Home ফিচার ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানি -রবিউল ইসলাম

ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানি -রবিউল ইসলাম

ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানি
ভোমরাটা গায় গান ঘুম ভাঙানি
এক ঝাঁক পাখি এসে ঐকতানে
গান গায় এক সাথে ভোর বিহানে
আযানের সুর মেশে নীল আকাশে
শির শির করে ঘাস হিম বাতাসে…

কবি ফররুখ আহমেদ বসন্তকে এভাবে বর্ণনা করেছিলেন ছন্দে ছন্দে। বসন্ত নিয়ে এমন চমৎকার উপস্থাপন খুব কমই দেখা গেছে বাংলা সাহিত্যে।
বাংলা ক্যালেন্ডারের সবশেষ ঋতু হলো বসন্ত। মহান আল্লাহ আমাদের জন্য এই ঋতুকে সাজিয়ে দিয়েছেন রাজার মতো করে। তাই বসন্তকে আমরা ঋতুরাজ বলে ডাকতে একটুও কার্পণ্য করি না। বাংলা ক্যালেন্ডারে এখন ফাল্গুন মাস চলছে। ফাল্গুন হলো বসন্ত ঋতুর প্রথম মাস। নিয়ম অনুযায়ী ফাল্গুন-চৈত্র এই দু’মাস হলো বসন্তকাল।
বসন্তে প্রকৃতি সেজে উঠেছে আল্লাহর দেওয়া অসংখ্য নেয়ামতে। দখিনের ঝিরঝির বাতাসে শীতের নির্জীবতাকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতি সহসা জেগে উঠেছে। শীতের পাতাঝরা গাছগুলোতে এখন সবুজ পাতা গজাতে শুরু করেছে। আর কিছুদিন পরেই চারদিক সবুজে সবুজে ভরে উঠবে। পাতায় পাতায় শুরু হবে আলোর নাচন। ডালে ডালে ফুটবে হরেক রকমের ফুল। আর সেই ফুল ও সবুজ পাতার ফাঁকে বসে কোকিল কুহু কুহু ডাকে ভরিয়ে তুলবে চারপাশ। আমাদের জানিয়ে দেবে বসন্ত এসে গেছে। শুকনো মাটিতে গজিয়ে উঠবে কচি ঘাস।
হালকা শীত হালকা গরম নিয়ে দিনের শেষে হাজির সবে সন্ধ্যা… তারপর রাত। রাতের আকাশে তারার মেলা বসে। তার মাঝে কখনো কখনো টিপ টিপ করে আলো জ¦ালিয়ে কোথাও যেন ছুটে যায় সাদা রকেট। গ্রামের মাঠে মাদুর বা ধানের খড় বসিয়ে সেসব দেখে একদল কিশোর। দুরন্ত কিশোররা রূপকথার গল্পে মেতে ওঠে। তাদের গল্প শুনতে চারপাশে টিপটিপ করে নেভে আর জ¦লে জোনাক পোকা। বসন্তের এই রূপ সত্যিই মন ভুলিয়ে দেয় যে কারো। এ সব কিছুই আল্লাহ আমাদের জন্য সাজিয়েছেন। তাই বন্ধুরা আমরা যেন আল্লাহকে ভুলে না যাই। আমরা যেন সবসময় তার ইবাদতের মাধ্যমে এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। তাহলে, আমাদের জীবনও ভরে উঠবে ¯্রষ্টার এমন হাজার হাজার নেয়ামতে।
এ সময় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি গাছে মুকুল আসে। মুকুলের গন্ধে মৌমাছি দল বেঁধে ছুটে আসে মধু নিতে। ফুলের বনে অলিরা গুণগুণ করে। ওদের গুঞ্জনে চারদিক মুখরিত হয়। প্রজাপতিরাও রঙিন পাখা মেলে উড়ে বেড়ায় মনের সুখে। এ সময় ফুটি, তরমুজ, খরমুজ, ডাব, বাঙ্গি ইত্যাদি ফল পাওয়া যায়।
বসন্ত তার রূপকে সাজায় ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভ দিয়ে। চিরশ্যামল বাংলা হয়ে ওঠে ঝলমলে। গোলাপ, শিমুল, অশোক, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া ফুল চারদিকে আনন্দের রং ছড়ায়। আমের মুকুলের ম ম গন্ধে মাতাল হয়ে যায় প্রকৃতি। বসন্তদূত কোকিল ফিরে পায় তার কণ্ঠ। নবপল্লবিত গাছের শাখায় বসে ডেকে ওঠে কুহু কুহু। বসন্ত বাউরি ‘বউ কথা কও’ বলে থেকে থেকে ডাক দেয়।
ফাল্গুন-চৈত্র মাসকে বসন্তকাল বলা হলেও ফাল্গুনের শেষ দিকে অথবা চৈত্রের শুরুর দিকে গরমের আধিপত্য বাড়তে শুরু করে। তাই বসন্তের স্থায়িত্বকাল এখন অনেকখানি কমে গেছে। এ জন্য দায়ী আমাদের বনভূমি কমে যাওয়া। তারপরেও বসন্ত সুন্দর, বসন্ত অপরূপ। এই রূপ শুধুমাত্র বাংলাদেশে দেখা সম্ভব।
বন্ধুরা, বসন্ত আমাদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আমরা বসন্ত ঋতু থেকে অনেক শিক্ষা নিতে পারি। বসন্ত সুন্দর তাই আমরা বসন্ত ঋতুকে ভালোবাসি, পছন্দ করি। আমাদের মন, আমাদের চরিত্র যদি বসন্তের মতো সুন্দর করতে পারি তাহলে মানুষও আমাদের ভালোবাসবে, আল্লাহ আমাদের ভালোবাসবেন।
একটি কথা সবসময় মনে রাখবে সুন্দর জীবন গড়তে হলে সততার কোনো বিকল্প নেই। তুমি যদি সৎ থাক এবং সত্য বলো পৃথিবীর কোনো অন্যায় তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)। তার সততার গুণে মুগ্ধ হয়ে আরবের মানুষ আল আমিন বলে ডাকত। তাই আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও এমন হওয়া উচিত। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সৎ পথে চলা এবং সত্য বলার তৌফিক দান করেন।

SHARE

Leave a Reply