সুপ্রিয় বন্ধুরা; আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছো নিশ্চয়ই?
তোমাদের শোনাবো আজ মজার এক গলপো। এটি একেবারে আনকোরা জীবনের ডালি থেকে নেওয়া।
বিশ্বের ৭-৮টি দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। মালয়েশিয়ার একটি প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে বাংলাদেশী কিছু তরুণ শিক্ষার্থীর সাথে দুপুরে খাচ্ছি। একজন তাগড়া তরুণ টেবিলে বসলো; পরনে জিন্স, পলো টিশার্ট আর পায়ে জাঙ্গলবুট। যেন সাক্ষাৎ আধুনিক টার্জান বিয়ার গ্রির্লস। কিন্তু তার কথার মোচড়ে চমকে উঠলাম;
পাশের এক যুবককে ইঙ্গিত করে বলছে,
– মামা তুমি ক্যামন মানুষ?
সেই মামা- কেন কী হলো?
সেই বিয়ার গ্রির্লস : গত ৩-৪ দিন আমি হলের তিন তলা থেকে নামতে পারি না, আমাকে সাপে দৌড়ায়।
সবাই নড়েচড়ে বসলাম, হাজার হলোওতো সাপ। ব্যাটার একটা আলাদা মর্যাদা আছে, তবে বিচক্ষণদের কাছে শুনেছি মালয়েশিয়ান সাপেরাও নাকি এখানকার ওরাংআসলি তথা মানুষদের মতোই সোজাশান্ত। তবুও সাপ বলে কথা। খরগোশের মতো সবার কান খাড়া।
মামা : তো আমায় ফোন দাও নাই ক্যানো? তো কী সাপ?
ভাগ্নে সেই বিয়ার গ্রির্লস : নখরযুক্ত চার পা, বড় জিহবা।
ধাক্কা খেলাম, ভৌতিক গন্ধে এবার আমিও যুক্ত হলাম; চার পা? তা দেখতে কেমন?
ভাগ্নে বিয়ার গ্রির্লস : কুমিরের মতো দেখতে।
কুমির! সবাই যেন চিৎকার করে উঠলাম। দু-একজন খেতে খেতে বিষম খেলো।
যে দেশে নদী হলো খালের মতো; তিন লাফে পার হওয়া যায়। সেখানে কুমির! সন্দেহ হলো, ঘোরতর।
পরিশেষে সবাই মিলে আবিষ্কার হলো; আসলে সেটি একটি গুইসাপ (Asian Water Monitor Lizard)।
নাম গুইসাপ এবং ফোঁসফোঁস করলেও বেশ গোবেচারা প্রাণী। মানুষের তেমন ক্ষতি করে না। তবে সাপের যম। এরা সর্পভুক। আর এদের ভয়ে এই আধুনিক টার্জান বিয়ার গ্রির্লস তিন দিন ভয়ে তটস্থ; তার খাওয়া, নাওয়া, শোয়া, টয়লেট সবই প্রায় জব্দ; কলজে ধড়ফড়, মুখ ফ্যাকাশে তাতে নেই কোন শব্দ।
সমস্যাটি কী? রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টের ছাত্র জাঙ্গলবুট পরা এই মডার্ন যুবকের জঙ্গল তথা প্রকৃতি ও প্রাণিকুল সম্পর্কে সরাসরি কোনো ধারণা নেই। অর্থাৎ ‘বাটি হইতে এক পা ফেলিয়া’ যে পড়া এটি তার ভালোভাবে রপ্ত হয়নি। একই সমস্যায় ফি-বছর নানা দেশের সিবিচে প্রাণ যায় হাজারো বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া বিশ্বজয় প্রত্যাশী তরুণের।
বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘পড়া’ শব্দটির প্রায় ৩০টি অর্থ দেওয়া আছে; কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমরা শুধু বই পড়া নিয়েই মশগুল। বাকি ২৯টি পড়ার খবর কী? যেমন; গাছ থেকে পড়া, নদীতে পড়া, স্মরণে পড়া, ধরা পড়া, ডাকাত পড়া, অসুখে পড়া, রক্ত পড়া, বাজার পড়া, বিপদে পড়া, পায়ে পড়া, পিছনে পড়া, পিছলে পড়া, বেলা পড়ে যাওয়া, পড়ে পড়ে কিল খাওয়া ইত্যাদি নানা অর্থেই পড়া শব্দের বহুবিধ ব্যবহার।
প্রায় একশত বছর আগে সুকুমার রায়ের লেখা জীবনের হিসাব ছড়াটি এখনও আমাদের স্কুলসমূহে পাঠ্য। কিন্তু তাই বলে কি- নদীতে পড়া থেকে বাঁচার জন্য আমরা সাঁতার শিখছি? কারণ এখনও আমাদের কাছে পড়া মানে- বিদ্যে বোঝাই বাবুমশাই।
খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুব্ল বুঝি দুলে।
মাঝিরে কন, “একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি, ডুব্ল নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?”
মাঝি শুধায়, “সাঁতার জানো?” মাথা নাড়েন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, “মশাই, এখন কেমন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবনখানা ষোল আনাই মিছে।
প্রশ্ন হচ্ছে এখানে শিক্ষিত কে? পড়াশোনা কে জানে? উত্তর মাঝি।
সারা বছরে অর্ধ-বার্ষিক, বার্ষিক পরীক্ষায় আমাদের ৬০ ঘণ্টা পরীক্ষা দিতে হয়। এর বাইরে ৮,৭০০ (৩৬৫ দিনে) ঘণ্টার যে জীবন সেই জীবনে সংগ্রামের ও বিজয়ের শিক্ষা আমরা কোথায় পাই?
কাজেই বই পড়া, পিছলে পড়া, বিপদে পড়া সব পড়াই পড়তে হবে। তবেই না পোড়খাওয়া সফল ও বিজয়ী মানুষ হওয়া যাবে।
আপদ-বিপদ কখনও প্রত্যাশা করতে নেই। তবে, পিছলে পড়া থেকে বাঁচার দক্ষতা এবং বিপদে না পড়ার কৌশল এবং বিপদে পড়ে গেলে তা থেকে বাঁচার উপায়টি জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চলো বুকে হাত রেখে শ্লোগান তুলি, নিজকে কমান্ড করি- পড়ো এবং পড়ো, যে পড়ে সে বড়ো। আজ এ পর্যন্তই।