ঈদের ছুটিতে বেড়ানো

ঈদের ছুটিতে বেড়ানো

ফিচার মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম এপ্রিল ২০২৪

কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো সবাই? নিশ্চয়ই ঈদের ছুটির আমেজে আছো? তো ছুটি কি বসে বসে কাটাবে, না কি কোথাও ঘুরতে যাবে? ঘোরার জন্য অবশ্য অনেক দূরে যাওয়ার দরকার হয় না। তোমরা একটু খোঁজ-খবর নিলেই দেখবে, তোমার জেলার আশপাশে খুব সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে।

বন্ধুরা তোমরা নিশ্চয়ই মানবে, আমাদের দেশটা খুবই সুন্দর। মহান রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশকে অপরূপ সৌন্দর্যে গড়েছেন। তাই শুধু সুন্দর প্রকৃতি দেখলেই হবে না, তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। বলতে হবে আলহামদুলিল্লাহ। একবার চিন্তা করে দেখো তো, যে স্রষ্টার সৃষ্টি এত সুন্দর, তাহলে তিনি কতটা সুন্দর? এজন্য কবি মতিউর রহমান মল্লিক লিখেছিলেন, ‘তোমার সৃষ্টি যদি হয় এত সুন্দর/ না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর/ সেই কথা ভেবে ভেবে কেটে যায় লগ্ন/ ভরে যায় তৃষিত এ অন্তর/ যে পাখি পালিয়ে গেল সুদূরে/ যে নদী হারিয়ে গেল তেপান্তরে/ সেই পাখি সেই নদী যদি এত সুন্দর/ না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর।’

তাই ঈদের ছুটিতে ঘরে বসে বসে বিরক্ত না হয়ে, মহান আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টিকে ঘুরে দেখতে পারো। বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে ঘুরে আসতে পারো পাহাড়, সাগর, ঝরনা কিংবা সুন্দরবন থেকে। অবশ্য তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনটা তোমার কাছে হবে। এই লেখাতে ঈদের ছুটিতে কোথায় বেড়াতে যেতে পারো তা নিয়ে থাকছে কিছু তথ্য।

আমাদের দেশে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট আছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে। তাই তোমার বাড়ি যদি এই দুই বিভাগে হয় তাহলে ঈদের ছুটি তোমার জন্য হবে ঘোরার দারুণ ‍উপলক্ষ। তাই শুরুতে চট্টগ্রাম বিভাগের কথা লিখছি।


ভাটিয়ারী

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভাটিয়ারী। ভাটিয়ারী লেক অসম্ভব সুন্দর একটি বিনোদনের জায়গা; শান্ত পরিবেশ এবং পুরোনো ঝরনা নিঃসন্দেহে তোমার মনকে পুনরুজ্জীবিত করবে। সবুজ এবং নীল রঙের সুন্দর মিশ্রণ এই জায়গাটি পিকনিকের জন্য একদম উপযুক্ত।


সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত ইকো পার্কটি। প্রবেশমূল্য মাত্র ১০ টাকা, এটা অনেকটা জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার মতো। পার্কের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন থিমে ও বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে। 


পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত

পতেঙ্গা সম্পর্কে তোমরা হয়তো বেশ ভালোই জানো। তবে সাম্প্রতিক কিছু পরিবর্তন এটিকে আক্ষরিক অর্থে একটি মিনি কক্সবাজারে পরিণত করেছে। বড়ো বড়ো পুরোনো শিলাগুলো এখন পানিতে নামার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তুমি যদি পতেঙ্গার সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে চাও তাহলে ভোরে যেতে পারো।


ফয়’স লেক

ফয়’স লেক একটি কৃত্রিম হ্রদ যা চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় অবস্থিত। এখানে সবচেয়ে বেশি পর্যটক গিয়ে থাকে। তোমাদের জন্য এখানে অনেক রাইড আছে। লেকের তীরে ভাড়া নেওয়ার জন্য সারি সারি নৌকা আছে।


আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র

খাগড়াছড়ির ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটক স্থান আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। খাগড়াছড়ি যাওয়ার সময়ই তোমাদের চোখে পড়বে পর্যটন কেন্দ্রটি। এখান থেকে দূরে তাকালেই দেখতে পাবে খাগড়াছড়ি শহর, আকাশ আর পাহাড়ের সৌন্দর্য। পর্যটন কেন্দ্রটিতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, গুহায় যাওয়ার সিঁড়ি, বসার সুব্যবস্থা ও বিশ্রাম কক্ষ রয়েছে। তুমি যখন পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠবে খাগড়াছড়িকে দেখে মনে হতে পারে তুমি দার্জিলিং দেখছো। 


রিছাং ঝরনা

ঝরনা জলরাশি উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে। জলধারা নিচে নেমে যাচ্ছে উঁচু পাহাড় গড়িয়ে। কাছে দাঁড়ালেই মন ভরে উঠবে পবিত্র স্নিগ্ধতায়। ঝরনা পর্যন্ত যাতায়াতের উঁচু-নিচু রাস্তা থেকে পাশে তাকালে তোমার রোমাঞ্চকর অনুভূতি হবে।


চিম্বুক পাহাড়

বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান চিম্বুক পাহাড়। পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য দেখতে যেতে পারো চিম্বুক পাহাড়ে। চিম্বুককে বাংলার দার্জিলিং হিসেবেও ডাকা হয়। যাত্রাপথের আঁকা-বাঁকা রাস্তা তোমাকে রোমাঞ্চিত করবে। আর নিচে তাকালে মনে হবে, তুমি যেন সাদা মেঘের মাঝখানে ভেসে আছো।


কেউক্রাডং

কেউক্রাডং হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোটো বড়ো পাহাড়। সেখানে আছে ঘন জঙ্গল ও নানা ধরনের পশু-পাখি। দুর্গম এলাকাটিতে আরও রয়েছে ঝরনাধারা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ এবং আকাশে মেঘের লুকোচুরি। 


বগা লেক

বগা লেক প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া পাহাড়ের ওপরে একটি লেক। যার পানির স্তর সারা বছরই প্রায় একই অবস্থানে থাকে। এই লেকে ঘুরতে গেলে তোমার দারুণ দারুণ অভিজ্ঞতা হবে।


নীলাচল

তোমরা যদি পুরো বান্দরবানকে এক নজরে দেখতে চাও তাহলে নীলাচল যেতে পারো। নীলাচলের নির্মল বাতাসে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য তোমাকে চমৎকার অনুভূতি এনে দেবে।


নীলগিরি

নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করবে। এখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতো পারবে শীতকালের মিষ্টি রোদ, বর্ষাকালের আকাশের গর্জন, রংধনুর আলোক রশ্মি, বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক পরিবর্তন। এখানে দাঁড়িয়ে দেখতে পাবে সাগর ও জাহাজের দৃশ্য। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা নদীর দৃশ্য।


পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু

রাঙ্গামাটির শেষপ্রান্তে কর্ণফুলীর কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স। সেখানে পর্যটন মোটেল আছে। বর্তমানে মোটেল এলাকাটি পরিচিতি পেয়েছে ডিয়ার পার্ক নামে। মোটেল থেকে দেখতে পাবে লাল পাহাড়ের সারি কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু হয়েছে। সেখানো আরও রয়েছে তিনশতাধিক দীর্ঘ ঝুলন্তসেতু। সেতুটি পরিচিতি পেয়েছে সিম্বল অব রাঙ্গামাটি হিসেবে।


কর্ণফুলী হ্রদ

হ্রদ ও পাহাড়ের অকৃত্রিম সহাবস্থান দেখতে যেতে পারো রাঙ্গামাটি শহরে। হ্রদের স্বচ্ছ জল আর সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। কৃত্রিম এ হ্রদের সঙ্গে কর্ণফুলী, কাচালং ও মাইনি নদীর সংযোগ রয়েছে। কাচালং নদীর উজানে লংগদুর মাইনীমুখে এসে হ্রদের বিস্তীর্ণ জলরাশি যেন মিশে গেছে আকাশের সঙ্গে।


কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান

নদী, পাহাড় ও সবুজের সহাবস্থান দেখতে ঘুরতে যেতে পারো কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। এখানে রয়েছে সেগুন, পারুল, গামারি ও কড়ই গাছের সারি।


কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শাণিত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। ১২০ কিলোমিটারের সমুদ্রসৈকত ঘিরে প্রাচীন ঐতিহ্য এবং দর্শনীয় স্থানের কারণে প্রতি বছর কক্সবাজারে ছুটে আসেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক। দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, মেঘ কালো সারি সারি ঝাউবন, সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া ছোটো বড়ো একেকটি ঢেউ কক্সবাজারকে করে তুলেছে সবার প্রিয় গন্তব্য।


বন্ধুরা এবার আসি সিলেট বিভাগে। এখানেও আছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। যেগুলো দেখতে বছরব্যাপী পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। এখানে আছে সবুজ পাহাড়ে কোথাও সারি সারি চা-বাগান, কোথাও আবার পাথুরে নদীর স্বচ্ছ জল।


রাতারগুল 

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিখ্যাত জলাবন রাতারগুল। শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে। বর্ষা মৌসুমে রাতারগুল গ্রামের ঘাট থেকেই নৌকায় ওঠা যায়। তবে শুকনো মৌসুমে খানিকটা হেঁটে বনের ভেতরে যেতে হবে। বর্ষায় সবচেয়ে সুন্দর হিজল-করচের রাতারগুল। তবে শুকনো মৌসুমেও বনটি তোমার চোখে ধরা দেবে ভিন্ন রূপে।


লালাখাল

জৈন্তাপুর উপজেলার সারি নদের আরেক নাম লালাখাল। লালাখাল চা-বাগান, দুই দিকের সুউচ্চ সবুজ পাহাড় আর নদের নীলজলের মায়ায় সময় কাটবে বেশ।


জাফলং

প্রকৃতির কন্যা হিসেবে পরিচিত হলো সিলেটের জাফলং। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা প্রকৃতির দানে রূপের যেন এক পসরা সাজিয়ে রেখেছে জাফলং। এখানে আছে পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা।

হযরত শাহজালালের মাজার

সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের শাসনকালে ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালালের হাতে এ অঞ্চল বিজিত হয়। সে সময়ে তুরস্কের কুনিয়া শহর থেকে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৩১৩ জন শিষ্যসহ এদেশে আসেন। ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করলে তাকে এখানেই সমাহিত করা হয়। মাজার কমপ্লেক্সের ভেতরে শত শত জালালি-কবুতর, পুকুর ভর্তি গজার মাছ ছাড়াও হযরত শাহজালালের ব্যবহৃত তলোয়ার রক্ষিত আছে।


চা-বাগান

সিলেট শহর থেকে বিমানবন্দর যেতে পথেই লাক্কাতুরা চা-বাগান। ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন এই চা-বাগান খুবই সুন্দর। বিমানবন্দর সড়কেই আরেক চা-বাগান মালনিছড়া। এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো চা-বাগান।

হযরত শাহপরাণের মাজার

হযরত শাহপরাণ ছিলেন হযরত শাহজালালের ভাগ্নে। শহরের পূর্ব দিকটায় দক্ষিণগাছের খাদিমপাড়ায় এই মাজার অবস্থিত। বিশাল বটগাছের ছায়াতলে এ মাজার।


বিছানাকান্দি

বিছানাকান্দি ভারত এবং বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় অবস্থিত। এখানে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোটো বড়ো পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারাগুলো মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কী নেই এখানে? পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ সব নিয়েই যেন বিছানাকান্দি।


তামাবিল

সিলেটের এক অনন্য দর্শনীয় স্থান জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত তামাবিল। জাফলং থেকে পূর্বে ৫ কিলোমিটার গেলেই অনন্য সুন্দরী তামাবিলের দেখা পাওয়া যাবে। তামাবিল থেকেই মেঘালয়ের পাহাড় ও দর্শনীয় স্থানগুলো খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

মাধবকুণ্ড

সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় বড়োলেখা উপজেলায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত অবস্থিত। ২০০১ সালে ২৬৭ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের ভেতর দিয়ে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার হাঁটা পথের পর দেখা পাওয়া যাবে প্রকৃতির এই অপার রূপধারী জলপ্রপাতের। 


হাকালুকি হাওর

হাকালুকি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তর হাওর। সিলেট ও মৌলভীবাজারের প্রায় পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা এই হাওর বাংলাদেশের অন্যতম মিঠা পানির উৎস। পাখিদের কলকাকলি, দিগন্তছোঁয়া জলরাশি ভ্রমণ পিপাসুদের বারবার ডেকে আনে হাকালুকির তীরে।


বন্ধুরা এবার তাহলে জেনে নিই খুলনা বিভাগে কোথায় বেড়ানো যেতে পারে। বেড়ানোর জন্য খুলনাতেও চমৎকার জায়গা আছে। কিন্তু সবগুলো নিয়ে বিস্তারিত লেখা যাবে না। তাই সংক্ষেপে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জায়গার কথা জেনে নাও।


সুন্দরবন

খুলনার সবচেয়ে চমৎকার পর্যটন স্পট সুন্দরবন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল এই সুন্দরবন। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ চিত্রা হরিণ, কুমির, সাপ, বিচিত্র ধরনের পাখি এবং অসংখ্য প্রজাতির নানা বর্ণের প্রাণীর আবাস। তোমরা ঈদের ছুটিতে সুন্দরবন ঘুরতে যেতে পারো। সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় স্থানগুলোর মধ্যে খুলনার কটকা সমুদ্রসৈকত অন্যতম। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এই সৈকতটিতে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার। এরপর আছে করমজল পর্যটন কেন্দ্র। এটি সুন্দরবনের পশুর নদীর তীরে মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ৩০ হেক্টর জমির ওপর গড়ে তোলা একটি পর্যটনকেন্দ্র। আরও আছে হিরণ পয়েন্ট। হিরণ পয়েন্ট বা নীলকমল সুন্দরবনের দক্ষিণাঞ্চলে খুলনা রেঞ্জে প্রমত্তাকুঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য।


বংশীপুর শাহী মসজিদ

বংশীপুর শাহী মসজিদ সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বংশীপুর গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানে এটিকে আধুনিক ও ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪১.১৫ মিটার এবং প্রস্থ ১০.৬৭ মিটার। এই মসজিদটিতে মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন রয়েছে।


মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা

বাস্তভিটা হলো কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে অবস্থিত মীর মশাররফ হোসেনের বাসস্থান। মীর মশাররফ হোসেন ছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। এখানে জড়িয়ে আছে মীর মশাররফ হোসেনের জীবনকালের শৈশব, কৈশোর ও কর্মজীবনের নানা অধ্যায়ের স্মৃতি।


ভূতিয়ার পদ্মবিল

ভূতিয়ার পদ্মবিল খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য যেন একটি স্বর্গরাজ্য। সমস্ত বিলজুড়ে হাজার হাজার পদ্ম ফুল ফুটে এখানে, যা গ্রাম-বাংলার অপরূপ প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে।


মল্লিকপুরের বটগাছ

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলী গ্রামের মল্লিকপুরে প্রায় ১১ একর জায়গাজুড়ে ৫২টি বিভিন্ন আকারের বটগাছের রূপে ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক এক বটগাছের অস্তিত্ব। ধারণা করা হয় এর বয়স প্রায় ৩০০ বছর। বিবিসির জরিপে ১৯৮৪ সালে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছের খ্যাতি অর্জন করেছিল এই মল্লিকপুরের বটগাছটি। 


গদখালী ফুলের বাজার

গদখালী ফুলের বাজারকে ফুলের রাজধানী বলা হয়। কারণ সারা বাংলাদেশের ৮০ ভাগ ফুলের চাহিদা মেটায় এই গদখালী। যশোর জেলার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার প্রায় ৯০টি গ্রামের চার হাজার বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করা হয়। বেনাপোল রোড দিয়ে গেলে রাস্তার দুই পাশে দেখা মিলবে দিগন্ত বিস্তৃত লাল, নীল, হলুদ আর সাদা রঙের ফুলের সমারোহ। আর তাতে মৌমাছি আর প্রজাপতির গুঞ্জন।

বন্ধুরা, এবার জেনে নাও উত্তরের বিভাগ রাজশাহীর কিছু বেড়ানোর জায়গার খোঁজ।


মুঘল তাহখানা

বঙ্গ সুলতান শাহ সুজা ফিরোজপুরে এ ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের প্ত্রু শাহ্ সুজা বাংলার সুবাদার থাকাকালে তার মুরশিদ হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তোহাখানা নির্মাণ করেন।


মহাস্থানগড়

রাজশাহী বিভাগের ১৪টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়।


ষাট গম্বুজ মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ধারণা করা হয়, ১৫০০ শতাব্দীতে খান-ই-জাহানের স্থাপত্যশৈলীতে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মসজিদের প্রধান আকর্ষণ ষাটটি গম্বুজ। মসজিদের চারপাশে রয়েছে ৪টি গোলাকার মিনার।


হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

জানা যায়, এই সেতু তৈরি করতে ২৪ হাজার শ্রমিকের পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলাধীন পাকশি ইউনিয়ন ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মাঝে পদ্মা নদীর ওপর অবস্থিত। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভেড়ামারা ও ঈশ্বরদী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।


হালতি বিল

উত্তরাঞ্চলে কোনো সমুদ্র নেই, তাই এ অঞ্চলের মানুষের কাছে সমুদ্রসৈকত এক স্বপ্ন। তবে নাটোরের হালতি বিল এখন সমুদ্রের অভাব অনেকটাই পূরণ করছে। হালতি বিলের উত্তাল জলরাশি আর ঢেউ যে কারো মন নিমেষেই ভালো করে দেওয়ার মতো। 


চলন বিল

আরেকটি দর্শনীয় স্থান নাটোরের চলন বিল। তোমরা যারা নাটোরে বা এর আশপাশের জেলাতে বাস করো, তারা ঈদের ছুটিতে চলন বিল ঘুরে আসতে পারো।

বরিশাল বিভাগেও কিন্তু আছে দারুণ দারুণ সব ঘোরার জায়গা। এখানে কয়েকটি জায়গার কথা তুলে ধরলাম।


বিবির পুকুর

বরিশালের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক ‘বিবির পুকুর’। এই পুকুরকে ঘিরেই ক্রমে প্রসারিত হয়েছে বরিশাল নগরী। বাংলাদেশের অন্য কোনো বিভাগীয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে এ ধরনের পুকুর নেই।


ভাসমান পেয়ারা বাজার

বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর জেলার সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা নিয়ে ঐতিহ্যবাহী পেয়ারার বাগান। আটঘর, কুড়িয়ানা, ডুমুরিয়া, বেতরা, ডালুহার, সদর এলাকার প্রায় ২৪ হাজার একর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়। এখন আমড়া বাগানও করছেন অনেকে। মাঝে মধ্যে সুপারি বাগান। পেয়ারার উৎপাদন বেশি হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বর্ষাকালেই মূলত উৎপাদন বেশি। 


ফাতরার চর

বরিশালের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা একটি চরের নাম ‘ফাতরার চর’। যদিও বন বিভাগের নামানুসারে এর নাম ‘ফাতরার বন’। মূলত সুন্দরবনেরই একটি অংশ পটুয়াখালীর এই অংশে এসে নাম নিয়েছে ফাতরার চর।


চর বিজয়

প্রায় পাঁচ হাজার একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা নান্দনিক সৌন্দর্যের চর বিজয় দ্বীপের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩ কিলোমিটার। এখানে রয়েছে লাল কাঁকড়া, হাজারো পাখির বিচরণ। আর দ্বীপের স্বচ্ছ পানিতে অসংখ্য সামুদ্রিক মাছের আবাসস্থল। এছাড়া দ্বীপের চারদিকে গোলপাতা, ছইলা, কেওড়া ও সুন্দরী গাছসহ প্রায় দুই হাজার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের চারা লাগানো হয়েছে।


কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নে কুয়াকাটা। পটুয়াখালী সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে এর অবস্থান। কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্রসৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা সাগর কন্যা হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।


মনপুরা দ্বীপ

মনপুরা দ্বীপ বাংলাদেশের ভোলা জেলার অন্তর্গত একটি বিচ্ছিন্ন ভূমি। মনপুরা দ্বীপের পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর দিকে মেঘনা নদী প্রবহমান আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। মনপুরা দ্বীপ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগ রয়েছে।

তোমরা যারা ঢাকায় থাকো, তারাও ঈদের সময় ঢাকার অনেক জায়গায় ঘুরতে পারবে। এখানে সংক্ষেপে ঐতিহাসিক দু’টি স্থানের কথা উল্লেখ করা হলো।


আহসান মঞ্জিল

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকার নবাবদের আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত স্থান ‘আহসান মঞ্জিল’। পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটের সামনে এসে বুলবুল ললিতকলা অ্যাকাডেমির ঠিক সোজা তাকালেই চোখে পড়বে ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নবাবদের আভিজাত্যের ছোঁয়া উপভোগ করতে এখানে চলে আসতে পারো।


লালবাগ কেল্লা

মুঘল আমলে নির্মিত একটি অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত লালবাগ কেল্লা। প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে লাল ইটের দর্শনীয় কেল্লাটি। সেই সঙ্গে দেখে আসতে পারো কেল্লার পাশেই অবস্থিত ঐতিহাসিক লালবাগ শাহী মসজিদও।


ঈদ মানে খুশি। তাই ঈদে আনন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজে আনন্দ করতে গিয়ে তোমার সেই বন্ধুটির কথা ভুলে যেও না- যার বাবা নেই, কিংবা যে দরিদ্র পরিবারের। তোমাদের যাদের এমন বন্ধু আছে অবশ্যই এই ঈদে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। তাহলে ঈদের আনন্দটা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। অনেক অনেক ভালো থেকো সবাই। ঈদ মুবারক আসসালাম।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ