কাঠরঙা ময়ূর
চিত্র-বিচিত্র হাবীব মাসুম এপ্রিল ২০২৪
পেখম মেলা ময়ূরের মতো দেখতে না হলেও কাঠময়ূর অনেক সুন্দর একটি পাখি। এই পাখিটি বাংলায় মেটে কাঠ ময়ূর বা মেটে কাঠ মৌর নামে পরিচিত। স্ত্রী পাখির পেখম না থাকলেও পুরুষ পাখির পেখম রয়েছে।
কাঠমৌর বা কাঠ ময়ূর বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় একসময় অনেক ছিল। বর্তমানেও মাঝে মাঝে হঠাৎ এর ডাক শুনা যায় বলে অনেকে বলে থাকেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও চীন পর্যন্ত এ পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে।
এদের বৈজ্ঞানিক নাম Polyplectron bicalcaratum অর্থ নখরধারী কাঠমৌর। অন্যান্য ছেলে পাখির পিঠে সুন্দর নকশা ও লম্বা লেজ থাকে। মেয়ে পাখি ছেলে পাখির চেয়ে ছোটো এবং অনুজ্জ্বল হয়।
কাঠময়ূর বড়ো আকারের ধূসর পাখি। এদের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৫৬ সেন্টিমিটার, লেজ ৩১ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৭৩০ গ্রাম। পুরুষ ময়ূরের চেহারা ও আকার স্ত্রী পাখির চেয়ে কিছুটা আলাদা। পুরুষ ময়ূরের মাথা ও ঘাড় বাদামি-পীত রঙের। পিঠে ধূসর-বাদামি ফোঁটা রয়েছে। ডানার পালকে ও লেজের প্রান্তে বেগুনি ও সবুজ রঙ আছে। স্ত্রী ময়ূর পুরুষ ময়ূরের তুলনায় ছোটো ও অনুজ্জ্বল। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পাখির চোখ সাদা, মুখের চামড়া হলুদাভ, ঠোঁট হালকা পীত বর্ণের।
কাঠ ময়ূর মার্চ থেকে জুনে ডিম পাড়ে। এরা দুই থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। ঝোপের নিচে মাটির গর্তে ডিম পাড়ে। স্ত্রী ময়ূর ডিমে তা দেয়। পুরুষ কাঠময়ূর এসময় আশপাশেই থাকে এবং বাসা পাহারা দেয়। ২১ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ফোটার সাথে সাথেই ছানারা বাসা ছেড়ে মায়ের পিছু পিছু খাবার খুঁজতে শুরু করে।
এটি মোরগ-মুরগির মতো মাটিতে পা দিয়ে আঁচড় টেনে খাদ্যের সন্ধান চালায়। কাঠময়ূর বনের ঘন ঝোপঝাড়ে ও বনের প্রান্তে বিচরণ করে। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় এদের দেখা যায়। এরা ঝোপের মাঝে বা খোলা মাঠে চুপিসারে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, শস্যদানা, ফল, পোকামাকড়, শামুক বা ক্ষুদ্র প্রাণী।
সারা পৃথিবীতে এরা বিলুপ্তির পথে না থাকলেও বাংলাদেশ এরা মহাবিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এটি সংরক্ষিত রয়েছে।
আরও পড়ুন...