সপ্তাহের মধ্যে বৃহস্পতিবারের রাতটা শাহেদ তার নিজের তৈরি করা কম্পিউটার ল্যাবে বসে। বাকি দিনগুলো তার অন্যান্য কাজের মধ্যে কাটে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রতিটা বিষয়ে ৯৫% নম্বর পেয়ে মফস্বল শহরের কলেজে ভর্তি হয়েছে। তার কলেজ শুরু হয় রাত ১১টায়। এ সময় ক্লাস নেয়ার পেছনে কলেজ অধ্যক্ষের একটা হাত আছে। জরিপ করে দেখা গেছে প্রায় ৯০% ছাত্র রাত ১১টা থেকে ঘুমানো অবধি ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যখন ইন্টারনেট দিয়ে জীবন চলছে তখন তো ইন্টারনেট ব্যবহার করবেই। কিন্তু সেটা কেন শুধু বুধ, শুক্র, ইউরেনাস, নেপচুন ইত্যাদি গ্রহ নিয়ে? তারা তো পৃথিবীর বিষয়াবলি নিয়েও নেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারে। সেহেতু যদি ক্লাস ১১টায় বসে রাত ২টা পর্যন্ত চলতে থাকে তাহলে অন্য দিকে ছাত্ররা মনোযোগ দিতে পারবে না। একটা কথা বলে রাখা দরকার ক্লাস ল্যাপটপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়। যাহোক মূল কথায় আসছি।
শাহেদ খুব সাধারণ একটা ছেলে। তার দৈহিক গঠন বর্ণনা করার মত তেমন কিছুই নেই। যা বলার বিষয় তা হলো তার স্মৃতি ধারণক্ষমতা ২৫ শতকে যখন প্রতিটি মানুষের মাথায় ৫শত টেরাবাইট থেকে ৭ শত টেরাবাইট স্মৃতিফলক স্থাপন করা তখন শাহেদের মাথায় কেবল ৫ শত গিগাবাইট, যা শুধু বিভিন্ন ঠিকানা সংরক্ষণ করে। যেমন ই-মেইল, আইডি, ফোন নম্বর, বাসার ঠিকানা ইত্যাদি। বাকি সকল তথ্য সে তার ব্রেনেই রাখে। তার প্রচুর স্মরণশক্তি।
বাংলাদেশ থেকে এবার ২০০ জন মেধাবী ছাত্র নেপচুন গ্রহে গেছে। তাদের একটি আবিষ্কারের প্রদর্শনীর জন্য। একটি কার্ব-কন্ট্রোলার প্রদর্শন করতে।
কার্ব-কন্ট্রোলার হলো এক ধরনের ভেকসিন। যা মানুষ গ্রহণ করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতে পারবে। পৃথিবীতে কোন অক্সিজেন নেই। কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অক্সিজেন তৈরি করা হয়। কিন্তু এই কার্ব-কন্ট্রোলার গ্রহণ করলে নিজের শরীর কার্বন গ্রহণ করতে পারবে যা প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা বাঁচিয়ে দিবে।
বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটা একটা শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। এ আবিষ্কারের মূলে যারা তাদের মধ্যে শাহেদ অন্যতম। এ আবিষ্কারের সকল প্লান রয়েছে শাহেদের নিজেস্ব ব্রেনে। বাকি সকলের লাগানো মেমোরিতে। আর এই আবিষ্কারটা সংরক্ষণের জন্য শাহেদ প্রদর্শনীতে যায়নি।
শাহেদ মনিটরে দেখছে তাদের আবিষ্কার নিয়ে পুরা নেপচুনে সাড়া পড়ে গেছে। এই কার্ব-কন্ট্রোলারের গুণাগুণ সারা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভেকসিন কেনার জন্য অলরেডি ৪ লক্ষ অর্ডার চলে এসেছে।
সকল গ্রহে যখন এ নিয়ে মাতামাতি করছে, তখন কেবল মঙ্গল গ্রহ নিশ্চুপ। পৃথিবীর সাথে কোনদিন মঙ্গল গ্রহের সাথে মিল ছিল না, হবেও না।
হঠাৎ করে শাহেদ তার মনিটরে একটি মঙ্গল গ্রহের ইনভাইট বার্তা পেল। তাতে লেখা “যারা নেপচুন গ্রহে প্রদর্শনীতে এসেছে তারা যেন ফিরার পথে মঙ্গল গ্রহে ঘুরে যায়। তাতে তারা ধন্য হবে।” পৃথিবী থেকে দাওয়াত কবুল করা হলো। সেখানে রওনা হলো।
২০০ জনকে মঙ্গল গ্রহে স্বর্ণের গালিচায় করে বিশাল হল রুমে প্রবেশ করানো হলো। সেখানে প্রবেশের পরপরই তাদের সিগন্যাল হারিয়ে গেল। শাহেদ আর তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। শতচেষ্টা করেও তাদের সাথে কানেক্ট করা গেল না।
একঘণ্টা ধরে চেষ্টা করার পরও মঙ্গল থেকে কেউ কোন সাড়া দিল না। মঙ্গল থেকে সকল গ্রহের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।
শাহেদের আর বুঝতে বাকি নেই যে কি হতে চলেছে। কার্বন কে অক্সিজেন তৈরি করার যন্ত্র মঙ্গলবাসীরা তৈরি করেছিল। প্রতিদিন তাদের শত শত মিলিয়ন ড্রলার আয় বন্ধ হওয়াটা মেনে নিতে পারেনি।
সাড়ে তিন ঘণ্টা পর তাদের সিগন্যাল পাওয়া গেল। এর মধ্যে কিছু সৈনিক পাঠানো হয়েছিল। তবুও তাদের হদিস পাওয়া যায়নি। তারা পৃথিবীতে আসছে কিন্তু কারো কোন সাড়া নেই। তবে কি ….। ভাবতেই, শাহেদের বুকটার ভিতরে কেমন যেন করে ওঠে।
না তারা বেঁচে আছে। তবে সবাই অজ্ঞান। তাদের মাথার সব মেমোরি বের করে নেয়া হয়েছে।
শাহেদ খুব ভালো হ্যাক করতে পারে। যখন সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছিল না অমনি শাহেদ ঐ ২০০ জনার মেমোরি হ্যাক করে। ফলে সেগুলো চালু করা মাত্র বন্ধ হয়ে যাবে।
এর মধ্যে একজনার মাথায় মেমোরি পাওয়া যায় যা পৃথিবীর না। এটা চেক করতে যখন এ মেমোরি চালু করা হয় সাথে সাথে সকল মানুষের লাগানো মেমোরি নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ এ মেমোরিতে ভাইরাস পাঠানো হয় যা সকল মস্তিষ্ককে স্থাপন করা মেমোরিগুলোকে নষ্ট করতে পারে। এ মুহূর্তে পৃথিবীতে লাগানো সকল স্মৃতিফলক বা মেমোরি অকেজো।
শাহেদ ঐ ২০০ মেমোরি হ্যাক করায় সিডোনিয়াসরা (মঙ্গলে বসবাসকারী প্রাণী) অনেক চেষ্টা করেও কার্ব-কন্ট্রোলার তৈরির প্লান পায় না।
মঙ্গলিয়ানদের ভাইরাস সকল মেমোরি নষ্ট করতে সক্ষম হলেও শাহেদের মেমোরি নষ্ট করতে পারে না। কারণ তার তথ্য সংরক্ষিত থাকে আল্লাহ প্রদত্ত ব্রেনে।
এই সংবাদ জানতে পেরে সবাই খুশিতে আল্লাহর বন্দনায় দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ার মাধ্যমে মাথা নোয়ায়। আল্লাহর সৃষ্টিক্ষমতা দেখে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়।