নাহ্ লিরাকে নিয়ে আর পারা গেল না। লিরা ইদানীং একদম পড়ালেখা করতে চায় না। বিশেষ করে ইংরেজি। পড়ার কথা বললেই কান্না জুড়ে দেয়। ওর মা মিসেস নাদিরা চৌধুরী খুবই চিন্তিত। কী করবেন ভেবে পান না। ভাবেন, ওকে মারতে। কিন্তু চিন্তা করেন, আহা! মেয়ে আমার কত ছোট। বয়স সাড়ে আট।
লিরারা বিত্তশালী। ওর মা-বাবার স্বপ্ন ও বড় ডাক্তার হবে।
দুই.
লিরা কাঁদছে। ওর মা রান্নাঘরে। অ্যাঁ…অ্যাঁ…না…না…। আমি আর বই পড়ব না। সব সময় শুধু পড়া আর পড়া। আমি ছোট মানুষ অত বই কি পড়তে পারি? সব ভেঙে, ছিঁড়ে ফেলব। এমনকি বইও, কতোগুলো বই। লিরার কান্না শুনে ওর মা রুমে ঢুকলেন। মা বললেন, কী হয়েছে মামণি, এত কান্না কিসের? আমি রান্নাঘর থেকে শুনতে পাচ্ছি। লিরা বলল, না আমি বই পড়ব না। বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। আব্বুকে বলবো, কালকেই চলে যাবো দাদুর বাড়ি। ইস্, দাদুমণিটা কত ভালো, বেশি পড়তে বলে না। কতো সুন্দর দাদুর বাড়ি। পুকুরপাড়ে কতো মজা। রাতে দাদুর কাছে পরীর ডানার গল্প, পেটুক ভূতের গল্প শুনব। হঠাৎ লিরার মনে পড়ল, দাদুর নিজ হাতে লেখা একটি ছড়ার কিছু লাইন :
এক যে ছিল পেটুক ভূত,
খিলখিলিয়ে হাসে।
খাবার পেলেই গাছের ডালে,
তিড়িং বিড়িং নাচে।
রাত হলেই …। ইস্ এর পরের লাইন আর মনে পড়ল না। দাদুর কত বই। দেশ-বিদেশের মজার গল্প। কালকেই চলে যাবো। অ্যাঁ…..অ্যাঁ…. ।
– ছি: কাঁদতে নেই মামণি। তুমি অনেক বড় ডাক্তার হবে। তোমাকে পড়তে হবে, বই ছেঁড়া যাবে না। ভালো কথা, মামণি তোমার আব্বু কত খেলনা এনেছে। সবগুলোই দারুণ, পুতুল, বিড়াল ছানা, কতো কি, চলো মা আমরা খেলব। খেলনার কথা শুনে লিরা আনন্দে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগল।
– সত্যিই আম্মু, আসলেই আব্বুটা কতো ভালো। কিন্তু পড়তে বলে। ঐ মিনার আব্বুটাও না এরকম। ওকে শুধু পড়তে বলে। কত বলি আব্বু আমি ছোট মানুষ। এত বই কি পড়তে পারি?
– খেলনাগুলো দেখে শুয়ে পড়তে হবে। শরীর খারাপ করবে, চলোতো। আহ্ চল আম্মু। মা ও লিরা ঘরে গেল। লিরা খুশিতে বলতে লাগল, কী মজা! কী মজা!! মজার খেলনা এ্যাঁ, এটা কী? বিমান! হে… হে… হে…।
– এখন রাখ মা। চল ভাত খাবে। মুরগির মাংস রান্না করেছি। মা ও লিরা রান্নাঘরে গেল। মা লিরাকে ভাত খাইয়ে দিলেন এবং পানি খাইয়ে ঘুম পাড়াতে ঘরে নিয়ে গেলেন। তিনি লিরাকে ঘুম পাড়াচ্ছেন আর ভাবছেন, ইস্ বড় জেদি তো এই মেয়ে আমার। ওতো সারা দিন অফিসে আর আমি, যত জ্বালা সহ্য করি। আচ্ছা স্কুলের নাজমা ম্যাডামের কাছে গেলে কেমন হয়। ওনি খুবই জ্ঞানী এবং ধার্মিক মহিলা।
তিন.
বারান্দায় বসে তরকারি কাটছেন নাজমা ম্যাডাম। টবে ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে কাজের ছেলে রবি। ম্যাডাম লিরার মা কে দেখে বললেন, কী ব্যাপার নাদিরা এ বেলা। বসো। ম্যাডাম টুল এগিয়ে দিলেন। এবার লিরার মা বসলেন।
-এই তো, এলাম আর কি। লিরা স্কুল ছুটির পর গেছে ওর বান্ধবী মিনাদের বাসায়, তাই ভাবলাম যাই আপার কাছে। উনি আবার একা, তা কেমন আছেন আপা।
– কি আর থাকব বলো। আল্লাহ্ যেমনটি রেখেছেন। কাটছে দিনকাল। আচ্ছা, তোমাকে যে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে, কী ব্যাপার?
– কী আর বলব আপা, লিরাকে নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না।
-ওর কী হয়েছে বলতো? ওর কি শরীর খারাপ করেছে?
– না সে রকম কিছু হয়নি, আসলে ও ইদানীং পড়ালেখা একদম করতে চায় না। পড়ার কথা বললেই, সে কি কান্না।
– ও বুঝলাম, আচ্ছা আমরা আগে চা খাই, তার পর না হয় কিছু পরামর্শ দেই। ম্যাডাম রবিকে ডাকলেন, এই রবি শোনতো, ফ্লাস্কে চা আছে নিয়ে আয়, আর হ্যাঁ বিস্কুট আর পানি আনিস।
– আনতাছি দাদীমণি, খাড়ান। কাজের ছেলে রবির জবাব।
– কি দরকার ছিল এসবের আপা, এই যে রবি শোন দাদু, নাস্তা আনিস না? রবি হেসে বলল, এইডা কি কন দাদীমণি। আইছেন যখন খান। না খাইয়া যাইবেন এইডা কেমন হয়, আমি আনতাছি। রবি চা আনল। চা খেতে খেতে ম্যাডাম বললেন শোন নাদিরা, আমার মনে হয় কি, পরিবেশের কারণেই এমনটি হচ্ছে।
– কী? পরিবেশ! কি যে বলেন আপা।
– হ্যাঁ, পরিবেশ। তবে এটা সে পরিবেশ নয়।
– মানে! বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
হঠাৎ নাজমা ম্যাডামের স্বামী এলেন। মিসেস নাদিরাকে দেখে তিনি বললেন, কী ব্যাপার এ বেলা।
– এই তো ভাই, ভালো আছেন।
– হ্যাঁ, ভালো আছি। তুমি ভালো তো। ঠিক আছে তোমরা গল্প কর, আমি না হয় আসি।
– সেকি, তুমিও বস। বললেন নাজমা ম্যাডাম।
– না নাজমা। তোমরা গল্প কর। এই রবি, পানি নিয়ে আয়তো, ওযু করব।
এবার নাজমা ম্যাডাম বললেন, আচ্ছা, আমি বলতে চাইলাম পরিবেশ, তাই না নাদিরা।
– হ্যাঁ, পরিবেশ। উত্তর দিলেন মিসেস নাদিরা।
– যেহেতু এতে অন্য কোন সমস্যা হচ্ছে না। সে, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম-বিশ্রাম এবং বেড়ানোসহ কোন কিছুই অভাব বোধ করছে না তাই আমার মতে একটি সুন্দর রিডিং রুমের ব্যবস্থা করলে এটা দূর হতে পারে। তবে এটা, কোন সাধারণ রিডিং রুম নয়, একটু ভিন্ন। কথায় বলে না যে, “বন্যেরা বনে সুন্দর, আর শিশুরা মায়ের কোলে।” অর্থাৎ যে যেভাবে চায় তাকে সেভাবেই রাখ, আর তা না হলে, বিপরীত হয়। তা ছাড়া সে শিশু। তার মন, মানসিকতা একটু ভিন্ন। তাই এরকম হতেই পারে, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আচ্ছা নাদিরা, তুমি কি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার কর? না মানে পড়ার ব্যাপারে একটু খারাপ ব্যবহার আর কি।
– কই, নাতো। আমি ওকে ঠিকমত খাওয়াই, পড়াই, ঘুম পাড়াই। কোন খারাপ ব্যবহার তো করি না। কেন, আজই তো সে, ওর বান্ধবী মিনার বাসায় গেল, আমি তো বারণ করিনি।
– শোন নাদিরা, তোমাকে পড়ার বেলাও এটা মনে রাখতে হবে যে, ওকে এমনভাবে পড়ানো উচিত, ও যেন এতে কোন শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। ও যখন বুঝবে না, তখন ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয়, বরং ওকে বুঝিয়ে বলতে হবে, আর তাতেও যদি না বুঝতে চায় তবে অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তাছাড়া টেবিলে অনেক বই একত্রে রাখা উচিত নয়। সেলফে রাখতে হবে। যেটা প্রয়োজনে শুধু সেটা, লেখার খাতা আর কলম থাকবে।
– ও তাহলে বুঝলাম। লিরা টেবিলে অনেক বই দেখলে কেন বলে, ‘এত বই! পড়ব কিভাবে; ইংলিশ, বাংলা, অঙ্ক এত সব।’ আসলে সে, এত বই দেখলে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তাই না ম্যাডাম।
– হ্যাঁ, ঠিক তাই। ম্যাডাম উত্তর দিলেন।
-আচ্ছা, আপনি বললেন অন্য পদ্ধতি সেটা আবার কী?
– এটা হচ্ছে, ওর ঘরের পরিবেশ। ঘরটি সুন্দর করে সাজাতে হবে। ঘরে একটি ছোট বেড থাকবে। কারণ ও যখন ক্লান্ত হবে, তখন একটু বিশ্রাম নিবে। বেডের এক পাশে একটি বুকসেলফ থাকবে। সেলফে ওর ক্লাসের বই, খাতা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে। আর পাশাপাশি বিভিন্ন মজার গল্পের বই, সাহাবীদের জীবনী ইত্যাদি বইও থাকবে। সেলফের পাশে ঠিক যেখানে জানালা আছে, সেইখানেই পড়ার টেবিল থাকবে। টেবিলে ঘড়ি থাকবে। এতে করে সে সময় দেখে পড়া পড়বে। ছোট থেকেই নিয়মানুবর্তিতা শিখবে।
টেবিলে একটি ছোট ফুলের টব রাখলে মন্দ নয়। প্রতিদিন বাগানের টাটকা ফুল সাজিয়ে রাখা যায়। টেবিলে গ্লোব তো অবশ্যই রাখতে হবে। এতে ভূগোল সম্পর্কে জ্ঞান দান আরও সহজ হবে। সে বইয়ে যা পড়বে বাস্তবে তা দেখবে এবং বুঝবে। ফলে তাকে বেশি পড়তে হবে না। দেয়ালে বিভিন্ন রঙবেরঙের ইয়ার ক্যালেন্ডার টাঙিয়ে রাখতে হবে, আর বাংলাদেশের একক মানচিত্র ও পৃথিবীর মানচিত্র তো অবশ্যই রাখতে হবে।
জানালার বাইরে ছোট সুন্দর একটি ফুলের বাগান করতে হবে। এখানে বিভিন্ন ফুলের গাছ, যেমন- গোলাপ, গন্ধরাজ, কামিনী ইত্যাদি লাগাতে হবে। এতে কিন্তু সাহিত্যবোধও জন্মাতে পারে। আর এরকম পরিবেশেই শিশুদের শিক্ষাদান করা উচিত। শিশুরা ভাববে যে, পড়ালেখা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়, বরং মজার বিষয়। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এই যে, শিশুদের কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিভিন্ন মজার ও শিক্ষণীয় গল্প শুনানো উচিত। ছোট থেকেই কুরআন তেলাওয়াত ও নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেহেতু, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের ধার্মিক হিসেবেও গড়ে তুলতে হয়। কারণ একটাই, এরা উচ্চ শিক্ষিত হবে আর এরাই ইসলামকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে। বিশ্বে আজ যোগ্যতাসম্পন্ন মুসলমানের অভাবে ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে এবং বুঝাতে না পারার কারণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। ইসলামের অনেক বাস্তব সত্য জিনিস আমরা প্রমাণ করতে পারছি না। ফলে আমরা কত নির্যাতিত, লজ্জিত আর ছোট হচ্ছি। কারণ আমাদের হারানো গৌরব, আর অতীত বিশেষ করে, অষ্টম শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত, যখন সমগ্র ইউরোপ আর আমেরিকার খ্রিষ্টানরা অন্ধকার আর কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল তখন পশ্চিম আন্দালুসিয়া থেকে পূর্ব খোরাসান ও গজনি এবং আরব ভূখণ্ডে মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছিল। তারা নিত্যনতুন জিনিস আবিষ্কার করে, তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। স্পেনের তারিক বিন জিয়াদের মত মহান সেনানায়ক, ইবনে সিনা, ইবনে খালদুন এবং জাবির ইবনে হাইয়ানের মত বড় বড় মুসলিম বিজ্ঞানীদের ইতিহাস বর্তমানে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জানানো হচ্ছে না। এটাও এক ধরনের ষড়যন্ত্র। ওরা আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। তাইতো আমরা এত পিছিয়ে। আমাদের ফিরে পেতে হবে আমাদের হারানো অতীত আর গৌরব। আমরা আর কত নির্যাতিত আর অপমানিত হবো? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। যেন সবাই বুঝতে পারে, ইসলাম আসলে কোনো কাল্পনিক ধর্মের নাম নয়। বরং পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এতদিন মুসলমানরা অন্ধকার আর পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল কিন্তু আনন্দের বিষয় এই যে, বিংশ শতাব্দীতে এসে মুসলমানরা আবার জেগে উঠেছে এবং আস্তে আস্তে ফিরে পাচ্ছে তাদের হারানো গৌরব।
আমাদের সৃষ্টির মূল কারণ হচ্ছে, আমরা আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। আমরা পৃথিবীতে থেকে তার নেয়ামত ভোগ করব, আর সাথে সাথে তার সকল হুকুম-আহকাম পালন করব। যেমন ধর, ‘বিজ্ঞান’ এটা কিন্তু তারই শ্রেষ্ঠত্বের একটি প্রমাণ। এটা প্রমাণ করে আমাদের ভেবে দেখা উচিত যে, তিনি কত বড় ও বিস্ময়কর। তিনি একাই কিভাবে এই মহাবিশ্বজগৎ সৃষ্টি করলেন, যেখানে কত গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সিপুঞ্জ ও নীহারিকা। তাহলে চিন্তা কর, আমরা এই সামান্য সৌরজগতের একটি ক্ষুদ্র গ্রহের কত সাধারণ মানুষ। বিশ্বে আজ মানুষ সৃষ্টিকর্তার আকার-আকৃতি ও অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীদের ভেবে দেখা উচিত যে, সকল ক্ষমতা তারই এবং তিনি মানুষকে ক্ষমতা দিতেও পারেন, আবার কেড়ে নিতেও পারেন এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
এতক্ষণ ম্যাডামের কথাগুলো শুনে মিসেস নাদিরা খুবই অবাক হলেন। এতদিন পর যেন তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন। তার চোখে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তিনি খুশিতে বলতে লাগলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনার মত মা যদি প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে থাকত তাহলে আমাদের মা-বোনেরা এত নির্যাতত হতো না। এখন বুঝতে পারছি যে, একমাত্র ইসলামই নারী জাতিকে মর্যাদা দিয়েছে। যার প্রমাণ বর্তমান ইরান ও মালয়েশিয়ার মত মুসলিম দেশ। পশ্চাত্যের নারীদের থেকে মুসলিম নারীরা অনেক স্বাধীন এবং কম নির্যাতিত। ইরানের ইসলামী বিপ্লব বর্তমান মুসলমানদের গৌরব।
– হ্যাঁ এটাই বাস্তব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান যখনই আমাদের কোন মুসলিম দেশ উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের আইন চালু করছে, তখনই চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে সে দেশ পরাজয় বরণ করছে। আর এতে আমরা মুসলমানরাও দিন দিন সাহস, শক্তি হারিয়ে ফেলছি।
– হ্যাঁ, মুসলমাদের অনৈক্য মনোভাবের কারণেই আজ ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, সিরিয়া, লেবানন, গুজরাট, চেচনিয়া আর মিয়ানমারের নিরীহ মুসলমানরা মরতে বসেছে।
চার.
– কইগো লিরার মা। ভীষন খিদে পেয়েছে, খেতে দাও…।
– তুমি হাত মুখ ধুয়ে এসো, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
– কি ব্যাপার নাদিরা। আমার লিরামণি কোথায়?
– ওতো মিনাদের বাসায় গেছে, ফেরেনি… ।
লিরার বাবা রাসেদ চৌধুরী হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসলেন। লিরার মা টেবিলে খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন।
– অ্যাই শুনছ। আজ না আমি নাজমা ম্যাডামের বাড়ি গিয়েছিলাম। লিরার ব্যাপারে কথা বলতে…।
– কি বলছ, ঠিক বুঝলাম না। খুলে বলতো।
মিসেস নাদিরা সব খুলে বললেন চৌধুরী সাহেবকে, কথাগুলো শুনে রাসেদ চৌধুরী খুবই খুশি হলেন।
– হ্যাঁ গো, আমাদের লিরা বড় ডাক্তার হবে, শুধু তাই নয়, সে হবে ইসলামের একজন খাদেম।
পাঁচ.
লিরার পড়ার ঘরটি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। লিরা ঘরে ঢুকতেই অবাক….।
– এ কি! এসব কি করে হলো। এত সুন্দর ঘর। এখানে কি আমি পড়ব, আম্মু?
-হ্যাঁ, এটা তোমার পড়ার ঘর মামণি।
– পড়ালেখা করলে বুঝি এরকম ঘর পাওয়া যায়, তাই না আম্মু। তাহলে আগে কেন বলনি?
– এখন থেকে পড়ালেখা করবে তো মামণি। বই ছিঁড়বে না, দুষ্টুমি করবে না।
– না মা! কোনো দুষ্টুমি করবো না। মন দিয়ে লেখাপড়া করব।
ছয়.
শুক্রবার। আজ নাজমা ম্যাডাম লিরাদের বাসায় এলেন। ম্যাডাম বসলেন।
– কি ব্যাপার আপা ভালো আছেন।
– হ্যাঁ, ভালো। তুমি ভালতো নাদিরা।
– জি, ভালো।
-আচ্ছা, নাদিরা, লিরার খবর কী। ও এখন কেমন পড়ালেখা করে?
– সত্যিই আপা! বুদ্ধিটা কিন্তু দারুণ। মেয়ে আমার সব দুষ্টুমি ছেড়ে দিয়েছে। কাজের মেয়ে চা-নাস্তা আনলো। তারা চা খেলেন।
– আচ্ছা, আজ না হয় আসি, অন্যদিন আসব নাদিরা।
নাজমা ম্যাডাম চলে গেলেন। মিসেস নাদিরা শুধু তাকিয়ে রইলেন।
সাত.
দীর্ঘ একটি বছর পেরিয়ে গেল। লিরাদের জীবনে ঘটেছে বহু পরিবর্তন। আজ লিরার পরীক্ষার ফলাফল। তাই সে স্কুলে গেছে। লিরাদের বারান্দায় আজ সবাই বসে গল্প করছেন…। হঠাৎ লিরার চিৎকার, হে…হে….আব্বু আমি ফার্স্ট হয়েছি। সবাই এক সাথে হেসে উঠল।