তমসুর হোসেন
পিন্টুর সখের খেলনাটা হারিয়ে গেল। শহর থেকে মামা কিনে এনেছিল। কী সুন্দর ছোট্ট একখানা লাল গাড়ি। ভেতরে ব্যাটারি বসানো। চাবি ঘোরানো লাগে না। বোতাম টিপে মেঝেতে ছেড়ে দিলে ঘুরঘুর করে চলে। খেলনা পেয়ে পিন্টুর খাওয়া-দাওয়া একরকম ছেড়ে দেয়ার অবস্থা। মামা বলেছে, ‘দেখিস, নষ্ট করে ফেলিস না। আর শোন, যতœ করে রাখবি কিন্তু। বল্টু খুব ধুরন্ধর ছেলে। ভিজে বেড়ালের মতো দেখতে হলে কী হবে, ও আসলে একটা মিনমিনে পাজি। সুযোগ পেলে ও এমন করে এটাকে গাবচে দেবে যে টিকিরও সন্ধান মিলবে না।’
মামার কথাটাই সত্যি হলো।
বিকেল থেকে পিন্টুর খেলনাটা পাওয়া যাচ্ছে না। বই রাখার ব্যাগটা যে কতবার ঝেড়ে দেখল সে! অন্য খেলনার বাক্সটার সব জিনিস মেঝেতে ঢেলে একটা একটা করে দেখল। না, কোথাও নেই খেলনাটা। বসার ঘর, শোবার ঘর, রান্নাঘর, স্টোররুম কোথাও নেই।অগত্যা পিন্টু হাত-পা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে লাগল। মা তার কান্না থামানোর জন্য অনেক কিছু দিতে চাইলো। কিন্তু পিন্টুর কান্না থামলো না।কাজের ফাঁকে ফাঁকে মা-ও খুঁজলো সারাটা বাসা। কোথায় থাকবে আর। এমন কোনো জায়গা নেই যে খোঁজার বাকি আছে।
মা পিন্টুকে বলল, ‘বলটু কি আজ তোমার সাথে খেলেছে? খেয়াল করে দেখোতো। কোনো এক ফাঁকে ও হয়তো নিয়ে সটকে পড়েছে।’
পিন্টু ভেবে দেখলো। না, তেমন তো মনে পড়ছে তার। তবে একবার অবশ্য বলটু এসেছিল। খেলনাটা হাতে নিয়ে দেখতেও চেয়েছিল। কিন্তু পিন্টু ওকে পাত্তাই দেয়নি। এর মধ্যে সে কখন ওটা নিয়ে গেল? কিছুতেই মাথায় ঢোকে না পিন্টুর।
পিন্টুরা তো চাচাত-জেঠাতো ভাইবোন মিলে ছয়-সাতজন। সবাই ওর বড়। ওকে দারুণ আদর করে তারা। শুধু বলটু ওর সমবয়সী। সেই মাঝে মাঝে সবার খেলনা, কলম, ইরেজার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস গায়েব করে দেয়। সেগুলো কখনো আর ফিরে পাওয়া যায় না। পিন্টুর মা বলটুকে কাছে ডেকে সন্দেশ খেতে দেয়। তারপর মিষ্টি করে বলে, ‘বল্টু, সোনাবাবু, তুমি কি পিন্টুর খেলনাটা নিয়েছ? নিয়ে থাকলে ওটা দিয়ে দাওনা। আমি তোমাকে একটা মজার প্লেন এনে দেব। দেখনা ও কেমন করে বিরক্ত করছে। তুমি তো ওর সাথে খেলতে আসো। তুমি ছাড়া কে ওটা নিতে আসবে?’
এ কথা শুনে বলটু চোখ দু’টো বড় বড় করে বলল, ‘বারে, আমি তো ওর খেলনা নাড়িইনি, নিলাম আবার কখন? ওকে একবার বললাম দাও তো একটু হাতে নিই। ও বলল থাক এখন হাতে নিতে হবে না। আব্বু আমাকে কত খেলনা এনে দেয়। আমার একটা খেলনা পিস্তল আছে। কী সুন্দর পিস্তলটা!’
একদম পাত্তা দিল না বলটু। সে ছাড়াও পাশের বাড়ির রোশনি আর মিজানুর আসে খেলতে। তাদেরও একই কথা। তাহলে খেলনাটা নিল কে?
বিকেলে মামা এসে ঘটনাটা শুনলো। তারপর বলল, ‘দেখি কী করা যায়। ওহ্হো, একটা কথা তো ভুলেই গেছি। মৌলভী সাহেবকে ডেকে নিয়ে আসলে তো হয়। উনি যদি ভাজা চালে দোয়া পড়ে দেন তাহলেই তো খেলনা চোর ধরা পড়ে। যে খেলনা নিয়েছে ওই চাল খেলে তার পেট ফুলে দম বন্ধ হয়ে যাবে।’
সবাইকে জানানো হলো সন্ধ্যায় মৌলভী সাহেব আসবেন। কেউ যেন বাইরে না থাকে। চালভাজা খেতে হবে সবাইকে।
সন্ধ্যায় মৌলভী সাহেব এলেন। একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হলো। একবাটি চালভাজা নিয়ে দোয়া পড়ে নাড়াচাড়া শুরু করলেন মৌলভী সাহেব।
সবাই এসে গেছে কিন্তু বলটু এখনও আসছে না। সে নাকি চালভাজা খাবে না। সে জানিয়েছে, ওসব খেলে তার জ্বর হবে। রাজিব, চায়না ও লতা গেল বলটুকে আর একবার ডাকতে। না, কোথাও ওকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবার মনে সন্দেহ জেগে উঠলো। বলটু চালভাজা খেতে চায় না কেন? তাহলে নিশ্চয়ই ও খেলনা নিয়েছে। এর মধ্যে মামা একবার উঠে গেল বাসার পেছনটা একটু দেখে আসতে। বলা যায় না, অন্ধকারে বলটু দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। হঠাৎ মামা চিৎকার করে উঠলো, ‘পেয়ে গেছি, এই যে এখানে খেলনা পেয়ে গেছি।’
বসার ঘরের গোল টেবিলটার ওপর কে যেন চুপ করে রেখে গেছে। মা বললো, ‘এসব জায়গা তো কতবার করে খোঁজা হয়েছে। এখন এলো কোথা থেকে? নিশ্চয়ই কেউ এসে চুপিচুপি রেখে গেছে। তা না হলে খেলনা কি হাওয়ায় ভেসে এলো?’
ব্যাপারটা বুঝতে কারো বাকি রইলো না যে পিন্টুর খেলনা কে নিয়েছিল। তবে এ নিয়ে আর বেশি কথা হলো না। খেলনা পাওয়া গেছে এটাই বড় কথা।
খেলনা পেয়ে পিন্টুর মনটা আনন্দে নেচে উঠলো।
রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি
রহস্যের গন্ধ
It’s a cool story. I enjoy it very nicely.