Home বিজ্ঞান ও বিশ্ব আফ্রিকার চোখ – অতুল করিম

আফ্রিকার চোখ – অতুল করিম

প্রাণীদের যেমন চোখ আছে তেমনি মহাদেশেরও চোখ আছে। কথাটা শুনলে একটু অবাকই লাগে। অবাক হলেও সত্যি, আফ্রিকা মহাদেশে এমন একটি অদ্ভুত জায়গা আছে, যা দেখতে অবিকল মানুষের চোখের মতো। তবে সেটি দেখতে ঐ জায়গায় গেলে চলবে না, যেতে হবে অনেক ওপরে, মহাশূন্যে। কারণ চোখটি এতোই বিশাল যে, মহাশূন্যে না গেলে পুরো চোখটি একসঙ্গে দেখা যায় না। এমনকি যদি গুগল আর্থ দিয়েও দেখা হয় তাহলে প্রথমে চোখের মণির ভেতরের সাদা যে অংশটা, আফ্রিকার বালুরঙা চোখের সেই অংশটা কেবল দেখা যাবে। তারপর জুম আউট করলে আপনি দেখতে পাবেন আফ্রিকার চোখের পুরোটা। আফ্রিকার এ চোখটি রয়েছে আফ্রিকার এক গরিব দেশ মৌরিতানিয়ায়। আফ্রিকার বিখ্যাত সাহারা মরুভূমির নাম তো শুনেছো। মরুভূমিটির যে অংশ মৌরিতানিয়ায় পড়েছে, তারই এক অংশে আছে আফ্রিকার এই আজব প্রাকৃতিক আশ্চর্য। তবে এই চোখ কিভাবে সৃষ্টি হলো তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
সাহারার এই চোখটি রিচার্ট স্ট্রাকচার নামেও পরিচিত। এটি সাহারা মরুভূমিতে প্রায় ত্রিশ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, এটা হয়তো অগ্নুৎপাত এর ফলে তৈরি হয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন এর পেছনে এলিয়েনদের হাত রয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে এখনো রহস্য রয়েই যায়। রহস্যের মূল কারণ এর আকার। এটা পুরোপুরি বৃত্তাকার আর এর বলয়গুলো সমান দূরত্বের।
রিচার্ট স্ট্রাকচার নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা থাকলেও সবচেয়ে মজার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন রিচার্ট স্ট্রাকচারের গঠন প্লেটোর হারিয়ে যাওয়া শহর এটলান্টিসের সাথে অনেকাংশে মিলে যায়। প্লেটোর বর্ণনানুসারে এটলান্টিস নামের গোলাকৃতির দ্বীপটি পানি এবং ভূমি দ্বারা সমবিভক্ত ছিল। যার দুই ভাগ ছিল ভূমি আর তিন ভাগ ছিল পানি। যেহেতু এটলান্টিস ছিল সমুদ্রের একটা অংশ সেহেতু যখন ভূমিকম্পে এটলান্টিস তলিয়ে যেতে শুরু করে তখন পানি এবং মাটির সংমিশ্রণে একটা অসম্ভব মাটির বাধা সৃষ্টি হয়ে দাঁড়ায় সমুদ্রের জন্য। ফলে সমুদ্র গ্রামটিকে গ্রাস করতে পারে না। প্লেটো বলেন যে এটলান্টিসের চারপাশে কয়েকটি পাহাড় ছিল যা সমুদ্র থেকে শহরটিকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। এটলান্টিসের এই বর্ণনা অনেকটাই সাহারার এই নীল চোখের বর্ণনার সাথে মিলে যায়।
কিন্তু অনেকে এটা অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন। তাদের মতে এই রিচার্টটি গঠন হয়েছে ভূমি এবং পাথরের দ্বারা। ওখানকার ভূমির গঠনই এমন ডোমাকৃতির, চোখের আদলে উঁচু হয়ে পরে আবার নিচু হয়ে এসেছে এবং সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে ওপরের মাটি আর বালু ক্ষয়ে যাওয়ায় মূল গঠনটি বের হয়ে এসেছে যা ওপর থেকে দেখলে অনেকটা চোখের মত দেখায়। রিচার্ট স্ট্রাকচারের ভেতরে উত্তর দিকে কিছু পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলো প্রায় ৯৪ থেকে ১০৪ মিলিয়ন বছরের পুরনো। আবার আমরা জানি ৪০,০০০ বছর আগে সাহারায় একটি বিশাল হ্রদের অস্তিত্ব ছিল তাই নির্দিষ্টভাবে কিছুই বলা যায় না।

অনেকের মতে, কোনো দেশ হয়তো ওখানে মাটির নিচে কোনো অ্যাটম বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, আর তা থেকেই এই চোখের সৃষ্টি। তবে ওরকম বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানোর মতো কোনো অ্যাটম বোমা এখনো কোনো দেশ বানানোর ঘোষণা দেয়নি। আরেকটি ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটা হয়েছে ওখানকার ভূমির গঠনের জন্য। ওখানকার ভূমির গঠনই ওরকম বোমাকৃতির, চোখের আদলে উঁচু হয়ে পরে আবার নিচু হয়ে গেছে। তবে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

SHARE

Leave a Reply