Home সায়েন্স ফিকশন মিশন টু আয়রনম্যান -মহিউদ্দিন আকবর

মিশন টু আয়রনম্যান -মহিউদ্দিন আকবর

(চতুর্থ পর্ব)

মহাজগতের মহাবিস্ময় নিয়ে একে একে ঘন সালফার, মিশমিশে কালো কার্বন, বর্ণিল মিথিলিন এবং গ্র্যাভিটিঅ্যাস কালারের হিলিয়াম গ্যাসের প্রাণঘাতী মেঘস্তর পেরিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত ফায়ারওয়ের ওপর দিয়ে ছুটে চলছে সুপার শাটেল স্পেসশিপ। সামনের মনিটরে ভেসে উঠছে প্রতিটি স্তরের স্বচ্ছ চিত্র। এমন ভয়াল অথচ থ্রিলিং মুডের সফরে মামা-ভাগনে কোনোদিন উড়ে চলবে কখনও কল্পনাতেও আনেনি। যদিও বিজ্ঞানচর্চার সুবাদে অ্যারোনটিক্যাল ম্যাকানিজম আর রকেটে আরোহণের ইচ্ছেটা দু’জনেরই মনের মুকুরে ভাসতো। কিন্তু এ যে এক অন্যরকম লংফ্লাইং। মিনিটে মিনেটে পটপরিবর্তন। মিনিটে মিনিটে অনুভূতিতে শিহরণ জাগানিয়া এক অনবদ্য সফর- যা ভাষায় প্রকাশ করাও কঠিন।
সুপরিসর স্পেসশিপের বিশাল ডিডিএলপি লাইভস্টাইল মনিটরে এতোসব অভূতপূর্ব দৃশ্যাবলি দেখতে দেখতে হঠাৎই ভাগনে সাবিত খানের মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে- হায় আল্লাহ! এ যে জাহান্নামের ওপর দিয়ে চলেছি!!
ওর বিস্ময় প্রকাশের স্টাইল দেখে রোবোসার্জেন্ট খানিকটা ম্যাটালিক আওয়াজে হেসে নিয়ে বলে- না, না। এটা জাহান্নাম হবে কী করে। জাহান্নাম সেতো কেবল ভয়াবহই নয়, তারচেয়েও ভয়াল এবং ভয়ঙ্কর। জাহান্নামের উপর দিয়ে উড়ে যাবে এমন কোনো উড়োযান আমরা কেন, আমাদের জানা তথ্য মতে মহাজাগতিক বলয়ে অন্যকোনো গ্রহ-গ্রহান্তরেও আবিষ্কার হয়নি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কাল কিয়ামত অবধি চেষ্টা চালিয়েও সেটা তৈরি করা ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের কেন সৃষ্টি জগতের সেরা জীব মানুষের পক্ষেও সম্ভব হবে না।
রোবোসার্জেন্টের কথাশুনে মামা খানিকটা গম্ভীরভাবেই বললেন- এই যে হাজার হাজার কিলো বিস্তৃত কেবল লেলিহান শিখা দেখছি, এর শেষ কোথায়?
রোবোসার্জেন্টে বিজ্ঞের মতো বললো- আমরা এর কয়েকটি স্তরের সন্ধান পেয়েছি। মহাশূন্যে কোনো কোনো ফায়ারওয়ের বিস্তার তোমাদের পৃথিবীর হিসাব মতে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হাজার কিলোমিটার। কোনো কোনোটার বিস্তার ষাট থেকে সত্তর হাজার কিলোমিটার। এগুলো হলো ছোট ছোট ফায়ারওয়ে। এ পর্যন্ত আমরা সবচেয়ে দীর্ঘ ফায়ারওয়ে দেখেছি নেবুলা থেকে আটাশ হাজার ন্যানোমিটার দক্ষিণ গোলার্ধ ঘেঁষে এবং সিজন গ্যালাক্সির প্রায় কাছাকাছি। এটি পরিবেষ্টন করে আছে একটি রহস্যজনক কক্ষপথের প্রবেশদ্বার।
সাবিত জানতে চায়- এই ফায়ারওয়ের দৈর্ঘ্য কত?
– হ্যাঁ, সেটাই তো বলছি। এই ফায়ারওয়েটির দৈর্ঘ্য হলো তোমাদের পৃথিবীর হিসাব মতে তিন লক্ষ কিলোমিটার। আর এই ফায়ারওয়ের আগুনের স্ফুটনাঙ্ক হলো সর্বনিম্ন সতের হাজার ক্যালভিন। যেখানে পুরু স্তরবিশিষ্ট কয়েক হাজার টন স্টেনলেস পিওর স্টিল ফেলে দিলেও চোখের পলকেই তা গলে বাষ্পীভূত হয়ে যাবে।
– ইয়া আল্লাহ! আমরা এমন ভয়াবহ তাপমাত্রার ফায়ারওয়ের ওপর দিয়ে যাচ্ছি।
– নাহ্ যাচ্ছি আর কোথায়, এরই মধ্যে আমরা তো ফায়ারওয়ে পেরিয়ে অনেক দূরে চলে এসেছি।…
রোবোসার্জেন্টের কথা শেষ হতে না হতেই ফণা তোলা কালনাগিনী ফসফসানির মতো একটা শব্দ এসে সবার কানে লাগে। সাবিত এতে সচকিত হতেই রোবোসার্জেন্ট একগাল ম্যাটালিক হাসি উপহার দিয়ে বলে- এই তো আমরা স্কাইল্যাবে পৌঁছে গেছি।
তারপর হালকা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে এয়ার স্পেসশিপটা স্থির হয়ে যায়। অমনি ঘুলঘুলির মত গোলাকার বহির্গমন পথে এলিভেটরে চেপে সবাই স্পেশিপ থেকে নেমে আসে স্কাইল্যাবের ক্রিস্টাল বেইজপ্যাডে। আগেই সেখানে লাল কার্পেট বিছিয়ে মানববিজ্ঞানীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হয়েছিলেন রিসোলেটিং প্রভিন্সের প্রধানবিজ্ঞানী ডিকেটর দারুদ গোরিয়ান বার্দে। তিনি পরিষ্কার আরবি ভাষায় আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম জানালেন। এবং হাসিমুখে দ্রুত এগিয়ে এসে প্রথমে মামা আসিফ আরমান ও পরে ভাগনে সাদিত খানের সাথে তার হিম-শীতল ম্যাটালিক হাত মিলিয়ে করমর্দন করলেন। পাশাপাশি প্রত্যেকের হাতে তুলে দিলেন চোখ ধাঁধানো দ্যুতি ছড়ানো হীরার ফুল সমৃদ্ধ একগুচ্ছ স্টিক। তার থেকে আবার অসাধারণ একটা সৌরভ ছড়িয়ে চারদিক সুবাসিত করে তুলেছে।
মামা-ভাগনে ভেতরে ভেতরে বেশ পুলক অনুভব করেন। দু’জনেই ওয়ালাইকুমুস সালাম বলে বিজ্ঞানী ডিকেটর দারুদ গোরিয়ান বার্দের সালামের জবাব দেয়।
ওদের বেশ সমাদর জানিয়ে সঙ্গে নিয়ে ডিকেটর দারুদ গোরিয়ান বার্দে স্কাইল্যাবের অফিসিয়াল ডোমে প্রবেশ করেন। ডোমের ভেতরটা বেশ পরিপাটি। ডিকেটর গোরিয়ান বার্দের বসার কক্ষটাও দারুণ সুনসান। কক্ষের ঠিক মাঝখানটা জুড়ে সুবৃহৎ ক্রিস্টাল গ্লাসের রাউন্ড টেবিল। টেবিলের চারপাশে সবুজ শাইনিং পান্না পাথরে নির্মিত ছয়টি সুসজ্জিত চেয়ার। চেয়ারগুলোর ঠিক মধ্য অবস্থানে রুবি পাথরের তৈরি রক্তলাল রঙের একটি চেয়ার।
মামা আসিফ কমনসেন্স খাটিয়ে বুঝে নেন, ওই আসনটি নিশ্চয় ডিকেটর গোরিয়ান বার্দের জন্য নির্ধারিত। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে আসনটির ডানের চেয়ারের সামনে নিজে দাঁড়িয়ে ভাগনে সাদিতকে লাল চেয়ারটির বামের আসনে বসার ইঙ্গিত করেন।
এরই মধ্যে ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে তার আসনের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন- সিটডাউন প্লিজ।
রোবোসার্জেন্ট অ্যাট আর্মস না বসে ডিকেটর গোরিয়ান বার্দের আসনের ঠিক পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ব্যাপারটা লক্ষ করে মামা বললেন- তুমি আবার আমাদের ভুলত্রুটি ধরার জন্য ওখানে গিয়ে দাঁড়ালে না তো!
মামার কথায় একটা মৃদু হাসির রোল পড়ে গেলো। ডিকেটর দারুদ গোরিয়ান বার্দে বললেনÑ এটা আমাদের এখানকার প্রটোকল। এ নিয়ে তোমরা ভেবো না।
মামা একটু লজ্জা পেয়ে বললেন- না, এমনি একটু ফান করলাম।
ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে বললেন- সে আমি বুঝতে পেরেছি। এসো আমরা কাজের কথায় আসি। বন্ধুদ্বয়! আমরা জানি তোমরা মামা-ভাগনে। কিন্তু আমাদের কাছে সে প্রশ্নটা বড় নয়। আমরা জেনেছি তুমি তোমাদের দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের মাঝে সেরা। আর তোমার ভাগনে তোমারই ফলোয়ার এবং রিসার্চ ফেলো। এজন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বের সেরা দেশগুলোও তোমাদের পেতে বার বার তোমাদের সরকারের কাছে ধরনা দিয়েছে। তোমাদের সরকার একটি বিপ্লবী সরকার বলেই বিশ্বের কোন অক্ষশক্তির কাছে এবং কোনো প্রলোভনের কাছেও মাথা নত করেনি।
আমরা একথাও বুঝতে পেরেছি যে, আমরা যদি হেল্পের জন্য তোমাদের চাইতাম তাহলে তোমাদের সরকার তোমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমাদের অবিশ্বাস করতেন। তাছাড়া আমরা কখনোই মানুষের আকৃতি নিয়ে তোমাদের সরকারপ্রধান বা তোমাদের চিফ সায়েন্টিস্টের সামনে হাজির হতে পারতাম না। আমাদের প্রতিনিধিদের দেখে তারা হয়তো ভড়কেই যেতেন। কারণ, তাদের ধারণায় ইউএফও আর এলিয়ন জেঁকে বসে আছে। তারা আমাদেরকে ভীষণ ভয় পায় এবং শত্রু মনে করে।
মামা এবার ডিকেটর দারুদ গোরিয়ান বার্দের কথায় বাদ সাধেন, তিনি বলেন- আমি বলতে পারি এই ব্যাপারটা তোমাদের মাঝেও আছে। তোমরা মানুষকে মনে করো খুবই হিংসুটে, ভয়ানক এবং অবিশ্বাসী। যে কারণে তোমরা দুনিয়াতে সবসময় গোপন মিশন পাঠাও এবং তাও পাঠাও রাতের অন্ধকারে।
মামার কথায় বিজ্ঞানী মুচকি হাসেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেনÑ তোমরা হচ্ছো আশরাফুল মাখলুকাত। আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান আর তথ্য প্রযুক্তিতে যতই অগ্রসর হইনা কেন, তোমাদের অবস্থান সবসময়ই আমাদের থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। আমাদের সাথে বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে তোমাদেরই আগে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও প্রাণিজগতে আমাদের জাতির বিকাশটা তোমাদের মহাজগতে আগমনের হাজার হাজার বছর আগে। এমনকি আমরা বেঁচেও থাকি তোমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি দিন।…
মামা তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলেন- তোমরা যে বেশিদিন বেঁচে থাকো সে আমরা ইতোমধ্যেই তোমাদের কথাবার্তা থেকে বুঝে গেছি। কিন্তু এই বেঁচে থাকা সর্বোচ্চ কতদিন বা বছর অবধি?
– এই ধরো আমরা ন্যূনতম তিন হাজার বছর এমনিতেই বেঁচে থাকি। আমাদের মাঝে অনেকে আছে যাদের বয়স দশ হাজার বছরও পেরিয়ে গেছে।
– দ..শ.. হা..জা..র..  ব..ছ..র..!
– অবাক হচ্ছো বন্ধু? শুনলে আরও চমকে যাবে।
– সে আবার কি?
– এই যে আমাদের দেখতে পাচ্ছো তোমাদের হাতে গড়া রোবটের মতো, আসলে এসব স্রেফ আমাদের পোশাক মাত্র।
– তার মানে?
– এই মেটালিক পোশাকের ভেতরেই আমাদের অবস্থান। যেমন তোমরা আছো তোমাদের পোশাকের ভেতর।
– বুঝলাম। কিন্তু আমরা পোশাক ছাড়লে আমাদের একটা আকার নিয়েই থাকি।
– আমাদের অবশ্য তেমন কোনো আকার নেই। সেজন্য আমাদের তোমরা দেখতে পাও না। কেবল আমাদের পোশাকের দিকটাই তোমাদের নজরে আসে।
– তাহলে তোমাদের আকার-আকৃতিটা কি ধরনের?
– আমাদের কোনো আকৃতি নেই। তবে…
– তবে!
– ইচ্ছা করলে আমাদের জ্ঞাতি ভাইয়েরা কোনো না কোনো আকৃতি ধারণ করতে পারে।
– যেমন?
– এই যেমন ধরো যে কোনো প্রাণী। অর্থাৎ বাঘ, শিয়াল, হাতি, ঘোড়া, গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল, সাপ, ব্যাঙ এমনকি তারা মানুষের আকারও ধারণ করতে পারে।
– তাহলে আর সমস্যা কি? তোমরা তো মানুষ সেজেই আমাদের সরকারের কাছে থেকে বিভিন্ন প্রযুক্তির থিওরি চেয়ে নিয়ে আসতে পারো। এমনকি আমাদের প্রয়োজন হলে বৈধ উপায়ে পৃথিবীর সেরা সেরা বিজ্ঞানীদের তোমাদের অতিথি করে নিয়ে আসতে পারো।
– না, না, না, তা আর পারি না।
– কেন নয়?
– ওই যে চিরন্তন একটা অবিশ্বাস আর এই অবিশ্বাস থেকে আমরা পরস্পর পরস্পরকে জীবন-মরণের শত্রু বলে জানি। কেন দেখছো না, কখনও আমাদের কোনো গবেষক বা পর্যবেক্ষণ টিম পৃথিবীতে গিয়ে নামলে- তোমাদের বিভিন্ন দেশের এয়ারফোর্সের লোকেরা কিভাবে আমাদের ধরার জন্য পাগল হয়ে যায়। কিভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে ভয়াল সব যুদ্ধবিমান আর রকেট নিয়ে তাড়া করে। যদিও তারা আমাদের টিকির নাগালটা পর্যন্ত পায় না।
– আবার উল্টোটাও তো হয়।
– যেমন?
– তোমাদের দেখে আমরা মানে মানুষেরা ভয়েই জুবুথুবু হয়ে পড়ে।
– এটাও ঠিক। কিন্তু তাতেও আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হই সবচেয়ে বেশি।
– সেটা আবার কেমন করে?
– মানুষরা আমাদের দেখে ফেললে আমরাও অনুসন্ধান-গবেষণার কাজ বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি পালিয়ে আসতে বাধ্য হই।
– তাহলে বলতে চাও এখানেও একটা অবিশ্বাস কাজ করে?
– নিশ্চয় করে। আর এজন্যই আমাদের মাঝে সবচাইতে দুষ্টু এবং ঘৃণিতরা অনেক সময় মানুষের ক্ষয়-ক্ষতি করেও আনন্দ পায়। কারণ ওরা তো জানেই ওরা মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু আমাদের মহা বাদশাহ এবং আমরা যারা শিষ্টাচার মেনে চলি, তারা কখনোই আমাদের বাদশাহর বিধি-বিধান অমান্য করি না।
– যাক কাজের কথা ফেলে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়ে গেলো। এবার বলো, আমাদের তোমরা দুনিয়া থেকে তুলে এনেছো কেন?
– বন্ধু! এরই মধ্যে তোমাদের সাথে আমাদের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির যে আলাপ-সালাপ হয়েছে, তাতে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো কেন তোমাদের এখানে সসম্মানে তুলে আনা হয়েছে।
– তা অবশ্য কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি। কিন্তু কেউই বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলতে পারেনি। অথবা তাদের বিশেষ কোথাও বাধা আছে।
– নিশ্চয়ই। আমাদের রাজ্যে সবাই নিজ নিজ কোড মেনে মেপে কথা বলে। তোমাদের পৃথিবীর মানবজাতির মতো এখানের কেউই সহজে সীমা লঙ্ঘন করে না। আবেগ অথবা অতি উৎসাহের কারণে কেউ সামান্য সীমালঙ্ঘনের কাছাকাছি চলে গেলেই সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস তাদের গ্রেফতার করেন অথবা সাথে সাথে স্থানচ্যুত করে অন্য কাজে নিয়োগ করে দেন।
– এটা অবশ্য আমরা স্বচক্ষেই দেখেছি। আর একথাও জেনেছি, আমাদের এখানে আনার চূড়ান্ত উদ্দেশ্যটা তুমিই আমাদের বলে দেবে।
– ওয়েল, ভেরি ওয়েল। আমরা চেয়েছিলাম, তোমাদের কাছ থেকে কপি করে আনা থিওরি অব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড বাস্তবায়নে আমরা তোমাদের থেকে হাতে কলমে শিক্ষা নেবো।
– কিন্তু তোমার আগে সাদিতকে অদৃশ্য থেকে জানানো হয়েছে- ‘আমরা যখন বুঝবো, তোমরা আমাদের মতো মেটালিক হয়ে গেছো এবং আমাদের বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠেছো কেবলমাত্র সেদিনই আবার পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারবে’। -বলি এসব কথার মানেটা কি?
– ও হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। এই কথা? সাদিতকে আমাদের লোকেরা একধরনের টেলিপ্যাথি থ্যারাপি দিয়ে স্বপ্নের ঘোরে ওসব বলেছে। ওটা ছিলো তোমাদের পৃথিবী থেকে তুলে আনার একটা পরিবেশ সৃষ্টির কৌশল মাত্র। যাক সে কথা। ওসব এখন ভুলে যাও। পাস্ট ইজ পাস্ট।
– বুঝতে পেরেছি। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তি এমনকি জ্ঞান-বিজ্ঞানেও তোমরা আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রসর। অথচ আমাদের সামান্য একটা থিওরি নিয়ে তোমাদের এতো উৎসাহের কারণটা কি একটু বুঝিয়ে বলবে?
– অফকোর্স। তোমরা তো এটা জানো, আমাদের যত জ্ঞান-গরিমাই থাক না কেন, মানুষের যে মস্তিষ্ক তা অনেক উর্বর। তবে অসংখ্য মানুষ তা সঠিকভাবে ব্যবহার করে না। যারা করে তারা আমাদের থেকে অনেক অনেক সার্প, অনেক অনেক জিনিয়াস। সত্যিকথা বলতে কী, আমরা আসলে মোটা বুদ্ধির জাতি। যুদ্ধ, হিংসা, কলহ, অশান্তি আর একের ওপর আরেকের প্রভাব বিস্তার অথবা অপরকে ধ্বংস করে দেয়াই আমাদের কাজ। এর মাঝ দিয়েই নিত্য নতুন ফর্মেটে আমাদের রাজ্যকে সাজানো এবং নিত্য নতুন আবিষ্কারের কাজ চলে। তবে তুমি মনে কিছু করো না প্লিজ! ইদানীং আমাদের মিশনগুলো পৃথিবীতে গিয়ে যা দেখতে পাচ্ছে এবং যে তথ্যাদি সংগ্রহ করে আনছে- তাতে মনে হয় সৃষ্টির সেরা মানবজাতির মাঝেও আমাদের মত হিংসুটে, যুদ্ধবাজ, লুটেরা আর খুনিচক্রের উদ্ভব হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়ে ঘৃণ্য পথেও পা বাড়াচ্ছে।
– যেমন?
– কিছু মনে করো না, অফ দ্যা রেকর্ড বলছি। আমাদের তো এক গ্রহবাসীর সাথে আরেক গ্রহবাসীর লাগালাগি। আর তোমরা আমাদের চেয়ে আয়তনে অতিশয় ক্ষুদ্র অথচ সুজলা সুফলা বসুধা নাম একটি মাত্র গ্রহের অধিবাসী হয়ে গোত্রে-গোত্রে, সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে, এমনকি একই সম্প্রদায়ের লোক হয়েও পরস্পর পরস্পরের রাজ্য, সম্পদ, মান-সম্মান কেড়ে নেয়ার জন্য কতোইনা রক্তের নহর বইয়ে দিচ্ছো। মানুষ হয়ে নির্দয়-নিষ্ঠুরভাবে মারণাস্ত্রের ভাণ্ডার ঢেলে দিচ্ছো মানুষেরই ওপর। একই গ্রহের বাসিন্দা হয়ে, সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ জাতি হয়ে কতোসব নিকৃষ্টতম-ঘৃণ্য কাজই না মানুষ করছে। এইতো লেটেস্ট যে নিউজটা জানতে পেলাম, তাতো খুবই মর্মান্তিক এবং ঘৃণ্য ব্যাপার।
– সেটা আবার কী?
– শুনতে পেলাম মিয়ানমার নামে পৃথিবীতে একটা প্রভিন্স আছে…।
মামা বার্দের কথার মাঝখানে বাদ সাধেন। তিনি বার্দেকে শুধরে দিয়ে বলেনÑ ওটা কোনো প্রভিন্স নয়, মিয়ানমার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আমাদের জাতিসংঘের সদস্য দেশ।
– ও! আই সি!! স্বাধীন দেশ! তো সেখানে মানুষের ওপর নরপিশাচেরা যে নারকীয় বর্বরতা চালাচ্ছে… আমাদের কোনো গ্রহেই ওই ধরনের নারকীয়তা ঘটে না। ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
ডিকেটর গোরিয়ান বার্দের কথার তোড়ে মামা-ভাগনের মাথা যেন ধুলায় গড়াগড়ি যেতে চাইছে। দু’জনকে মাথা হেঁট করে বসে থাকতে দেখে ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে আবার মুখ খোলেন- সরি, ভেরি সরি। আসলে এসব বলে তোমাদের মনে কষ্ট দেয়ার জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়নি। মূল উদ্দেশ্য ছিলো তোমাদের প্রণীত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড থিওরিটা ভালোমত বুঝে নেয়া এবং এর ওপর বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই একটা নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে।…
– সেটা আবার কী?
– বিগত এক হাজার বছর আগে আমাদের একটা প্রজন্মকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে; আমাদের চিরশত্রু দৈত্যকায় ব্ল্যাকহোলের সুপারকিং আয়রনম্যান। সে দাবি করছে মহাজাগতিক দুনিয়ায় সে-ই নাকি মানুষের পরে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সেরা। তার এবং তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর ওপর পৃথিবীতে প্রবেশে কঠিনতম নিষেধাজ্ঞা আছে। তাতো তোমরা ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছো। তাই সে আমাদের প্রজন্মের ওপর গবেষণা চালিয়ে নাকি এমনসব সুপারম্যান বানাবে যারা দেখতে হুবহু মানুষেরই মতো হবে।
– ধুর ছাই। সুপারম্যান বানাবে! তার হাতে এমন কী জিনিস আছে?
– শুনেছি ওর হাতে অক্সিরাইবো মোশন আছে। তার ভেতর থেকে সে নাকি মানুষের ডিএনএ’র সন্ধান পেয়েছে। আমাদের সদস্যদের মাঝে মানুষের ডিএনএ প্রতিস্থাপন করে তাদের সুপারম্যানে পরিণত করবে। যদিও তারা সত্যিকারের মানুষ হবে না, তবুও তাদের আচার আচরণ মানুষের মতো হবে। আর তাই দিয়েই দুনিয়াবাসীকে সে ধোঁকা দিতে সক্ষম হবে।
– তাতে তার লাভটা কী হবে শুনি?
– আয়রনম্যান ঘোষণা করেছে, সুপারম্যানদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছলে বলে কৌশলে সে মানুষের আবি®কৃত বিভিন্ন উন্নয়ন ও তথ্য-প্রযুক্তিগত থিওরি হাতিয়ে নিয়ে আমাদের চেয়ে উন্নত ও পরিপাটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলবে। মানুষের আবি®কৃত পরমাণু-বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যেমে সে তার ব্ল্যাকহোলের অন্ধকার প্রভিন্সগুলোকে আলোকিত করে আমাদের মতো জাতে উঠে আসবে।
– বেশ তো ভালো কথা। তাতে তোমাদের সমস্যা কী?
– সমস্যা মানে! মহা সমস্যা। সে তো এজন্য আমাদের পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছে। আর জাতে উঠে যেতে পারলে তো কথাই নেই। তখন আমাদের গ্রহটাকেই পুরোপুরি গ্রাস করতে চাইবে। চিরদিনের জন্য আমাদের গোলাম বানিয়ে তার জ্ঞাতিগোষ্ঠীদের নিয়ে এসে আমাদের গ্রহটাকেই নিজের অঙ্গরাজ্য বানিয়ে বসবে।
– হুম, তাহলে তো তোমাদের জন্য খুবই বিপদ।
– শুধু কি তাই। তারা প্রধানবিজ্ঞানীর মর্যাদা দিয়েছে একটা স্টিলথ মাকড়সাকে। ওই মাকড়সাই তাকে ইলেকট্রনিক স্পাইডারনেট বানিয়ে দিয়েছে। আর এই স্পাইডারনেট কাজে লাগিয়েই তক্কে তক্কে থেকে তার লোকেরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
– হুম, আজ তো তা নিজেদের চোখেই দেখলাম।
– ঠিক ঠিক। এক হজার বছর পর আজ আবার একটা হামলা চালাতে পেরেছে শয়তানটা। ও ব্যাটা আমাদের জ্ঞাতি বংশ একেবারে শেষ করে দিচ্ছে।
তাই আমরা ঠিক করেছি, তোমাদের থিওরি কাজে লাগাবো পরে। আপাতত জরুরি ভিত্তিতে ওই মাকড়সা বিজ্ঞানীকে আমাদের পদানত করতে হবে। আর তার আবিষ্কার করা স্পাইডারনেটটা ধ্বংস করে দিতে হবে।
ডিকেটর দারুদ গোরিয়ান বার্দের কথা শুনে এবার আর মামা রাগ না দেখিয়ে থাকতে পারলেন না। খানিকটা রাগত কণ্ঠে বললেন- এই তো তোমাদের মুখে কেবল ধ্বংস আর ধ্বংসের কথা। তোমরা আসলেই একটা হিংসুটে জাতি।
মামার কথায় ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে খানিকটা থতমত খেয়ে বলে- তাহলে।
মামা এবার শান্তকণ্ঠে বললেন- ধ্বংস নয়। আমরা কাঁটা দিয়ে কাঁটা খুলবো।
মামার কথায় সাবিত উৎসাহে তুড়ি মেরে বলে- হুররে! তুমি ঠিকই বলেছো মামা। আমাদের কাঁটা দিয়েই কাঁটা খুলতে হবে।
ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে একথার মর্ম বুঝতে না পেরে বোকার মতো প্রশ্ন হাঁকে- সেটা আবার কেমন করে?
মামা একটু বাঁকা হেসে বললেন- ওই মাকড়সা বিজ্ঞানীকে পাকড়াও করতে ওর গড়া জালটাকেই আমরা কাজে লাগাবো।
ডিকেটর গোরিয়ান বার্দেও এবার উৎসাহী হয়ে জানতে চায়- সেটা কেমন করে সম্ভব?
– সম্ভব। সবই সম্ভব। আমি যেভাবে বলবো তোমরা সেভাবে এগোবে। ওকে!
– ওকে।
– এবার তাহলে আমাদের খুলে বলো, যে গ্যালভানাজিং লোহার বারকে কেন্দ্র করে আমাদের পৃথিবীকে নিয়ে আসা, সেই বারগুলো আসলে কী? এবং কেনইবা তোমরা লাখ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবী থেকে ওগুলো সংগ্রহ করতে গেলে?
প্রশ্নটা শুনে বিজ্ঞানী ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে খানিকটা হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে- ওগুলোকে আমরা স্বর্ণের বার বানিয়ে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেবো। তবে তা এখনই নয়।
বার্দের কথায় মামা অবাক হয়ে বলেন- স্বর্ণের বার বানিয়ে! তাও আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেবে!! তাতে তোমাদের কী লাভ?
– লাভ আছে বৈকি! তা এখন ডিসক্লোজ করবো না।
– মানে?
– তাতে এর আকর্ষণটা কমে যাবে।
সাবিতের কিন্তু তর সয় না। ও আবদারের স্বরেই বলে- আহা, বলোই না।
সাবিতের আবদারে ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে একটু রহমস্যময় হাসি দিয়ে বলে- ওয়েট অ্যান্ড সি মাই ডিয়ার। তোমাদের কোন মনীষীই তো বলেছেন ‘সবুরে মেওয়া ফলে’।
– তা না হয় মানলাম। কিন্তু তোমরা লোহার বারকে সোনার পিণ্ড বানাবে কেমন করে।
– এটা আমাদের জন্য একটা মামুলি ব্যাপার। আমাদের এই গ্রহে গোল্ডসি নামে একটা প্রচণ্ড গরম সরোবর আছে। পুরোটা সরোবর জুড়ে টগবগে গরম তরল সোনার পানি ঢেউ খেলে যায়।
ইতোমধ্যেই লোহার পিণ্ডগুলোকে বিশেষ পাত্রে করে সেই সরোবরে রেখে আসা হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লোহার পিণ্ডগুলো সেখানে থাকলে তা গলে সোনার পানির সাথে মিশে যাবে। তখন আমরা সেই বিশেষ পাত্রটি তুলে এনে আগে থেকে খাঁজ করে রাখা ডাইসে ঢেলে টগবগে তরলকে ঠাণ্ডা হতে দেব। নির্দিষ্ট সময়ে তা জমে একেকটা সোনার পিণ্ডে পরিণত হবে।
সাদিত ডিকেটর গোরিয়ান বার্দের বিবরণী শুনে আরো উৎসাহী হয়ে ওঠে। ও আবার আবদারের স্বরে বলে- আমাদের সেই সরোবরটা দেখতে নিয়ে যাবে?
– কেন বলো তো? ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে জানতে চায়।
সাদিত বলে- না এমনি এমনি দেখার ইচ্ছে হলো তাই। আমাদের পৃথিবীতে তো এমন ধরনের কোনো সরোবর নেই, তাই আর কী।
মামা বললেন- পৃথিবীতে অমন সরোবর না থাকলেও চুনাপাথরের তাপে টগবগে ফুটন্ত পানির সরোবর কিন্তু ঠিকই আছে। অবশ্য তা থেকে স্বর্ণের বার তৈরি করার কোনো উপায় নেই। আরেকটা মৃত হ্রদ আছে। ওটার নাম ডেডসি। ওটা ইসরাইল, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যখানে অবস্থিত একটি সরোবর। কেউ কেউ বলে থাকে নদী। আবার কেউ বোকার মতো সাগর বলেও অভিহিত করে ডেডসিকে। আসলে ডেডসি স্রেফ একটা লবণের হ্রদ মাত্র। যৌথভাবে এর দক্ষিণ অংশের মালিক জর্ডান এবং ইসরাইল। আর উত্তর অংশের মালিক শুধুমাত্র জর্ডান। এই মালিকানা নিয়ে দুদেশের মাঝে কোনো ঠোকাঠুকি নেই।
সাদিত বললো- এই ডেডসির আয়তন ১০.২০৪ বর্গকিলোমিটার। এক হিসেবে ৩৯৪ কিলোমিটার। এই হ্রদে লবণের পরিমাণ হলো এগার কোটি ষাট লক্ষ টন। জর্ডান নদী প্রবাহিত হয়ে পড়েছে এসে এই ডেডসিতে। সে কারণে এই নদীর পানিও ভীষণ লবণাক্ত। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন প্রতি বছর জর্ডান নদী আরও আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টন লবণ এনে এই হ্রদে ফেলে। এখানে লবণের ঘনত্ব এতোটা পুরু যে এখানে কোনো কিছুই ডোবে না। কোনো কিছু ফেললে সহজে নষ্টও হয়ে যায় না। কিন্তু এর পানি কোনো মানুষ মুখে নিয়ে সাথে সাথে ফেলে দিলেও মানুষের মুখের স্বাদ অনেক দিনের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। অন্তত দু’মাস কোনো খাবারই ভালো লাগে না।
মামা বললেন- মজার ব্যাপার হলো, ডেডসির চার পাশে কিন্তু চুনাপাথর আর বেলে পাথরের উঁচু পাহাড় দিয়ে আবেষ্টন করা। আমাদের বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে ডেডসির সমতল আবিষ্কার করেছেন। তাতে দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরের সমতল থেকেও এক হাজার তিনশ দুইফুট নিচে রয়েছে ডেডসির সমতল। এ কারণে ডেডসির লবণাক্ত পানি বাইরে যাবার কোনো পথ নেই। ডেডসির লবণাক্ত পানির একটা বৈশিষ্ট্য হলো- এর ভেতরকার ব্যাক্টেরিয়াগুলো এতোটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যে, এরা হ্রদের সমস্ত জলজ অণু-পরমাণুদের চিরতরে ধ্বংস করে দেয়। ফলে এখানে কোনো তৃণলতা জাতীয় শৈবাল এমনকি কোনো প্রাণেরও সঞ্চার হতে পারে না।
এবার ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে একটু উৎসাহ নিয়ে বললো- আমরা তোমাদের ওই ডেডসি নিয়ে গবেষণা করে দেখেছি, এটা আসলে নবী হযরত মূসা এবং নবী হারুন আলাইহিস সালামের আমলের অভিশপ্ত সেই নগরীর উল্টো পিঠ হতে পারে। বনু আদ ও সামুদ জাতির পাপের কারণে আল্লাহর পবিত্র দূতেরা মানে ফিরিশতারা এসে যেই নগর বা শহরটিকে সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছিলেন। হায়রে মানুষ! আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়েও মাঝে মাঝে তোমরা এমন সব পাপে লিপ্ত হয়ে যাও যে, সরাসরি সেখানে আল্লাহর গজব নেমে আসে।
মামা বললেন- সে তো খুবই লজ্জার কথা।
গোরিয়ান বললো- সে যা-ই হোক। অনেক আলোচনা হলো। এবার কাজে নেমে পড়া দরকার।
মানববিজ্ঞানী আসিফ মামা একটা হাই তুলে বললেন- তার আগে তোমাদের পুরো ল্যাবরেটরিটা ঘুরিয়ে দেখাও। দেখি তোমাদেরই কোনো প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তোমাদের উপকার করা যায় কিনা।
গোরিয়ান খুশি হয়ে বললো- ওয়েল কাম! চলো সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখবে।
সাথে সাথে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস রোবোম্যান তার প্রধানবিজ্ঞানী ডিকেটর দারুদ গোরিয়ান বার্দের আসনের পেছন দিক থেকে সামনে চলে আসে। তারপর মূল ল্যাবে প্রবেশের মার্কারিপলিসড স্টেনলেস স্টিলের স্লাইডিং ডোরটা একটা বাটনের মাধ্যমে খুলে দেয়।
বিজ্ঞানী মামা-ভাগনেকে নিয়ে বিজ্ঞানী ডিকেটর গোরিয়ান বার্দে গর্বের সাথে ল্যাবের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।
(চলবে)

SHARE

Leave a Reply