আপনার জীবনের স্মরণীয় ও শিক্ষণীয় ঘটনা জানতে চাই, জানাবেন কি? আপনার এত সাফল্য অর্জন করার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
মো: ইসমাঈল, চরফ্যাশন, ভোলা
– ছোটবেলা থেকে গল্প-উপন্যাস পড়ার খুব নেশা ছিল আমার। পড়ার বইয়ের নিচে গল্পের বই রেখে মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। মা-বাবার পায়ের আওয়াজ পেলে স্কুলের বই নিয়ে চেঁচিয়ে পড়তাম। মায়ের তীক্ষè দৃষ্টিতে একদিন ধরা পড়ে গেছি। মা বকুনি দিলেন না, শুধু বললেন, তুমি আমাকে ঠকাও? তা তো নয়। তুমি নিজেকেই নিজে ঠকাও।
মায়ের কাছে ধরা পড়া লজ্জার হলেও স্মরণীয় ঘটনা শিক্ষণীয় অবশ্যই, সেই থেকে আজ পর্যন্ত মায়ের এ কথাটি আমাকে সারাক্ষণ সতর্ক করে রাখে।
আমার অর্জনের পেছনে মা-বাবা ও অধ্যাপক আবুল বাশারের অবদান অনেক খানি।
আমি একজন আদর্শ মানুষ হতে চাই, এখন আদর্শ মানুষ হিসেবে আমি কাকে অনুসরণ করতে পারি?
মো: মহিবুর রহমান
মুড়িয়াউক, লাখাই, হবিগঞ্জ
– প্রশ্নটি পড়ে খুব ভালো লাগল মহিবুর। আদর্শ ও মহৎ মানুষ সে-ই হতে পারে পৃথিবীর সব প্রজাতির প্রতি যার ভালোবাসা-মমতা রয়েছে।
আদর্শ মানুষ হিসেবে তাকেই অনুসরণ করতে পার যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সদগুণাবলি, ন্যায়পরায়ণতা তোমাকে আকৃষ্ট করবে। তিনি দাদাজান, বাবা, মণি, শিক্ষক, মহামানব বা যে কেউ হতে পারে।
আমি ভালো সাহিত্যিক হতে চাই, তাহলে কিভাবে লিখতে হবে?
মো: সুজন মাহমুদ নূর
বাজিবপুর, কুড়িগ্রাম
– লেখালেখির কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। সাহিত্যিক হওয়ার জন্য নিজের গভীর আগ্রহ থাকা চাই। পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তোলার সাথে সাথে নানা ধরনের বই পড়তে হবে। প্রকৃতিকে দুই চোখ ভরে দেখবে, মানুষের সুখ-দুঃখকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে সেটা প্রকাশের চর্চা করলে সাহিত্যিক হওয়ার পথ সুগম হবে। পড়াশোনা করে নিজের চেনা জানা মহলকে গভীরভাবে দেখার ক্ষমতা অর্জন করলে, নিজেই উপলব্ধি করতে পারবে কিভাবে লেখালেখি শুরু করতে হবে।
আপনার প্রিয় মানুষ কে? এবং প্রিয় হওয়ার কারণ কী? কবি হতে হলে কেমন যোগ্যতা অর্জন করতে হবে?
সজীব আল মারুফ
হাজিরহাট, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর
– প্রিয় মানুষটি আমার মা। তিনি সংস্কৃতিমনা ছিলেন। নিজের হাতে দৃষ্টিনন্দন ফুলবাগান তৈরি করেছেন। চমৎকার গান গাইতেন। আমাকে এ ব্যাপারে লেখালেখির উৎসাহ জুগিয়েছেন প্রচুর। কবিতা লিখতে হলে প্রচুর কবিতা পড়তে হবে। লেখার মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশ সহায়তা করে। চারপাশের মানুষকেও জানতে হবে। ছন্দের ওপর দখল থাকলে কবিতা লেখা সহজ হবে। পড়া ও লেখার চর্চা করলে যোগ্যতা অর্জন করা নিশ্চয়ই একদিন হাতের মুঠোয় ধরা দেবে।
কিভাবে কথাশিল্পী হওয়া যায়?
মো: মুহাম্মদ হোছাইন
পুইছড়ি, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
– বিভিন্ন লেখকের গল্প-উপন্যাস ও যেকোনো গদ্য পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হলে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। চারপাশের মানুষের সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনাকে অনুভব করতে হবে। রপ্ত করতে হবে লেখালেখির অভ্যাস। কথাশিল্পী হওয়ার আগ্রহ ও স্বপ্ন থাকলে এভাবেই গদ্য-সাহিত্যের টেকনিক কলমে এসে ধরা দেবে।
আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আমাকে কী কী করতে হবে?
মো: জাবেদ ইকবাল
কমলনগর, লক্ষ্মীপুর
– জীবনে একনিষ্ঠ হওয়ার প্রয়োজন। লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ধীর স্থির থাকতে হবে। জীবনটা ম্যাজিক নয়, তাড়াতাড়ি কিছু পাওয়া যায় না। লক্ষ্যে যাওয়ার জন্য সাধনার প্রয়োজন। একাগ্র ও একনিষ্ঠ হয়ে এগিয়ে গেলে নিশ্চয়ই লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হবে।
আপনার সন্তান কয়জন এবং তারা কে কী করেন?
মো: রশিদুল ইসলাম
ব্রহ্মতল হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
– আমার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ে বিএ (অনার্স) এমএ, এলএলবি (অ্যাডভোকেট)। ছোট মেয়ে বিএসএস (অনার্স), এমএ (অর্থনীতি), ব্যাংক ম্যানেজার। বড় ছেলে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক শিক্ষা, বিদেশে কর্মরত। ছোট ছেলে বিএসসি, ইঞ্জিনিয়ার বুয়েট, এমএসসি, ইংল্যান্ড, এমএসসি অটোক্রেটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং, ইংল্যান্ড।
আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে সুস্থ রাখার জন্য কী ধরনের লেখক, গায়ক এবং গীতিকার প্রয়োজন?
মু. আবু নাঈম, হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
– অনুশীলন করে যা উন্নতি করা যায় তাই সংস্কৃতি। দৈনন্দিন জীবনে নান্দনিক অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারলেই সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। আমাদের সংস্কৃতিকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য পুরনো অথচ চিরনতুন কথাটি বলব, সুন্দর কিছু দেখব, চমৎকার শুনব ও বলব নান্দনিক শব্দ, এভাবেই সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। লেখক ও গীতিকার সুন্দর শব্দচয়ন ও সুললিত ভাষায় লেখার চর্চা করলে সংস্কৃতিও সুস্থ হয়ে ধরা দেবে।
গীতিকারের বাণী ও সুরকারের সুরের মিশ্রণে গায়ক গান পরিবেশন করেন। এক্ষেত্রে গীতিকারের শব্দচয়ন, সুন্দর ভাব ও ছন্দ আমাদের সংস্কৃতিকে উন্নত, সুস্থ করে তুলতে সক্ষম। গায়কের সুন্দর ও লাবণ্য পরিবেশনা সংস্কৃতিকে উন্নত করতে সক্ষম হয়।
শিশুসাহিত্যের প্রতি আপনি কিভাবে আকর্ষিত হলেন?
মো: লাবীব মোর্শেদ
হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
– আমি শিশু সংগঠন লেখাঘরের ও কচি-কাঁচার আসরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। শিশু-কিশোরদের সাথে অনেকটা সময় আমি কাটিয়েছি। ওদের কথা গল্প কবিতা গান শুনেছি। ওদের বুকের ভেতরের বিচিত্র ভাবনার মুখোমুখি হয়েছি। নিজের সন্তানদের ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে নতুন অনেক কিছু অনুভব করেছি। এভাবেই শিশু কিশোরতোষ সাহিত্যের প্রতি গভীর এক আগ্রহ জন্ম নেয় আমার। লিখতে লিখতে আকর্ষণ আরও বেড়ে ওঠে।
কিশোরদের জন্য কিছু উপদেশ দিন।
আবু হানিফ
শতদল কোচিং সেন্টার
– উপদেশ নয়, আমি বলব মা-বাবাকে ভালোবেস। তারা যাতে কষ্ট না পান সেভাবেই চলতে চেষ্টা করো। তোমাদের মনে প্রশ্ন থাকলে গোপন না করে মা-বাবার সঙ্গে খোলখুলি কথা বলবে। ¯িœগ্ধ কথাবার্তায় সব মানুষের মন জয় করা যায়।
মা-বাবা বন্ধুর মতো, তারাই সঠিক পথ দেখাবেন। সংসারে মা-বাবা সবচেয়ে আপনজন। প্রিয় মানুষদের সম্মান করো, তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিও।
আপনি আপনার ছাত্রজীবনে কত ঘণ্টা লেখাপড়া করেছেন? আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন?
আবু হানিফ
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
– ঘড়ি দেখে যে ঘণ্টার হিসেবে পড়াশোনা করেছি তা নয়। নিয়মিতভাবে অল্পসময় পড়েছি তবে ফাঁকি দিইনি। পরীক্ষা এলে মাথা গুঁজে পড়েছি এ সত্য। শিক্ষাজীবনের সুখের স্মৃতিতে সঞ্চয়ের ঝুলি ভরপুর হয়ে আছে। সুনাগঞ্জ স্কুল, সুনাগঞ্জ কলেজ, রাজশাহী গভর্নমেন্ট কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়াশোনা বাংলাভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স করেছি।
কবি হতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী?
আইনুল, টেংগনমারী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়
– প্রথম ও প্রধান কাজ হলো কবিতাকে ভালোবাসা। কবিতা পড়তে হবে, বুঝতে হবে। প্রকৃতিকে দুচোখ ভরে দেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাখির গান, সবুজ গাছপালা, বুনোঝোপ জোনাকির নেভা-জ্বলা, আকাশের বাহারি মেঘ, বৃষ্টির রিনিরিনি সুর অনুভব করতে হবে। ছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
সব শেষের কথা হলো শুধু লিখে যাওয়া, লিখতে লিখতে এভাবেই নিটোল কবিতা তৈরি হবে।
আপনার এত কিছু অর্জনের পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন?
আব্দুল বাছিত, কানাইঘাট, সিলেট
– বাবার গড়া লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে লেখাপড়ার অভ্যাস রপ্ত করেছি। নতুন কলম, কাগজ এনে বাবা নীরবে উৎসাহ দিতেন। প্রথম জীবনে বাবার উৎসাহ এগিয়ে গেছি, এভাবেই আমার পথচলা শুরু। পরবর্তী জীবনের অর্জন সব শিশু কিশোরদের কাছ থেকে পেয়েছি। খুদে ও কিশোর বন্ধুদের লেখা ভালোবেসেছি তাই আমার অর্জনের পেছনে ওদের অবদানও কম নয়।
আপনার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থের নাম কী? কবে এবং কত বছর বয়সে সেটা প্রকাশিত হয়েছিল?
নওরীন তামান্না
মুড়াপাড়া বালিকা বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ
– প্রথম প্রকাশিত বই ছোটগল্প সঙ্কলন, নাম গোধূলির রংলেখা। ১৯৬৬ সালে এটি আলো-বাতাসের মুখ দেখে, তখন আমার একুশ বছর বয়স।
আপনার প্রথম কর্মজীবন কোথায় শুরু করেন? বর্তমানে কী করছেন আপনি?
আনিস আরমান, দৌলতপুর, খুলনা
– আমার কর্মজীবন ও স্বপ্নজীবন একই, শুধুই লেখালেখি নিত্যসঙ্গী, পড়াশোনাকে নিয়েই রয়েছি, এর সাথে সাথে লেখার কাজ করছি।
একজন শিশুর ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে কার ভূমিকা বেশি?
সাবরিনা রহমান, চকধাধাস, রাজশাহী
– মা-বাবা উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে, শিশুর জীবনে শিক্ষকের ভূমিকাও অনেক খানি। চার পাশের পরিবেশ ওদের ওপর ছায়াপাত ফেলে, তাই মা-বাবা-শিক্ষকের পর পরিবেশের ভূমিকাও অনেকখানি। হ