সাকিব রায়হান..
মহাকাশ নিয়ে মানুষের ভাবনার শেষ নেই। সে কারণে মহাকাশে অভিযান চালানো বিজ্ঞানীদের কাছে নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ করেন। ১৯৬১ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি নিজের নকশা করা যান ‘ভস্টক’ নিয়ে মহাকাশে গিয়েছিলেন। এর পরে গেছেন আরো অনেকে। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ চীন উৎক্ষেপণ করল মহাকাশযান সেনঝু। চীনের আগে মহাকাশে উদ্দেশে যান পাঠিয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।
প্রোগ্রেস এম-১২এম
রাশিয়ার মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান এটি। তবে দুর্ঘটনায় পড়ে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে এটি। আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্র আইএসএসের জন্য পানি, অক্সিজেন আর জ্বালানি নিয়ে রওনা হয়েছিল মনুষ্যবিহীন এই স্পেসক্রাফটটি। কিন্তু উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই সাইবেরিয়ার আলতাই অঞ্চলে ভেঙে পড়ে। পরিবেশবাদীরা ওই এলাকায় মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। কারণ মহাকাশযানে ছিল প্রায় দেড় টন জ্বালানি, যেটা খুবই বিষাক্ত।
এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) নভোচারীদের জন্য তিন টন মালামাল ভর্তি রাশিয়ার মনুষ্যবিহীন একটি মহাকাশযান বিধ্বস্ত হয়েছে এই কিছুদিন আগে, আগস্ট মাসে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় মহাকাশ সংস্থার (রসকোমস) থেকে রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু এর ৩২০ সেকেন্ড পর এতে ত্রুটি ধরা পড়ে। কিছুক্ষণ পর উৎক্ষেপণস্থল থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে দেশটির আলতাই প্রদেশে আছড়ে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। এতে রাশিয়ার আর্থিক ক্ষতিই হয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি ইউরো।
মহাশূন্যে হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। মহাকাশ ভ্রমণবিলাসীদের জন্যই তৈরি করা হবে এই হোটেল। মহাশূন্যের আরামদায়ক এই হোটেলের জানালা দিয়ে উপভোগ করা যাবে পৃথিবীর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। মহাকাশে এই হোটেল তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাশিয়ান কোম্পানি অরবিটাল টেকনোলজিস। মহাকাশের এই হোটেলটি হবে ৪ রুমের একটি গেস্ট হাউজ। এটি ২০১৬ সাল নাগাদ চালু হতে পারে।
ডিসকভারি
নীল আর্মস্ট্রং প্রথমবারের মতো মহাকাশে যান ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই তো চাঁদের মাটিতে হেঁটে এসেছেন তিনি। ১৯৬৬ সালের পর মহাকাশ প্রকৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন তিনি। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তার নামে মহাকাশবিষয়ক জাদুঘর ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নাম তো সবাই জানোই। এই তো কিছুদিন আগেই নাসার মহাকাশযান ডিসকভারি তার শেষ উড্ডয়ন সফলভাবে সমাপ্ত করেছে। ১৯৮৪ সালের ৩০ আগস্ট ডিসকভারি তার প্রথম মিশন শুরু করে মোট ৬ দিন ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড শূন্যে থেকে দু’টি স্যাটেলাইট স্টেশন নির্মাণ করে আসে। সেই থেকে আজ অবধি মোট ৩৯ বার মহাকাশ ভ্রমণ করে এই স্পেস সাটালটি, যার শেষ মিশনটি ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১। এই সময়ে একটানা ১২ দিন ১৯ ঘণ্টা ৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ড মহাকাশে ছিল নভোযানটি। এ পর্যন্ত ১৪৮ মিলিয়ন পথ চলে মোট ৫ হাজার ৮৩০ বার পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেছে এই নভোযানটি।
সেনঝু-৮
চীনের মহাকাশযান এটি। এই তো মাত্র কয়েকদিন আগে অর্থাৎ ১ নভেম্বর ২০১১ তারিখে উত্তর-পশ্চিম চীনের গানসু প্রদেশে অবস্থিত জিকুয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে মহাকাশযান সেনঝু-৮ উৎক্ষেপণ করা হয়। ২০২০ সালের মধ্যে নিজেদের মহাশূন্য স্টেশন তৈরির যে পরিকল্পনা নিয়ে চীন কাজ করছে, এর মাধ্যমে সে লক্ষ্যে তারা একধাপ এগিয়ে গেল। দেশের উত্তর-পশ্চিমে গানসু প্রদেশের গোবি মরুভূমিতে স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫৮ মিনিটে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০ কিলোমিটার ওপরে ওঠার পর এটি বহনকারী রকেট থেকে পৃথক হয়ে যায়। এটি দু’দিনের মধ্যে অন্য মহাকাশযান তিয়ানগং-১ বা ‘হেভনলি প্যালেস’-এর সাথে যুক্ত হয়। চীনের ইতিহাসে মহাকাশে দু’টি যানকে সংযুক্ত করার ঘটনা এটিই প্রথম। মহাকাশ স্টেশন তৈরির ক্ষেত্রে মহাকাশে দু’টি যানকে সফলভাবে সংযুক্ত করতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নভোচারীরা এমন মহাকাশ স্টেশনে থেকে কাজ করবেন মাসের পর মাস। নাসার আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র অথবা রাশিয়ার সাবেক মিরের মতো এই স্টেশনে নভোচারীরা কয়েক মাস অবস্থান করতে পারবেন।
নিজেদের জন্য পৃথক মহাকাশ স্টেশন তৈরির বিষয়টি চীন নিজেদের আন্তর্জাতিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবেই দেখছে। রাশিয়ার কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে চীন তাদের মহাকাশ অভিযান শুরু করেছিল ১৯৯০ সালে। ২০০৩ সালে তৃতীয় দেশ হিসেবে তারা মহাশূন্যে মানুষ পাঠায়। চীনের মহাকাশ অভিযান প্রকল্পের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই মহাকাশযান সংযুক্তি সফল হলে সেখানে আরো দু’টি মহাকাশযান পাঠানো হবে। তাদের মধ্যে একটিকে ২০১২ সালের মধ্যে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আগামী বছর প্রথম নারী নভোচারী মহাকাশে পাঠাবে চীন। দুই নারীকে ইতোমধ্যেই মহাকাশে পাঠানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।