Home প্রচ্ছদ রচনা বাংলা নববর্ষ – রবিউল ইসলাম

বাংলা নববর্ষ – রবিউল ইসলাম

আমার খুদে বন্ধুরা, কেমন আছ তোমরা? আশা করি সবাই ভালো আছে। আমিও ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা কি খেয়াল করেছ, সময় কত দ্রুত চলে যাচ্ছে? আমরা আরেকটি বাংলা বছর শেষ করে, নতুন বছরে পা রাখতে যাচ্ছি। বিদায়ী বছরটি একদম অলস কেটেছে তোমাদের। কোনো পরীক্ষা ছিল না, ক্লাস ছিল না। পুরোটা সময় আমরা এক অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে লড়াই করেছি। তবুও নতুন বছরে তোমাদের জন্য শুভ কামনা। আল্লাহর কাছে কামনা করি তোমাদের নতুন বছর ভালো কাটুক।

বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস বৈশাখ। আর বৈশাখের প্রথম দিনে পালন করা হয় বাংলা নববর্ষ। কিন্তু, তোমরা কি জানো বাংলা বছর বা বাংলা পঞ্জিকা কীভাবে এলো? বাংলা বারো মাস কীভাবে এলো? এর দিন, ক্ষণ কীভাবে ঠিক করা হলো? বাংলা সনের প্রবর্তক ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর। আকবরের পঞ্জিকার নাম ছিল ‘তারিখ-এ-এলাহী’ আর ওই পঞ্জিকায় মাসগুলো আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর ইত্যাদি। কিন্তু, ঠিক কখন এসব নাম পরিবর্তন হয়ে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ হলো তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না।

স¤্রাট আকবর কেন বাংলা সন চালু করলেন এবার সেই তথ্য জেনে নাও। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য পরিচালিত হতো হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে। আর হিজরি পঞ্জিকা চাঁদের ওপর নির্ভরশীল। তাই কৃষকদের খাজনা দিতে সমস্যায় পড়তে হতো। খাজনা আদায়ে কৃষকদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, তাই সম্রাট আকবর বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনেন। তখনকার বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সম্রাট আকবরের আদেশে সৌর সন ও হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে বাংলা সনের নিয়ম তৈরি করেন। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে প্রথম বাংলা সন গণনা করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে খাজনা আদায়ে এই গণনা কার্যকর হয়েছিল ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। হালখাতার প্রচলনও সম্রাট আকবরের সময় থেকে হয়।

বাংলা নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ বৈশাখী মেলা। আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য এই মেলা। কেবল বাংলাদেশেই বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে অন্তত দুই শতাধিক বৈশাখী মেলার আয়োজন বসে। সেখানে নানা স্বাদের মুড়ি-মুড়কি আর পিঠা-পুলির দেখা পাওয়া যায়। আর নাগরদোলার হাওয়ায় ভেসে নববর্ষের নতুন মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করার অনুভূতি অন্য রকমের। এ ছাড়াও থাকে হরেক রকমের কুটির শিল্প আর হস্ত শিল্পের বাহারি প্রদর্শনী। দেখা মেলে বাংলার ঐতিহ্য মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্যের।

আমার শৈশবের মেলা ছিল অন্যরকম। তোমরা হয়তো এখন সেই মেলা দেখতে পাও না। সময়ের সঙ্গে বৈশাখী মেলার জাঁকজমক আয়োজন অনেকটা হারিয়েছে। ছোটবেলা আমার দাদু আমার হাত ধরে পহেলা বৈশাখের দিন সকাল বেলায় মেলার মাঠে নিয়ে যেতেন। আমি মহা উৎসাহে পুরো মেলা ঘুরে ঘুরে কদমা বাতাসা খেতাম। তারপর ছোট ছোট দু’হাত ভর্তি করে মাটির তালপাতার বাঁশি, প্লাস্টিকের চশমা, ঘড়ি কিনে বাড়ি ফিরতাম। শুধু কি তাই! মেলার খোলা মাঠে থাকত ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা। অবাক চোখে দেখতাম কত দ্রুত ধুলা উড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে ঘোড়াগুলো। আর মেলা থেকে বাড়ি ফিরে বাড়ির পাশেই বয়ে চলা নদীতে নৌকা বাইচ দেখতাম।

বৈশাখের আরেক আকর্ষণ ছিল হালখাতা! পহেলা বৈশাখের দিন জুয়েলার্সগুলো থেকে কার্ড পাঠানো হতো। আমরা ছোটরা সন্ধ্যার পরে বড়দের হাত ধরে সোনার দোকানে যেতাম হালখাতা উৎসবে। দোকানিরা আমাদের আপ্যায়ন করত মিষ্টি, সন্দেশ এসব দিয়ে। ছোটবেলার পহেলা বৈশাখে মেলার পাশাপাশি হালখাতাও তাই দারুণ মিষ্টি এক স্মৃতি।

বাংলা নববর্ষ বাঙালির উৎসব, বাঙালির সংস্কৃতি। যদিও সময়ের সঙ্গে সেই উৎসব আজ অনেকটা হারাতে বসেছে। আগের সেই বৈশাখী মেলা এখন আর দেখা যায় না।
বন্ধুরা, পৃথিবী এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ^ হয়তো আগের অবস্থায় আর ফিরবে না। তাই আমাদের নিউ নরমালের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর এটাই হলো এখনকার স্বাভাবিক জীবন। যেটাকে বলা হচ্ছে নিউ নরমাল। তাই এবারের নববর্ষও না হয় ঘরে বসেই কাটালে। বন্ধুদের এসএমএস দিলে, খোঁজখবর নিলে। শুভ নববর্ষ। ভালো থেকো।

SHARE

Leave a Reply