারণ জনগণ আমাদেরকেও সামনে এগিয়ে আসতে হবে। কোনভাবেই দায়িত্ব এড়িয়ে চললে হবে না। দেশের স্বার্থে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে খোলামনে।
এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে অনেক সচেতনতার সাথে কাজ করতে হবে। পথশিশুদের সকল ধরনের অধিকার,তাদেরদায়িত্ব ও কর্তব্য ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের সজাগ করে তুলতে হবে, দীর্ঘ মেয়াদি একটি টেকসই স্থায়ী সমাধানের পথ বের করতে হবে। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ হিসাবে গড়তে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে তাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি একটি আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে তাদের চারিত্রিক গুণাবলি ও নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবেÑ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শিশুর রয়েছে সমান অধিকার। সুতরাং সকল ধর্মের পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়ন ও সুরক্ষা দেওয়া আমাদের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে আদর্শ রেখে গেছেন তা অবশ্যই আমাদের পালন করতে হবে। রাসূল (সা.)এতিম ও অসহায় শিশুদের যত্ন, দেখাশুনা ও তাদের আদর্শবান মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে আমাদের তাগিদ দিয়েছেন। একটি হাদিসে রাসূল (সা.)বলেন, ‘শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে যে কোন এতিম শিশুর মাথায় হাত বোলায় এবং তার হাতের নিচে ঐ এতিম শিশুর যত চুল পড়বেতাকে ঠিক ঐ চুল পরিমাণ নেকি দেওয়া হবে।’ অন্য একটি হাদিসে আছে, ‘যে এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করলো সে যেন দোজখের আগুন খেলো। নবী করিম (সা.) অবহেলিত শিশুদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা ও বিনোদনের যথেষ্ট সুযোগ—সুবিধা দিয়ে ধর্মে—কর্মে যথার্থ মানুষ হিসেবে গঠন করেছিলেন। শিশুরা আগামী দিনের দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাই তাদের যদি সুন্দর করে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা যায়; তাহলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী হবে আরও সুন্দর। তাই ইসলামের শিক্ষা সব শিশুই যেন নিরাপদে বেড়ে ওঠে। সুতরাং আমাদের পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে এতিম, অসহায় ও এ পথশিশুদের জন্য কাজ করতে হবে।
শেষ কথা
শিশুরাই দেশের অমূল্য সম্পদ। এ সম্পদকে যথারীতি কাজে লাগাতে হলে দেশের সরকারসহ আপামর জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণপ্রত্যেকটি শিশুর মাঝেই রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। তাই তাদের সুষ্ঠু একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে সত্যিকারের মানুষ হিসাবে গড়তে যা যা প্রয়োজন তার জোগান দিতে হবে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের জীবনকে ভরে দিতে হবে, যাতে তারা কোন অবস্থাতেই বিপথে পরিচালিত না হয়। সুতরাং ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাদ পেতে হলে এ অবহেলিত পথশিশুদের মূল্যায়ন অবশ্যই করতে হবে। তাদের দৈহিক ও মানসিক শক্তির সদ্ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে একটি শিশু মোটামুটি সাত বছর পর্যন্ত যা শেখে তাই তার বাকি জীবনে প্রতিফলন ঘটে। তাই এ সময়টা একটি শিশুর জন্য মূল্যবান সময়। এ দিক বিবেচনায় রেখে আমরা কোন অবস্থাতাতেই একজন পথশিশুর সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না, তাকে লাঞ্ছিত, অপমানিত করবো না। এ সম্পর্কে আমাদের মহানবী(সা.) বলেছেন ‘যে শিশুদের প্রতি দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি) তাই আমরা অসহায় শিশুদের দয়ার চোখে দেখবো, মায়ার চোখে দেখবো তাদের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করে রাসূলের ভালোবাসা আদায় করে নেবো।