আজকে রিনি অনেক খুশি।
গতকাল তার বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার খুশি অবশ্য কেবল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য নয়, সে খুশি অন্য কারণেও।
আজকে রিনির ছোট মামা শহর থেকে তাদের বাসায় আসবেন। আর ছোট মামা মানেই বাড়তি আনন্দ। ছোট মামা অন্যদের মতো বকাঝকা করেন না। তিনি আসার সময় চকলেট, পটেটো চিপস্সহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে আসেন। তিনি যতক্ষণ থাকেন তার মোবাইলে গেইম খেলতে দেন। তাদেরকে খুব সুন্দর সুন্দর গল্প শোনান। ছোট মামা নাকি রিনির বইয়ে লেখা ছড়া ও গল্পের মতো ছড়া, কবিতা ও গল্প লিখতে জানেন। গতবার একথা শুনে রিনির যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না! শেষে ছোট মামা যখন তার ব্যাগ থেকে ছোটমামার নাম লেখা একটি ছড়ার বই রিনির হাতে দিয়েছিল। তখন রিনির তো চক্ষু স্থির। সত্যিই তো বইয়ের গায়ে বড় অক্ষরে ছোটমামার নাম লেখা! ভেতরে মজার মজার ছড়ায় বইটি ভরপুর। তখন সে ক্লাসে ছোটমামার লেখা ছড়ার বইটি সবাইকে পড়ে শুনিয়েছিল। রিনির বান্ধীরা তো অবাক। তারা তাকে বলেছিল, আবার যখন তার ছোটমামা আসে তাদেরকে একটু দেখাতে। তারা কখনো কবি ছড়াকারদের দেখেনি তো তাই! রিনি তার বান্ধবীদের আবার ছোটমামা এলে দেখাবেন বলে আশ্বাস দিলে সবাই খুব খুশি হয়। সেদিন বান্ধবীদের সামনে ছোটমামার জন্য রিনির গর্বে বুকটা ফুলে উঠেছিল। সত্যিই তো রিনির ছোটমামার মতো ক’জন আর আছে!
এখন দুপুর ১২টা বাজে। এখনো ছোটমামা কেন এলো না। রিনি তার আম্মুকে জিজ্ঞেস করলো; ‘আম্মু ছোটমামা এখনো আসছে না কেন?’ আম্মু বলল; ‘আমি একটু আগে তোমার মামাকে কল করেছিলাম! বলেছে, এক ঘণ্টার মধ্যে এসে পৌঁছবে।’ কিছুক্ষণ পর রিনি আবার তার মাকে জিজ্ঞেস করে; ‘আম্মু ছোটমামা কোথায় এখনো তো এলো না।’ রিনির আম্মু এ দিকে অনেক দিন পর শহর থেকে ছোট ভাই আসছে সেজন্য কোরমা পোলাও রান্নার কাজে ব্যস্ত! তাই বিরক্ত ভঙ্গিতে রিনিকে বলল; ‘তুই আজ এতো অস্থির হচ্ছিস কেন বল তো! তোর মামা যখন আসবে বলছে, তখন ঠিকই এসে পৌঁছাবে।’ রিনি মিনমিন করে বলল; আমি কি আর এমনিই অস্থির হচ্ছি, ছোটমামা শেষ বার যখন এসেছিল তখন আমাকে বলেছিল; ‘রিনি তুমি যদি চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় এক কিংবা দুই নম্বর হও তাহলে তোমাকে আমি পুরস্কার দেবো।’ আর আমি যেহেতু পরীক্ষায় দুই নাম্বার হয়েছি তাই আজ মামার আগমনটা আমার কাছে একটু বেশি স্পেশাল!’
মা মেয়ের কথার মাঝখানেই ছোটমামা আসসালামু আলাইকুম আপু কেমন আছেন বলে উপস্থিত। রিনির আম্মু বললেন; ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমি ভালো আছি! তুই কেমন আছিস?’ ছোটমামা বললেন; ‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ।’ রিনির আম্মু বললেন; ‘সকাল থেকে তোর কথা জিজ্ঞেস করে করে রিনি আমাকে বিরক্ত করে ফেলছে! ছোটমামা কখন আসবে? এখনো আসছে না কেন? এমন হাজারো প্রশ্ন!’ ছোটমামা এবার রিনির দিকে তাকাতেই রিনি পাশ থেকে সালাম দিয়ে উঠল। ছোটমামা সালামের উত্তর দিয়ে বললেন; ‘মোবাইলে তোমার আম্মুর কাছে তুমি বার্ষিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছ শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। এবং আসার সময় তোমার জন্য পূর্বের ঘোষণা মতো একটি পুরস্কারও নিয়ে এসেছি।’ এই বলে ছোটমামা তার হাতে থাকা ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে একটি চকচকে রঙিন মলাটের বই রিনির হাতে দিলেন। রিনি তো বইটা হাতে নিয়ে বইয়ের নামের নিচে ছোটমামার নামটা দেখে তাতে আঙুল ইশারা করে অস্ফুট কণ্ঠে আম্মুকে বললো, ‘আম্মু এটাতো খুবই মজার উপহার।’ তারপর সে বইটি নিয়ে বান্ধবীদের দেখাতে চলে গেল।
রিনির আম্মু ও ছোটমামা তার দৌড়ে চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে হাসতে লাগলেন।